অভিভাবকেরা কন্যা শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন। সেখানে ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়, এমন শপথ করবে সবাই। সকাল নয়টার আগেই মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন স্কুলের ৬৫০ জন কন্যা শিশু আসে অভিভাবকসহ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক। আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে ১১ অক্টোবর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানস্থলে কথা হয় গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা ইয়াসমীনের মা শাবানা ইয়াসমীনের সঙ্গে। বললেন, ‘স্বপ্ন পূরণের জন্য মেয়েকে স্বাবলম্বী করব। তারপর বিয়ে দেব। তাই ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়, প্রকাশ্যে এই শপথ করতে এখানে এসেছি।’
চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির জিন্নাত তাসনিন হোসেন জানাল, তার বাবা গাজিউর রহমান সঙ্গে এসেছেন। স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত সেও বিয়ে করবে না।
জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আইনাতুল মার্জিয়ার চোখে পানি দেখা গেল। জানা গেল, তার বাবা কৃষক। ভাই নেই, তিন বোন। বড় দুই বোনের হয়েছিল বাল্যবিবাহ। এখন তাঁরা পরিবারে বোঝা হয়ে আছেন। বাবার ঘাম-ঝরানো অর্থে সে পড়াশোনা করছে। বাবার ইচ্ছা মেয়ে অনেক বড় হবে। তাই বাল্যবিবাহ নয়।
গাংনী পাইলট স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, মেয়ে মানেই বোঝা—এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তার মায়ের বাল্যবিবাহ হয়েছিল। তাই ‘মেয়ে মানেই বোঝা’—এই কথা মিথ্যা প্রমাণ করে দিতে সে ১৮ বছরের আগে বিয়ে করবে না।
জানা গেলে, এই মেয়েরা প্রথমে মা বা বাবাকে নিয়ে নিজ বিদ্যালয় বা বাড়িতে বসে বাল্যবিবাহবিরোধী শপথ নিয়েছে। সেসব শপথের ছবি প্রদর্শন করা হয়। এরাই অভিভাবকসহ অনুষ্ঠানে এসে প্রকাশ্যে বাল্যবিবাহ নয়, স্বাবলম্বী হওয়ার আগে বিয়ে নয়—এমন শপথ করেছে। কন্যা শিশুদের শপথ দেখে এবং বাল্যবিবাহের কুফল জেনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৫০০ ছেলে শিশু ১৮ বছরের কম মেয়েকে বিয়ে না করার প্রকাশ্য অঙ্গীকার করে।
জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার। শুধু বাল্যবিবাহ নয়, মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতন, অ্যাসিড-সন্ত্রাস, অপরাজনীতিমুক্ত দেশ গড়তে উপস্থিত সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের মেহেরপুর শাখার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাবুদ হাসান, গাংনী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা আঞ্জুমান বানু, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত মান্নান, জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান আল নূরানী, নারী নেত্রী নূরজাহার বেগম, সুজনের গাংনী উপজেলা শাখার সহসভাপতি আবদুর রশিদ ও যুগ্ম সম্পাদক আক্তারুজ্জামান।
পরে অপরাজনীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা সাতটি নাটিকা মঞ্চস্থ করে। অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী হেলাল উদ্দিন বলেন, জেলায় ৭১ শতাংশ কন্যা শিশুর বাল্যবিবাহ হয়। তাই গাংনী উপজেলার ৪৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে চিহ্নিত করে সেসব বিদ্যালয়ের কন্যা শিশু ও অভিভাবকদের এই শপথের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য উপজেলাতেও এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়
Facebook Comments