banner

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 228 বার পঠিত

 

হত্যার আগে ধর্ষণ

কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু যে হত্যার শিকার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। লাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার তনুর লাশ তোলার পর কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন প্রথম আলোকে এ কথা বলেছেন।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য এবং পারিপার্শ্বিক আলামত থেকে পুলিশ সুপার এ ধারণা করছেন বলে জানিয়েছেন। এ জন্য দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তে এ-সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন চেয়েছেন তিনি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সব বিষয় স্পষ্ট হবে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তিনি মনে করছেন, তনুকে অন্য কোথাও হত্যা করে ঝোপের মধ্যে ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে যে আলামত রাখা হয়েছে, তা সাজানো মনে হয়েছে। একই কথা তিনি বিবিসিকেও বলেছেন।
তনুর লাশ তোলার পর এ কাজে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর মাথার পেছনে জখমের দাগ আছে। নাক থেঁতলানো। কানের নিচে আঁচড়ের দাগ ও চুল কাটা।
তবে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রথম দফা সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তে তনুর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়নি। ওই দুই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তনুর মৃতদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, কেবল নাক দিয়ে রক্ত বের হয় এবং কানের নিচে আঁচড়ের দাগ ছিল। চুল কাটা ছিল।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি প্রথম যখন তনুকে উদ্ধার করেন, তখন তাঁর মাথার পেছনে ও নাকে জখম দেখেছেন। এ ছাড়া তনুর জামার দুই বাহুর নিচের দিকে ছেঁড়া ছিল। তনুকে প্রথম দফা কবর দেওয়ার আগে যাঁরা শেষ গোসল দিয়েছেন, এমন একজনও তনুর মাথার পেছনে ও নাকে জখম এবং কানের নিচের আঁচড় ও চুল এলোমেলোভাবে কাটা দেখেছেন।
প্রথম দফা সুরতহাল প্রতিবেদন করেছিলেন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম। তিনি গতকাল প্রথম আলোর কাছে প্রথম দফা সুরতহাল প্রতিবেদনে মাথার জখমের কথা গোপন করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ময়নাতদন্তের জন্য মাথার খুলি কাটতে হয়, হয়তো সেটাকে এখন জখম মনে হচ্ছে।
কিন্তু এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল অন্য সূত্রগুলো বলছে ভিন্ন কথা। ময়নাতদন্তের জন্য মাথার খুলির যে বরাবর কাটা হয়, সেটা আর পেছনের জখম ভিন্ন।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন গতকাল জানিয়েছেন, তিনি মেয়েকে খোঁজার সময় ঘটনাস্থল থেকে তিন ব্যক্তিকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন। ওরা কারা, সেটা জানার জন্য তিনি তখন উপস্থিত এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেসও করেছিলেন। এরপর একটু সামনে এগিয়েই মেয়ের লাশ দেখতে পান তিনি। ততক্ষণে ওই তিনজন দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। এ তথ্য তিনি শুরুতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুর আলমও প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন, তাঁকে তনুর বাবা একই কথা বলেছিলেন।
সোহাগী জাহান তনুর লাশ গতকাল কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে তোলা হয় l ছবি: প্রথম আলোআদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য তিনটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের প্রধান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। অন্য দুজন হলেন গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. করুণা রানী কর্মকার ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক মো. ওমর ফারুক। তাঁরা গতকাল বিকেলে তনুর দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্তের বিষয়ে এখনই কিছু বলতে রাজি হননি তাঁরা।
এর আগে ২১ মার্চ প্রথম দফা ময়নাতদন্ত করেছিলেন একই মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগেরই একজন চিকিৎসক। ওই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তনুর মাথায় জখমের কথা আসেনি বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে গতকাল প্রশ্ন করা হলে কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। আমরা আদালতের নির্দেশে মেডিকেল বোর্ড করে আবার ময়নাতদন্ত করছি।’
গতকাল সকালে মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে তনুর লাশ তোলা হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছিলেন আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার। এ ছাড়া পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, সিআইডির বিশেষ সুপার (এসএস) নাজমুল করিম খান, সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের ক্রাইম সিন ইউনিটের (ফরেনসিক আলামত) সহকারী সুপার আবদুস সালাম, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আশপাশের গ্রামের বিপুলসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। স্থানীয় যাত্রাপুর এ কে উচ্চবিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কবরস্থানের কাছে আসে। তারা তনু হত্যার বিচারের দাবিতে স্লোগান দেয়।
দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত শেষে গত রাতেই একই কবরে তনুকে দাফন করা হয়। পুলিশ সুপার জানান, মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দকে প্রধান করে তদন্ত-সহায়ক একটি দল গঠন করা হয়েছে।
২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশের ঝোপের মধ্যে পাওয়া যায়।

Facebook Comments