banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 509 বার পঠিত

 

দুর্যোগ মোকাবেলায় সীমাবদ্ধতাই নারীর প্রধান সমস্যা

দুর্যোগ মোকাবেলায় নানা ক্ষেত্রে বিচরণে সীমাবদ্ধতার কারণে নারীরা পুরুষের তুলনায় ২৪ শতাংশ কম সক্ষমতাসম্পন্ন। আর অর্থনৈতিক, সামাজিক, অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নারীরা যথাযথভাবে অবদান রাখতে পারছে না।  ‘উইমেন রেসিলিয়েন্স ইনডেক্স : কমিউনিটি সিচুয়েশন’ বিষয়ক একশনএইড বাংলাদেশ পরিচালিত নতুন জরিপ প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। উইমেন রেসিলিয়েন্স ইনডেক্স গবেষণাটি পটুয়াখালী, বরগুনা ও ফরিদপুর জেলার ৪টি ইউনিয়নে পরিচালনা করা হয়। এতে অংশ নেয় ২৬১ জন যাদের মধ্যে ১৩২ জন ছিল নারী। ৪টি বিভাগের ৪০টি নির্দেশকের মাধ্যম গবেষণার তথ্য-উপাত্ত উঠে আসে।  গবেষণার তথ্যানুসারে, অর্থনৈতিক, সামাজিক, অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক সূচকসমূহে নারীর বিচরণের মান ৪০ যেখানে পুরুষের ৫৫।   সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘মিজারিং রেসিলিয়েন্স: উইমেন’স পারসপেক্টিভ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।   গবেষণা প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বরিশালের কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘মূলত দুর্যোগ মোকাবেলায় গ্রামীণ পর্যায়ে নারীরা খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর প্রধান কারণ এ বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই বললেই চলে। আর এটি উত্তরণে সর্বপ্রথম সামাজিক প্রতিবদ্ধকতা দূর করতে হবে। আর নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’  গবেষণা আর ‘সাউথ এশিয়ান উইমেন’স রেসিলিয়েন্স ইনডেক্স’ অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নানা দুর্যোগের কারণে ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ১০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং ১৫ হাজার ৭১৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।   উইমেন রেসিলিয়েন্স ইনডেক্স প্রতিবেদনটি, অর্থনৈতিক সম্পদ, নির্ভযোগ্য অবকাঠামো, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ নীতি ও পরিকল্পনা এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় রাষ্ট্রের ক্ষমতার উপর তৈরি করা হয়েছে। এবং সেখানে বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে এসব ক্ষেত্রে নারীর অভিজ্ঞতার উপর। জাপান একমাত্র উচ্চ আয়ের দেশ যেখানে দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির অধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং তাদের স্কোর হলো ৮০.৪। আর বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেপাল, ভারত এবং মালদ্বীপের সামগ্রিক স্কোর হলো ৪০ থেকে ৪০.৬, যা দেশগুলোর দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে।   প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের অবকাঠামোগত স্কোর হলো ২২.৩, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় নারীরা দুর্যোগ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিতে পারে না।   বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক গবেষণাটির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বিষয়টি বিষদভাবে দেখার জন্য নতুন গবেষণাটি করে একশনএইড বাংলাদেশ। যেখানে দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলের এখনও শতকরা ৩৭ জন নারীর জীবিকা নির্বাহের জন্য বাজারে প্রবেশাধিকার নেই। আর যেসব নারী আয়ের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন তাদের ৯৪ শতাংশের দৈনিক আয় ১০০ টাকা বা তারও কম। তবে এসব নারীর শতকরা ৪৯ জনের নিজস্ব আয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ৭১ শতাংশ নারীই নিজ গ্রামের বাইরে যেতে ভয় পান। নিরাপত্তার অভাবে নানা দুর্যোগের সময়ও শতকার ৫৫ জন নারী আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে নিরাপদ মনে করেন না।   গবেষণায় আরো পাওয়া যায় যে, ৫১ শতাংশ নারী প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা পায় না। আর স্বাস্থ্য সেবা পেতে ৭১ শতাংশেরই অন্য কারো উপর নির্ভর থাকতে হচ্ছে। আর এসব কারণেই নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হচ্ছে না।   একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারীনেত্রী সালমা আক্তার, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক ড. সালিমুল হক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাশ্বতী বিপ্লব।

Facebook Comments