banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 379 বার পঠিত

 

ইসলামি পটভূমিতে বিয়ে : হাদিসের নির্দেশনা

হাদিসের নির্দেশনা
বিয়ের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে হাদিস শরীফে আরও সার্বজনীন ও বিস্তারিত নির্দেশনা এসেছে। নিম্নে কতিপয় নির্দেশনা তুলে ধরা হল:

বিয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার ক্ষমতা আছে সে যেন বিয়ে করে। কেননা, তা চক্ষুকে নত করে এবং লজ্জাস্থানকে অধিক হেফাজত করে। আর যে ব্যক্তি বিয়ে করতে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে। (বুখারি, মুসলিম)

আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পূত পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে চায় সে যেন স্বাধীন নারীকে বিয়ে করে। (ইবনে মাজাহ)

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে আরও বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি বিয়ে সম্পাদন করল সে নিশ্চয় অর্ধেক দীন পূর্ণ করল। অতঃপর বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে যেন সে সতর্ক থাকে। (তিরমিযি)

বিয়ের ক্ষেত্রে কাম্যবস্ত্ত
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চার কারণে কোন নারীকে বিয়ে করা হয়- তার সম্পদের কারণে, তার বংশমর্যাদার কারণে, তার সৌন্দর্যের কারণে এবং তার ধর্মানুরাগের কারণে। অতএব, তুমি ধর্মপরায়ণ নারীকে বিয়ে করে সফলকাম হও। (বুখারি, মুসলিম)

আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি কোন নারীকে তার ধর্মভীরুতা ও সচ্চরিত্রের কারণে বিয়ে করতে ইচ্ছুক হও, তবে তাকে বিয়ে করে নাও। (তিরমিযি)

বিয়ের পূর্বে বর কনে পরস্পরকে দেখা
জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কোন নারীকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক হয় সে যেন তাকে নারীকে দেখে নেয়। (আবু দাউদ)

মুগীরা ইবনে শুবা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি একজন নারীকে বিয়ে করতে ইচ্ছা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তবে তাকে দেখে নাও। কেননা, খুব সম্ভব এতে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হবে। (আহমদ, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী, তিরমিযি)

যদিও ইসলাম বিপরীত লিঙ্গের সাথে অবাধ মেলামেশার অনুমতি দেয় না, তা সেই পুরুষ ও নারীকে পরস্পর দেখে নেয়ার অনুমতি দেয় যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক। যদি উভয়ের কেউ অপরজনকে অপছন্দ করে তবে তা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে উভয়ের সমান স্বাধীনতা রয়েছে।

বিয়ের অনুমতি
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন পূর্ব বিবাহিতা রমণীর বিয়ে ততক্ষণ হতে পারে না, যতক্ষণ সে অনুমতি দেয়। আর না কোন কুমারী নারীকে বিয়ে দেয়া যেতে পারে যতক্ষণ না তার অনুমতি চাওয়া হয়। যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, কিভাবে তার অনুমতি চাওয়া হবে? তখন তিনি উত্তরে বললেন, যদি সে চুপ থাকে, তবে তা হল তার অনুমতি। (বুখারি, মুসলিম)

আবু হুরাইরা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একজন বালেগা মেয়েকে তার বিয়ের ব্যাপারে অনুমতি চাইতে হবে। যদি সে চুপ থাকে তবে এটাই তার অনুমতি বলে বিবেচিত হবে। যদি সে অস্বীকার করে তবে বিয়ের ব্যাপারে তার উপর কোন জোর খাটানো যাবে না। (আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযি)

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, একটি মেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে অভিযোগ করল যে, তার পিতা তাকে এমন লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছে যাকে সে পছন্দ করে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিয়ে অক্ষুণ্ণ রাখার কিংবা ভেঙে দেয়ার স্বাধীনতা প্রদান করলেন। (আবু দাউদ)

