প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমাজে অশুভ শক্তি দমনে চলচ্চিত্র হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। দর্শকেরা ছবি দেখে যাতে কিছু শিখতে পারে, সে দিকটিতে খেয়াল রাখতে তিনি নির্মাতাদের অনুরোধ করেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ২৬টি বিভাগে ২৯ জন শিল্পী ও কলাকুশলীর হাতে পুরস্কার হিসেবে পদক ও অর্থের চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৪ সালের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ফেরদৌস আহমেদ এবং মৌসুমী ও বিদ্যা সিনহা মীম। আর আজীবন সম্মাননা লাভ করেছেন অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম এবং অভিনেত্রী রানী সরকার।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা পরিবর্তনের স্বার্থে অনেক হলের মালিক তাঁদের সিনেমা হল ভেঙে ফেলছেন। অথচ এটিকে আরও আধুনিক করলে ব্যবসা ও সুস্থ সামাজিক বিনোদনের সুযোগ তৈরি করা যায়, যা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশও বটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র নির্মাণের মেধা, মনন ও শক্তি আমাদের দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের আছে।’ তিনি চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের নাম ঘোষণা করা হয় এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি। পুরস্কার বিতরণের জমকালো আসরটি বসে গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।
আজীবন সম্মাননা পাওয়া দুই অভিনয়শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম ও অভিনেত্রী রানী সরকারকে দেড় লাখ করে, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালককে ১ লাখ টাকা করে এবং অন্যদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট ১৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতার (প্রধান চরিত্র) পুরস্কার পান এক কাপ চা চলচ্চিত্রের জন্য ফেরদৌস আহমেদ। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান যৌথভাবে মৌসুমী ও বিদ্যা সিনহা মীম।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম রহমতউল্লাহ ও তথ্যসচিব মরতুজা আহমেদ।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ-এর প্রযোজক হিসেবে এবং এই চলচ্চিত্রের গীতিকার হিসেবে দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন মাসুদ পথিক। মেঘমল্লার চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হয়েছেন জাহিদুর রহমান অঞ্জন। শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে গাড়িওয়ালা। শ্রেষ্ঠ গায়ক হয়েছেন মাহফুজ আনাম জেমস এবং শ্রেষ্ঠ গায়িকা যৌথভাবে রুনা লায়লা ও মমতাজ।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (পার্শ্ব চরিত্র) শাহ মো. এজাজুল ইসলাম, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (পার্শ্বচরিত্র) চিত্রলেখা গুহ, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (খল চরিত্র) তারিক আনাম খান, শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা মিশা সওদাগর, শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক সাইম রানা, শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী আবির হোসাইন এবং শিশুশিল্পী হিসেবে বিশেষ পুরস্কার মারজান হোসাইন জারা। শ্রেষ্ঠ সুরকারের পুরস্কার পান বেলাল খান। শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার মরহুম আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন তাঁর ভাই নুরুজ্জামান ইলিয়াস। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার সৈকত নাসির, শ্রেষ্ঠ সংলাপ জাহিদুর রহমান অঞ্জন, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক তৌফিক হোসেন চৌধুরী, শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক মারুফ সামুরাই, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক মোহাম্মদ হোসেন, শ্রেষ্ঠ শব্দ গ্রাহক রতন পাল, শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জাকার কনকচাঁপা চাকমা এবং শ্রেষ্ঠ মেকআপ ম্যানের পুরস্কার পান আবদুর রহমান।