দিন দিন নারীরা দেশের শেয়ারবাজারে সক্রিয় হয়ে উঠছেন, বিনিয়োগে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস পরবর্তী সময়ে নানা অস্থিরতার মধ্যেও নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্থিতিশীল শেয়ারবাজারই নারীর অংশগ্রহণকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।
গত ছয় বছরে নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) নারী বিনিয়োগকারীর বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭০ হাজার ১৮৯টি। ২০১০ সালের এই দিনে ছিল ৬ লাখ ১ হাজার ৪০০টি।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় বছরে নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার। নারী দিবসে মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে মোট বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৩ হাজার ৪৪২টি। এর মধ্যে পুরুষদের বিও অ্যাকাউন্ট ২৩ লাখ ২২ হাজার ৫৯৪টি এবং নারী বিনিয়োগকারীদের বিও সংখ্যা ৮ লাখ ৭০ হাজার ১৮৯ টি এবং কোম্পানির বিও ১০ হাজার ৬৫৯টি।
২০১০ সালে শেয়ার বাজার ধসের পূর্বে ৮ মার্চ মোট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুরুষদের বিও সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার, নারী বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ১ হাজার ৪০০ টি এবং কোম্পানির বিও ছিল ৬ হাজার ৩০০টি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, পুঁজিবাজারের ওপর নারী বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতে শেয়ারবাজারের প্রতি উৎসাহ বাড়ছে নারীদের। পাশাপাশি ধসের পরবর্তী সময়ে সরকার অনেক প্রণোদনা ঘোষণা করে। ফলে আগের চেয়ে বর্তমান শেয়ারবাজারে অনেকটাই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। এ কারণে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীর অংশগ্রহণ সমান তালে বাড়ছে।
ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, নারীকে ব্রোকারেজ হাউজে সরাসরি লেনদেন করতে তেমন দেখা না গেলেও তাদের পক্ষে বাবা, ভাই, স্বামী অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছে। সেই সঙ্গে স্মার্ট ফোনের কল্যাণে বাসায় বসে একজন নারী মার্কেট সম্পর্কে জানতে পারছে এবং প্রয়োজনে শেয়ার বেচাকেনা অর্ডার দিচ্ছে। ডিএসইতে মোবাইলে বেচাকেনা চালু হলে নারী বিনিয়োগকারীরা বাসায় বসে সেল বাই অর্ডার দিতে পারবেন। এতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
একাধিক নারী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বেশিরভাগ নারী নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছেন। বাজারে আগে অনেকটা গতি ছিল। তাই সেকেন্ডারি মার্কেটে নারীর অংশগ্রহণ ছিল বেশ ভালো। অনেক সিকিউরিটিজ হাউজে নারীর উপস্থিতি লক্ষ করার মতো ছিল। কিন্তু বাজার ধসের পর নারীরা সরাসরি সিকিউরিটিজ হাউজে লেনদেন করতে আসেন না। তবে তাদের বেশির ভাগই প্রাইমারি শেয়ারে আবেদন করেন।
তারা আরও বলেন, ২০১০ সালে অনেক নারী বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আইপিওতে ঘোষিত ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় তারা শেয়ার বারাদ্দ পেলেও সম্প্রতি অনেকেই তা পাচ্ছেন না। তাই এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
রুমা আক্তার নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘অনেকে মনে করেন নারীরা শুধু আইপিওতে ব্যবসা করেন। কিন্তু আমি মূল মার্কেটের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ২০১০ সালে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী হিসেবে আইপিও আবেদনের কোটা পেতাম। কিন্তু গত এক বছর ধরে আমার আইপিও কোটায় শেয়ার বরাদ্দ পাই না।’ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করার পরও কোনো প্রতিকারও পাচ্ছেন না তিনি।
তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার মতো আরও অনেকে আছেন যারা আগে ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় আইপিওতে শেয়ার বরাদ্দ পেতেন কিন্তু এখন পাচ্ছেন না।’ তাই আইপিওতে ক্ষতিগ্রস্তদের যাতে কোটাসুবিধা নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নজরদারি দাবি করেন তিনি।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘ডিএসইর পক্ষ থেকে নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতে নারীরা তাদের বিনিয়োগের বিষয়ে খুঁটিনাটি বুঝতে পারছেন।’ এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনে নতুন সিস্টেম ‘মোবাইল লেনদেন’ চালু হচ্ছে। এতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।