সকলের স্মরণ রাখা উচিৎ যে, প্রাক ইসলামি যুগে নারীদেরকে চতুষ্পদ জন্তু ও ক্রীত দাস-দাসীর মত মনে করা হত এবং সমাজে তাদেরকে কোন মর্যাদা দেওয়া হত না। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে এখনো এই প্রথা প্রচলিত রয়েছে। বিশেষত, ভারতে। ইসলাম নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে এবং তাকে তার পছন্দমত বরকে বিয়ে করার অধিকার প্রদান করেছে। আর যে ব্যক্তি তার স্বামী হিসেবে তার প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তার কাছ থেকে তালাক চেয়ে নেয়ার (খোলার) অধিকারও তাকে প্রদান করেছে।

নারীদের ইচ্ছার স্বাধীনতা
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, বুরাইদা (রা.) (&এক দাসী)- এর কিছু পারিবারিক সমস্যা ছিল এবং তাকে তার স্বামী থেকে পৃথক করে দেয়া হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, যদি তুমি তোমার স্বামীর কাছে ফিরে যাও, তবে কি এমন ক্ষতি হবে? বুরাইদা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমাকে আদেশ করছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেন, না, আমি কেবল সুপারিশ করছি।’ তা শুনে বুরাইদা (রা.) বললেন, তাকে আমার প্রয়োজন নেই। (বুখারি)

এ ঘটনাটি দুটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রথমত, সাহাবায়ে কেরাম- পুরুষ হোক কিংবা নারী- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইচ্ছাকে নিজেদের ইচ্ছার উপর প্রাধান্য দিতেন। বুরাইদা তার স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চান নি, তারপরও জিজ্ঞাসা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেমনটি করতে আদেশ দিচ্ছেন কিনা। যদি তিনি হ্যাঁ বলতেন তবে বুরাইদা তার স্বামীর কাছে ফিরে যেতেন। দ্বিতীয়ত, ইসলামে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার রয়েছে। আরও উল্লেখ্য যে, বুরাইদা (রা.) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারের একজন দাসী। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম একজন দাসীকেও এই অধিকার প্রদান করেছে চৌদ্দশ বছরেরও অধিক কাল পূর্বে। বিশ্বের অন্যান্য সমাজ নারীদেরকে এই অধিকার প্রদান করেছে কেবল কয়েক দশক পূর্বে। অধিকন্তু, পৃথিবীতে এখনও অনেক সমাজ আছে যারা নারীদেরকে এখনো এই অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে।

সাক্ষী ব্যতিত বিয়ে
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারা ব্যভিচারী যারা স্বাক্ষী ব্যতিত বিয়ে সম্পাদন করে। (তিরমিযি)

ইসলামে বিয়ে ব্যক্তিগতভাবে গোপনে সম্পাদন করা যায় না। তা জনসাধারণের সামনে নিদেনপক্ষে দুজন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে সম্পাদন করতে হয়। যারা বরের প্রস্তাব ও স্ত্রীর সম্মতির সাক্ষ্য কাজীর কাছে প্রদান করবে এবং তার সত্যায়ন করবে। কোরান মাজিদ বলে:

আর তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে দুজন সাক্ষী রাখ। অতঃপর যদি তারা উভয়ে পুরুষ না হয়, তাহলে একজন পুরুষ ও দুজন নারী যাদেরকে তোমরা সাক্ষী হিসেবে পছন্দ কর। (আল বাকারা, ২:২৮২)

ফুকাহায়ে কেরামের মতে সাক্ষী অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মুসলিম হতে হবে। ইসলাম এভাবে সকল ব্যক্তিগত দুর্ভিসন্ধি ও গোপন সম্পর্কের দ্বারকে রুদ্ধ করে দেয় এবং বিয়েকে খুব সুস্পষ্ট ও টেকসই প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে।

বিয়ের ঘোষণা
মুহাম্মদ ইবনে হাতিব বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বৈধ ও অবৈধ বিয়ের মধ্যে পার্থক্য হল ঘোষণা প্রদান ও দফ পেটানো। (তিরমিযি, আহমদ, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী)

