সিনেমা মানুষের বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম। বিভিন্ন ধরনের জেনর এখন সিনেমায় চোখে পড়ে। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘হরর সিনেমা’গুলো। শুরুতে হরর সিনেমাগুলো যেমন ছিল, বর্তমানে আর সেই চেহেরায় নেই। সিনেমায় টেকনোলজির উৎকর্ষতার ফলে যারা এই ধরনের সিনেমা নির্মাণ করেন তারা সবসময়ই তার সিনেমাটি একেবারে ন্যাচারাল করে উপস্থাপন করতে চান। মানে ভিএফক্সসহ অত্যাধুনিক কৌশল অবলম্বন করে তিনি সিনেমাটি একেবারে বাস্তব রূপ দেন। যা পর্দায় দেখে দুর্বল চিত্তের মানুষেরা সেইসব দৃশ্যগুলো মানসিকভাবে নিতে পারেন না। যার ফলে অনেক সময় ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সম্প্রতি তেমনি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল ভারতের তামিলনাড়ুতে।
যারা ভূতের সিনেমা দেখতে ভালবাসেন তারা একেকটি নতুন হরর সিনেমার জন্য তুমুল অপেক্ষায় থাকেন। সদ্য মুক্তি পাওয়া আলোচতি সিনেমা ‘কনজিউরিং-২’ তেমন একটি সিনেমা। জেমস ওয়ান পরিচালিত মার্কিন সুপার ন্যাচারাল হরর ফিল্ম গোটা দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। আর এই সিনেমা দেখেই প্রেক্ষাগৃহে বসেই মৃত্যু হল তামিলনাড়ুর এক দর্শকের। যে বিষয়টি গোটা দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছে।
এমন ঘটনার পর প্রশ্ন আসছে, তাহলে আগেও কোনো সুপার ন্যাচারাল সিনেমা দেখে পৃথিবীতে মানুষ মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে? অতীত ঘেটে এসব তথ্য বের করেছে হোয়াটকালচার.কম। দুর্বল চিত্তের যারা আছেন তাদের হয়তো ‘হরর সিনেমা’ প্রবল চাপ তৈরি করতে পারে। যার ফলে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এমন সিনেমা দেখেও অনেকে মারা গেছেন যা আসলে হরর সিনেমা নয়। পুরোদমে কমেডি সিনেমা দেখে হাসতে হাসতেও মারা গেছেন অনেকে। প্রেক্ষাগৃহে বসে দর্শক সিনেমার ক্লাইমেক্স-এর সঙ্গে বুঁদ হয়ে প্রাণ হারানো এমন কিছু সিনেমা ও সেইসব ঘটনা জেনে নিতে পারেন এখানে:
দর্শকের মৃত্যুর কারণ কমেডি সিনেমা ‘এ ফিশ কলড্ ওয়ান্ডা’:
‘এ ফিশ কলড ওয়ান্ডা’ সিনেমাটির ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে যে, কমেডি সিনেমা হিসেবে সর্বকালের সেরা সিনেমা এটি। সুপার ন্যাচারাল কোনো ব্যাপারই আসলে ছবিটিতে নেই। অথচ ভরপুর এই হাসির ছবিটি দেখেও মারা গেছেন একজন দর্শক।
১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি প্রথমবার ডেনমার্কে মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। আর তখনই একজন ডেনিশ অডিওলজিস্ট সিনেমাটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যান। কেউ বিশ্বাস করুক আর নাই করুক, এই ছবিটি এতোটাই কমেডি ছিল যে হাসতে হাসতে সিনেমা হলেই প্রাণ গেল সেই ডেনিশ ব্যক্তিটির। যার নাম ছিল অলে বেনতেজ।
‘অ্যাবাটার’ দেখে অধিক উত্তেজনায় এক তাইওয়ান দর্শকের মৃত্যু:
এটা বলা অতুক্তি হবে না যে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে আলোড়ন ফেলা দেয়া সিনেমার নাম ‘অ্যাবাটার’। বিখ্যাত নির্মাতা জেমস ক্যামেরনের এই ছবিটি দেখতে অপেক্ষায় থাকেনি এরকম সিনেমা দর্শক পৃথিবীতে কী ছিল আদৌ?
