শিশুদের কথা মাথায় রেখে ফ্যাশন ও বুটিক হাউসগুলোর আয়োজনের কমতি নেই। দুই থেকে ১২ বছর বয়সী মেয়েশিশুদের জন্য থাকছে সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক, স্কার্ট-টপস, ফতুয়া, থ্রিপিস ও টি-শার্ট। আর ছেলেদের জন্য ফতুয়া, প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, শর্ট পাঞ্জাবি ইত্যাদি। মেয়েশিশুদের পোশাকে নকশা ও কাটিংয়ে রয়েছে বিশেষ ভিন্নতা। অ্যালাইন কাট, হাতাকাটা পোশাক ছাড়াও ঘটি হাতার ফ্রক ও টপসের সংগ্রহ বেড়েছে। কামিজের লেইসের ওপর বিশেষ ডিজাইন থাকছে। অধিকাংশ পোশাকই হাতা ছাড়া বা ছোট হাতার। কাপড়ের ক্যানভাসে থাকছে নানা রঙের আঁকিবুঁকি।
যে পুতুলটি নিয়ে খেলে, সেই ‘বার্বি ডলে’র গোলাপি ঝালরের পোশাকটি যেমন আছে, তেমনি আছে জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র টম অ্যান্ড জেরি, ব্যাটম্যান, সুপারম্যানের মতো পোশাকে সাজার সুযোগ। এ প্রসঙ্গে ক্যাটস আইয়ের পরিচালক সাদিক কুদ্দুস বলেন, ‘শিশুদের পোশাকের মোটিফ হিসেবে এলোমেলো নকশার বদলে চল বেড়েছে সাদাসিধে নকশার। বর্ণমালা কিংবা মজার সব ছবির ব্লকপ্রিন্টও আছে। তবে সুপার হিরো সিরিজের নানা কমিক ক্লাসিক্যাল চরিত্রগুলোও আছে ছোটদের পোশাকের ক্যানভাসে।’
এই ঈদে বিশেষ মনোযোগ পাচ্ছে আবহাওয়ার বিষয়টি। বর্ষার বৃষ্টি হানা দিলেও গরম কিন্তু খুব একটা কমেনি। তাই আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে প্রাধান্য পাচ্ছে সুতি পোশাক। পাশাপাশি কিছু পোশাকে জর্জেট ও নেটের ব্যবহারও দেখা গেছে। ফ্যাশন হাউস ফড়িংয়ের ডিজাইনার মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘শিশুদের ক্ষেত্রে আরামের জন্য মনোযোগ দিচ্ছি সুতিতে। পাশাপাশি নজর রাখছি রঙে। কন্ট্রাস্ট কালার খুব চলবে শিশুদের এবারের ঈদ পোশাকে।’
পরিবারের সবাই মিলে এক পোশাকে ঈদ উদ্যাপনেরও সুযোগ রেখেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। বড়দের পোশাকের ডিজাইন ঠিক রেখে শুধু মাপ কমিয়ে বানানো হয়েছে শিশুদের পোশাক। বিশেষ করে মেয়েদের শাড়ি আর ছেলেদের পাঞ্জাবিতে দেখা মিলল এই ধারার। ফ্যাশন হাউস রিচম্যানের পরিচালক মনিরুল হক খান জানালেন, ‘বড়দের মতো ছোটদের জন্যও একই ডিজাইনের পাঞ্জাবি থাকছে, কেবল কমেছে পরিমাপ।’
পোশাকে প্রিন্টের অনেক রকম কাজ থাকছে। স্ক্রিনপ্রিন্টে নানা মোটিফের অলংকরণ যোগ হয়েছে। গরমের কারণে ভারী ডিজাইন করা হয়নি। হাতের কাজ, কারচুপি, কম্পিউটার এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক, রিবনের নকশাই কমবেশি রয়েছে। প্রজাপতির ডানা, কাপড়ের ফুল, টুনটুনি পাখি, সবই দেখা গেছে মোটিফ হিসেবে। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে থ্রিপিসই বেশি চলছে বলে জানালেন ডিজাইনার মাহবুবুর রহমান মাসুম ‘মেয়েশিশুদের থ্রিপিসে এবারের ট্রেন্ড লং প্যাটার্ন। আগে কাপড়ের মাঝামাঝি শেড থাকত। এবার শেডের বদলে থাকছে স্ট্রেইটকাট।’
ছেলেদের শার্টে প্রাধান্য পাচ্ছে হাফ হাতা ও হাতা ছাড়া কাট। শার্টের মধ্যে চেকেরই প্রাধান্য। লং প্যান্টের বদলে কোয়ার্টার। সাদার পাশাপাশি রঙিন পাঞ্জাবি বেশ পছন্দ ছেলেশিশুদের। বিভিন্ন রঙের পাঞ্জাবির হাতা ও বুকে থাকছে কারুকাজের ছোঁয়া। বসানো হয়েছে পুঁতি। সুতি কাপড়ের বাইরে কারুকাজ করা সিল্কের পাঞ্জাবিও দেখা গেছে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে দেখা গেল বড়দের পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে শিশুদের পাঞ্জাবি তৈরি করেছে। পাঞ্জাবির সঙ্গে আছে চুড়িদার পায়জামা, আলিগড়ি, কাবলি পায়জামাসহ নানা ধরনের প্যান্ট। বড়দের মতো এসব পাঞ্জাবির কলার ও হাতায় মেশিন এমব্রয়ডারির কাজ থাকছে।
স্টুডিও এমদাদের ডিজাইনার এমদাদ হক বলেন, ‘অন্যান্য উৎসবের মতো ঈদের পোশাকেও রঙের যথেষ্ট ব্যবহার দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ডিজাইনের সঙ্গে মিলিয়ে রং ব্যবহার হয়।’ ডুয়েটঅ্যাড ঐতিহ্যের কর্ণধার অনুপ কুমার পাল জানান, বর্ষা ও গরমের কথা মাথায় রেখে পোশাকে সব ধরনের উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হয়েছে। কাপড়ে ব্যবহার করা হয়েছে আকাশি, গাঢ় নীল, লাল, কমলা, জলপাই, হলুদ, বাদামি, ম্যাজেন্টা, নীল, গোলাপি, টিয়া, সবুজ, কালো ইত্যাদি রং। কোথাও শুধু সাদা কাপড়ের অর্ধ ভাগজুড়ে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন রং। আবার দু-তিনটি রঙের মিশেলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রংবৈচিত্র্য।
সূত্র-কালের কন্ঠ।