বহুমুখী প্রতিভায় উদ্ভাসিত ফরিদা হোসেন। আমাদের সাহিত্য জগতের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। জন্ম : ১৯শে জানুয়ারি,স্থান কোলকাতা। ফরিদা হোসেন ২০০৪ সালে সাহিত্যে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক পান। এছাড়াও ৬ টি স্বর্ণ পদক সহ মোট ২৫ টি সাহিত্য পুরস্কার পান বিভিন্ন সংগঠন থেকে। ফরিদা হোসেন একাধারে একজন ছোটগল্প লেখক, ঔপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক, নাট্য পরিচালক, গীতিকার ও সুরকার এবং আবৃত্তিকার। লেখার বিষয়বস্তু প্রধানত ছোট গল্প উপন্যাস-শিশু সাহিত্য। শিশুদের জন্যে বিশেষ বানী সমৃদ্ধ রূপকথার নাটক ইত্যাদি। বিটিভিতে ধারাবহিক ভাবে প্রচারিত রূপকথার দেশে, সমাদৃত হয়েছে সর্বমহলে।
তিনি এক সময় রেডিওতে সংবাদ পাঠ, আবৃত্তি ও মহিলা এবং শিশুদের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংগঠন পি.ই.এন এর বাংলাদেশ সেন্টারের সভাপতি ও “অবিনশ্বর” সাহিত্য পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ৬০ এর দশকে ছাত্রী অবস্থায় তার প্রথম গল্প গ্রন্থ “অজন্তা” প্রকাশ করে পাইওনিয়ার পাবলিকেশন। প্রচ্ছদ করেন বিখ্যাত শিল্পী ও টিভি ব্যক্তিত্ব জনাব মোস্তাফা মনোয়ার।
১৯৬৫ সালে বিটিভিতে প্রচারিত হয় ফরিদা হোসেন রচিত ও পরিচালিত প্রথম শিশুতোষ নাটক। ফরিদা হোসেন ১৯৬৬ এর অক্টোবরে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেন। তিনি সহিত্য চর্চার পাশাপাশি আবৃত্তি, সংবাদ পাঠ, শিশু ও মহিলা বিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। মুক্তধারা, অঙ্কুর, নন্দন, মাওলা ব্রাদার্স, শিল্পতরু, হাতেখড়ি, শিকড় প্রকাশনী, মমন প্রকাশনী, মাম্মী প্রকাশনী এবং তার নিজের আঞ্জুম প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে বহু গ্রন্থ।
তার গল্প সংকলন, উপন্যাস, নাটক, শিশু সাহিত্য, অনুবাদগ্রন্থ সহ সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টির মতো গ্রন্থ সংখ্যা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, উপন্যাস- শ্রষ্ঠ গল্প সম্ভার,আরাধনা,সহযাত্রী,একজন কাজলীর কথা, একটি শীতল মৃত্যু,অজন্তা,ঘুম, শাড়ী, হিমালয়ের দেশে, নির্বাচিত গল্প, ক’জনার কথা,স্মৃতি কণিকা,জীবন যেমন,মুখোশ, ইংরেজি গল্প- Short Stories from Bangladesh, Blessing, Selected Short Stories, Devotion, শিশু সাহিত্যের মধ্যে- তেলেদা’র তেলাতঙ্ক, লুকোচুরি, মিতালী, আনন্দ ফুলঝুরি, সুরে ছন্দে ছড়াগান, রোজ রোজ, রূপকথার দেশে, শিশু সাহিত্য সমগ্র,নাটক- মায়া দ্বীপে অভিযান, খুকুর স্বপ্ন, চাঁদ কন্যার কথা, সপ্তবর্ণা, ঝড়ের পরে, অচীনপুরের রূপকথা, তুষার কন্যা, তারার খোঁজে, আনন্দ ভ্রমণ।
ফরিদা হোসেন ১৯৯৭ সালে স্কটল্যান্ড এবং ২০০৩ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা (পি ই এন) এর সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। মেক্সিকোতে ফরিদা হোসেনের রচিত ও পরিচালিত শিশুতোষ সর্ট-ফিল্ম ফ্রেন্ডশীপ বিশেষ সুনাম অর্জন করে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার জিয়ানজিওতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল পেন কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশের লেখকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন। ফরিদা হোসেন আঞ্জুম প্রকাশনী, আঞ্জুম টেলি নেটওয়ার্ক ও অবিনশ্বর সাহিত্য পত্রিকার সত্ত্বাধিকারী।
বর্তমানে ফরিদা হোসেন আলোকিত শিশু গড়ার লক্ষ্যে, নিজস্ব রচনা ও পরিচালনায় নির্মান করছে শিশুতোষ ধারাবাহিক রূপকথার দেশে। যার ২৪ টি পর্ব ইতিমধ্যে বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছে, এছাড়া ও তিনি ব্যস্ত রয়েছেন সাহিত্য ও শিশুতোষ অনুষ্ঠান নির্মানে।
ফরিদা হোসেন চট্রগ্রাম জেলার মিরেরশ্বরাই উপজেলার শাহেরখালী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্রমিক নেতা ও আই. এল. ও এর গর্ভনিং বডির প্রাক্তন পরিচালক মরহুম ফয়েজ আহমেদ ও মরহুম বেগম ফয়েজুন্নেছার প্রথম কন্যা এবং ফেনী জেলার রাজনীতিবীদ জনাব মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের সুযোগ্য স্ত্রী।
–প্রতিবেদক,অপরাজিতাবিডি ডটকম