কোরান মাজিদ বলে যে, পবিত্র রমণীরাই বিয়ের জন্য স্বীকৃত হয়। যেমনটি ইরশাদ হয়েছে,

আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দিবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়।’ (৫:৫)

অতএব, বিয়ের ঘোষণা জনসমক্ষেই হতে হবে। ইহা সমাজকে অবৈধ ও গোপন সম্পর্ক থেকে অধিক রক্ষা করে এবং স্বামী ও স্ত্রীর স্বার্থেরও নিরাপত্তা বিধান করে।

বিয়েতে আনন্দ উৎসব
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, এক নারী এক আনসারী পুরুষের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তার সাথে কি কোন আতিথ্য পাঠানো হয়েছিল? আনসাররা আতিথ্য খুব পছন্দ করে থাকে। (বুখারি)

আয়েশার (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বিয়ে সম্পর্কে বলেন, এই বিয়ের ঘোষণা প্রদান কর এবং মসজিদে তা সম্পাদন কর। আর এজন্যে দফ পেটাও। (তিরমিযি)

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) তার এক আত্মীয়া নারীকে বিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কি এমন কাউকে তার সাথে পাঠিয়েছে যে গাইতে পারে? যখন তিনি না বোধক উত্তর দিলেন, তখন তিনি বললেন, খুব ভাল হত যদি তোমরা তার সাথে পাঠাতে যারা গাইতে পারে-তোমাদের কাছে আমরা এসেছি, তোমাদের কাছে আমরা এসেছি। অতএব, আমাদেরকে স্বাগতম এবং তোমাদেরকে স্বাগতম। (ইবনে মাজাহ)

ইসলাম সব ধরনের বৈধ চিত্তবিনোদন ও খেলাধুলার অনুমতি প্রদান করে। বিয়ের উৎসব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আনন্দ ও খুশির আমেজ নিয়ে আসে। পাশাপাশি তা বিয়ের ঘোষণারও কাজ দেয়। যার ফলে তা অধিক প্রকাশ্য ও টেকসই হয়।

বিয়ের খুতবা
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক সেসব বিয়ে যাতে তাশাহহুদ’ (আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালতের সাক্ষ্য প্রদান) পাঠ হয় না তা কর্তিত হাতের মত। (তিরমিযি)

আবু হুরাইরা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মর্যাদাপূর্ণ কাজ যা আল্লাহর প্রশংসা সহকারে সম্পাদিত হয় না তা (আল্লাহর দয়া ও বরকত থেকে) কর্তিত হয়। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

বিয়ের খুতবা হল ইসলামের এক বিশেষ ধর্মীয় রীতি যার মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদিত হয়। বর কনে উভয়ের পক্ষ থেকে সাক্ষী নেওয়া হয়। তারা প্রথমে কনের কাছে প্রস্তাব পাঠায় এবং তাকে বলা হয় যে, তাকে অমুকের পুত্র অমুকের সাথে এই পরিমাণ মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং জিজ্ঞাসা করা হয়, সে এই বিয়েতে রাজী আছে কিনা? মেয়ের অভিভাবক এই প্রস্তাবে মেয়ের সম্মতি কিংবা অসম্মতি শুনার জন্যে অবশ্যই সেখানে উপস্থিত থাকে। যদি সে সম্মতি প্রদান করে তবে তারা বরের প্রতি মনোযোগী হয় এবং তাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। যখন সে তার সম্মতি প্রদান করে তখন তারা কাজীর কাছে যায় এবং বর কনে উভয়ের সম্মতির কথা জানায়। অতঃপর কাজী সাহেব উচ্চ স্বরে বিয়ের খুতবা পাঠ করেন। খুতবাটি স্বামী ও স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সংক্রান্ত কিছু কুরআনের আয়াত ও হাদিসের সমন্বয়ে প্রদান করা হয়। এতে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরূদও অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি বর কনের জন্যে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের মাধ্যম এবং সমাজে বিয়ের ঘোষণার মাধ্যম হিসেবেও কাজ দেয়।

