banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 176 বার পঠিত

 

ব্যবসায় নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন

বৈজ্ঞানিক হতে চেয়েছিলাম। আর্থিক সংগতি ছিল না। তাই ১১ বছর বয়সে পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করি। মার খেয়েছি। চাকরি চলে গেছে। দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন করতে দেখে অনেকেই বলেছে আমার “চরিত্র” খারাপ। তবে একসময় যারা চরিত্র নিয়ে অপবাদ দিত, তারাই এখন আমাকে দেখে সালাম দেয়।’

নব্বইয়ের দশকের অভিজ্ঞতা বলছিলেন পোশাকশিল্প কারখানার একসময়কার শ্রমিক, বর্তমানে এ শিল্পেরই শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার। এখন তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে স্কুলে পড়ছে।

শুধু নাজমা নন, এভারেস্ট বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার, চাঁদপুর সদরের দুবার নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুনিরা চৌধুরী, সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের জন্য সংগঠন ইউসেপ বাংলাদেশের কিশোরীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের ও পেশার নারীরা তাঁদের জীবনের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন।

মুনিরা চৌধুরী বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সেভাবে কোনো দায়িত্ব নেই। তবে আমি আইনজীবী। এই পেশাকে কাজে লাগিয়ে আমি অসহায় মানুষকে আইনি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি।’

নিশাত মজুমদার বলেন, ‘এভারেস্ট চূড়ায় ওঠার পরও তেমন কিছু মনে হয়নি। কিন্তু বিমান থেকে যখন প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলাম, চারপাশে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। তখন মনে হলো, আমার দায়িত্ব তো অনেক বেড়ে গেছে।’

ইউসেপ বাংলাদেশের সাবেক শিক্ষার্থী সুবিধাবঞ্চিত শারমীন আক্তার বর্তমানে এনটেল ইলেকট্রনিকস নামের একটি কোম্পানিতে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘ইউসেপের অন্য সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের এখন নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিচ্ছি।’

ব্র্যাকের কিশোরী ক্লাবের ক্রিকেটার নাসরিন বাংলাদেশ ক্রিকেট মহিলা দলের দলনেতা হওয়ার স্বপ্নের কথা শোনাল।

ব্র্যাক কিশোরী ক্লাবের আরেক নেত্রী জোহরা খানম বলেন, ‘আমি ব্র্যাকের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারলে এত দিনে হয়তো এক সন্তানের মা হয়ে যেতাম।’ জোহরা শুধু নিজে সচেতন হননি, অন্যদেরও বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা করছেন।

উদ্যোক্তা শিরীন রওশন ১৭ থেকে ১৮ বছর আগে প্রথম শুরু করেছিলেন ‘ফ্রোজেন ফুড’-এর ব্যবসা। গৃহবধূ থেকে এখন তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, তখন এক প্যাকেট শিঙাড়াও অনেক বলে-কয়ে বিক্রি করতে হতো। আর এখন পরোটাও কিনে খাচ্ছে মানুষ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক দীর্ঘ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল নারীদের কথা শোনেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এ অনুষ্ঠান তারই প্রমাণ। অন্যদিকে বলা যায়, নারীরা এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যেতে বাধ্য।

ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পাওলিন ট্যামেসিস বলেন, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনেও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির স্বীকৃতি মিলেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ভারতের চেয়েও ভালো।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন্স এন্ট্রাপ্রেনিউরসের প্রেসিডেন্ট রোকেয়া আফজাল রহমান সবাইকে নিয়ে গেলেন তাঁর ২২ বছর বয়সে। তখন তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। তারপর বিয়ে, সন্তানের জন্য চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু। তখনো সবার অবাক হওয়ার পালা।

রোকেয়া আফজাল রহমান বলেন, সবাই চেষ্টা করে এক পথে হাঁটলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।

বাংলাদেশের প্রথম নারী অ্যাম্বাসেডর নাসিম ফেরদৌস ৩০ বছর সরকারি চাকরি করে ২০০৮ সালে অবসর নেন। তারপর গড়ে তোলেন বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর উইমেন লিডারশিপ নামের প্ল্যাটফর্ম। লুনা শামসুদ্দোহা দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকাশিত হয়। এই দুই নারীও তাঁদের জীবনের কাহিনি শোনান।

Facebook Comments