২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি যখন তাইওয়ানের সিনেমা হলে মুক্তি পায় তখন ছবিটির থ্রিডি ভার্সন দেখতে জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে সব বয়সী দর্শকের মত হাজির ছিলেন ৪৫ বছর বয়সী এক দর্শক। ছবিটিতে স্পেশাল ইফেক্ট-এর ব্যবহার দেখে তিনি এতোটায় আপ্লুত ছিলেন যে অধিক উত্তেজনায় প্রেক্ষাগৃহে বসেই স্ট্রোক করে বসেন। দ্রুত বেগে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ছবি দেখে অতি উত্তেজনার কথায় বলেন। শেষ পর্যন্ত ১১দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মারা যান তিনি।
‘প্যাশন অব দ্য ক্রাইস্ট’-এ ক্রুশবিদ্ধ যিশুর ছবি দেখে হলেই কুপোকাত এক নারী:
বিখ্যাত নির্মাতা মেল গিবসন। তার সবচেয়ে আলোচিত সিনেমাগুলোর একটি ‘প্যাশন অব দ্য ক্রাইস্ট’। না এটা কোনো ভৌতিক গল্পের ছবি নয়, কিন্তু তারপরও ছবিটি দেখে হলে বসেই মারা যান এক বৃদ্ধ নারী। কারণ ছবিতে যে পরিমাণ নিষ্ঠুরতা মেল গিবসন দেখিয়েছেন তা সহ্য করতে পারেননি ওই।
২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটির শেষ অংশে যখন অভিনেতা জিম ক্যাভিজেলকে নিষ্ঠুরতমভাবে ক্রুশে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় তখন সেই বর্বরতম দৃশ্যটি পর্দার সামনে বসে মেনে নিতে পারেননি ৫৬ বছর বয়সী পেগি স্কট নামের এক নারী। তার মৃত্যুর পর ব্যাপক সমালোচনাও শুনতে হয়েছিল নির্মাতা মেল গিবসনকে। কারণ ওই নারী বয়স হলেও তিনি ছিলেন পুরোপুরি সুস্থ একজন মানুষ। কারণ পেগির মৃত্যুর পর চিকিৎসকরাও তেমনটিই জানিয়েছিলেন। সবাই সেসময় মেল গিবসনকে ওই নারীর মৃত্যুর জন্য দায়ী করছিলেন। কেননা ছবিতে তখন কোনো ধরনের স্পেশাল ইফেক্টও ব্যবহার করেননি নির্মাতা। কিন্তু তারপরেও নির্মমভাবে এমন নিষ্ঠুরতা দেখানোকে অপরাধ হিসেবেও বলা হয়েছিল।
এছাড়া এই ছবির পোস্টার দেখেও একজন ব্রাজিলিয়ানের হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যাওয়ার কথা শোনা গেছে।
‘টুইলাইট: একলিপস’ দেখে এক মদ্যপের মৃত্যু:
না। অন্য সিনেমার মত ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট ও রবার্ট পেটিসন অভিনীত ‘টুইলাইট: একলিপস’-এর কোনো নির্মম দৃশ্য দেখে কেউ মারা যাননি। তবে এই সিনেমাটি দেখতে দেখতেই সিনেমা হলে বসেই মারা গেছেন এক মদ্যপ। যুক্তরাজ্যে যখন সিনেমাটি চলছিল তখন সন্ধ্যার শো’তে জনি ওয়াকার নামের এক মদ্যপ সিনেমাটি দেখতে বসেন। তার হাতে তখন ছিল একটি মদের বোতল। ছবি দেখতে দেখতেই ওই প্রেক্ষাগৃহেই ঘুমিয়ে যান তিনি। এই ঘুম তার আর ভাঙেনি। পরবর্তীতে শোয়ের আগে যখন পরিচ্ছন্নকর্মীরা থিয়েটার পরিস্কারের জন্য আসেন, তখন ওই সিনেমা দর্শককে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। ডাক্তাররা তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘অতিরিক্ত মদ্যপান’কেই দায়ী করেছিলেন। কিন্তু তারপরও ওই লোকের মৃত্যুর ব্যাপারটি জড়িয়ে যায় ‘‘টুইলাইট: একলিপস’-এর সাথে।
‘ব্ল্যাক সওয়ান’ প্রদর্শনকালে উচ্চস্বরে পপকর্ন খাওয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক দর্শকের মৃত্যু:
বিখ্যাত নির্মাতা ডেরেন আরনোফস্কি’র জনপ্রিয় সিনেমা ‘ব্ল্যাক সওয়ান’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। তার ঠিক এক বছর পর ছবিটি প্রদর্শীত হয় লাটভিয়ায়। ছুটির দিনের এক শো’তে মাল্টিপ্লেক্সে বসে সবাই মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন ছবিটি। কিন্তু একজন দর্শকের উচ্চশব্দে পপকর্ন খাওয়ার বিষয়টি যেন একটু পীড়া দিচ্ছিল লাটভিয়া নাগরিককে। কয়েকবার বলার পরও ওই লোকটি উচ্চ শব্দে পপকর্ন খেতে থাকলে ধপাস করে সিনেমা হলের মধ্যে নিজের পিস্তল দিয়ে পাশের আরেক দর্শক গুলি বরে বসেন। সেখানেই মৃত্যু হয় ওই পপকর্ন খাওয়া দর্শকের। এটা জোকসের মতো শোনালেও সত্যিই সে সময় বিষয়টি খুব আলোচিতও হয়েছিল।
এছাড়া ভারতীয় কমেডি সিনেমা ‘গ্র্যান্ড মাস্তি’ দেখে হাসতে হাসতে মুঙ্গেশ ভোগল নামের এক ব্যক্তি, এবং হরর সিনেমা দেখে ভয়ে একজন ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যু হওয়ার কথা জানা গেছে।