বিয়ের মোহরানা
ওকবা ইবনে আমের (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ও ন্যায্য শর্ত (মোহরানা) হল যা তোমরা পূরণ করতে সক্ষম হও। যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করেছ। (বুখারি, মুসলিম)

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেগার’ বিয়ে থেকে বারণ করেছেন। শেগার’ বিয়ে হল, কোন ব্যক্তি তার কন্যাকে ছেলের পিতার সাথে এই শর্তে বিয়ে দেবে যে, সেও (বরের পিতা) পরবর্তীতে তার কন্যাকে তার (কনের পিতার) ছেলের সাথে বিয়ে দেবে এবং তাদের মধ্যে বিয়েতে কোন মোহরানা থাকবে না। (বুখারি, মুসলিম)

মোহরানা’ হল কোন সামগ্রী কিংবা টাকা পয়সা যা বিয়ের সময় স্বামী স্ত্রীকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। এটি বিয়ের অন্যতম পূর্বশর্ত। কোরান মাজিদ বলে, হে নবি, আমি তোমার জন্যে তোমার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা দিয়েছ। (আল-আহযাব, ৩৩:৫০)

কনে যদি উক্ত মোহরানায় স্বীকৃত না হয় তবে বিয়ে সিদ্ধ হয় না। মোহরানার পরিমাণ সম্পর্কে কোরান ও হাদিসে কোন বাঁধা ধরা নিয়ম বর্ণিত হয় নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদা অনুসারে স্বামী বিয়ের সময় মোহরানা হিসেবে একটি অর্থের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। অনেক সমাজে, উদাহরণস্বরূপ হিন্দু সমাজে কন্যার পিতা বরকে অর্থ প্রদান করতে হয়, কেননা সে তার মেয়ের বিয়ে করেছে । ইসলামি আইন নারীদের অনুকুলে। একজন পুরুষকে গ্রহণযোগ্য পরিমাণ অর্থ তার স্ত্রীকে প্রদান করতে হয়।

অলীমা বা বিয়ে ভোজ
আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ (রা.) এর উপর একটি হলুদ দাগ লক্ষ করেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কি? সে উত্তর করল, আমি পাঁচ দেরহাম পরিমাণ স্বর্ণের মোহরানার বিনিময়ে এক নারীকে বিয়ে করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অলীমার ভোজের ব্যবস্থা কর। যদিও তা একটি ছাগলের মাধ্যমে হয়। (বুখারি, মুসলিম)

আনাস ইবনে মালেক (রা.) আরও বর্ণনা করেন, যখন জায়নাব বিনতে জাহাশ (রা.)কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর গৃহে আনা হয় তখন তিনি অলীমার ভোজের আয়োজন করেন। তাতে লোকেরা পরিতৃপ্তি সহকারে রুটি ও গোশত আহার করে।

অলীমা সেই ভোজের নাম যা বিয়ের পর বরের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়। এটি ইসলামি বিয়ের একটি প্রশংসনীয় আমল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতও বটে। অলীমার ভোজ বিয়ের উৎসবকে আরও শ্রীবৃদ্ধি করে এবং বিয়ের প্রচারে সহায়ক হয়।

অলীমার ক্ষেত্রে কিছু কাঙ্খিত নির্দেশনা
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিকৃষ্ট প্রকারের অলীমার ভোজন হল তা যাতে ধনীরা আমন্ত্রিত হয় এবং গরীবরা উপেক্ষিত থাকে। যে ব্যক্তি অলীমার ভোজনে (কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিত) যোগদান করা থেকে বিরত থাকে সে আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়। (বুখারি, মুসলিম)

এই হাদিস আমাদেরকে দুটি মৌলিক বিষয় শিক্ষা দেয়। প্রথমত, ধনী গরীব উভয় শ্রেণীকেই অলীমায় দাওয়াত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, দাওয়াত গ্রহণ করা ও বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা বাঞ্চনীয়।

মূল : ড. মাজহার ইউ কাজি
বাংলা অনুবাদ : মাওলানা ফয়জুল্লাহ মুজহিরি
সম্পাদনা : ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক

Facebook Comments