বিয়ের ষোলো আনা পূর্ণ করতে বিয়ে-অনুষঙ্গের ব্যবহার যুগ-যুগান্তরের। রীতিমতো বরের হাত ধরে কনের বাড়িতে বিয়ের উপকরণের পসরা বসে। তাই তো বিয়ে-পূর্ব অনুষঙ্গের কেনাকাটার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি রাজধানীর বিয়ের বাজার ঘুরে দেখা যায়, শহরটির বিভিন্ন মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসসহ বেশকিছু দোকানে বিয়ের উপকরণের মেলা বসেছে। এগুলোর মধ্যে এলিফ্যান্ট রোডে রয়েছে ৩০টিরও বেশি দোকান। আর হিন্দুদের বিয়ের জন্য শাঁখারীপট্টির প্রায় পুরোটাজুড়ে রয়েছে অগণিত দোকান। এ ছাড়া বিয়ের অনুষঙ্গ পাইকারি কেনার জন্য ঢাকার চকবাজারে রয়েছে বেশ কিছু দোকান।
বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় উপকরণ
*লাগেজ
বিয়ের উপকরণ হিসেবে বিয়ের লিস্টের প্রথমেই থাকে বিভিন্ন আকারের লাগেজ। সহজে কেনাকাটা করতে এই লাগেজ আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। প্রেসিডেন্ট, ডেসি মিলানসহ অসংখ্য ব্র্যান্ডের লাগেজ বাজারে পাওয়া যায়। এরমধ্যে আপনার পছন্দের লাগেজটি প্রথমেই সংগ্রহ করে নিন। ব্র্যান্ডেড লাগেজগুলোর দাম শুরু হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে। তবে আকারভেদে এর দাম হতে পারে ৯ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। চাইলে নন-ব্র্যান্ডেড লাগেজ কিনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে লাগেজের দাম শুরু হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে।
*শেরওয়ানী,পাগড়ী,নাগরা
এরপর প্রয়োজন বরের শেরওয়ানি। বিভিন্ন মানের শেরওয়ানির দাম পড়বে ৪ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বরের শেরওয়ানির সঙ্গে পায়জামার দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। বরের শেরওয়ানির জৌলুস আরও ফুটিয়ে তুলতে প্রয়োজন পড়ে ওড়নার। এর দাম ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর পাগড়ির দাম পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বিয়ের উপকরণ বিক্রেতা মেহজাবিন তামান্না বলেন, বিয়েতে আরও কিছু উপকরণের প্রয়োজন রয়েছে, যা প্রতিটি বিয়ের আয়োজনকে পরিপূর্ণ করে তুলবে। এর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বরের নাগরা জুতা। এর দাম পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা।
*ডালা-কুলা,পালকী ইত্যাদি
গায়ে হলুদ এবং বিয়ের অন্যান্য আয়োজনে বাহারী ডিজাইনের ডালা,কুলা ইত্যাদি খুবই প্রয়োজনীয়। এলিফ্যান্ট রোডে বিয়ের ডালা, কুলা, বাটি/প্রদীপ, রাঁখি ইত্যাদির দাম পড়বে ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। বিয়ের উপটান, সোন্দা, চন্দন, চন্দন তেল, সোহাগপুরী ইত্যাদির দাম পড়বে ৩৫০ থেকে ৯৫০ টাকার মধ্যে। কনের জন্য আলতা ৩০ থেকে ৬০ টাকা, মেহেদি ৪০ থেকে ১২০ টাকা, পাটি ১৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, হলুদ তোয়ালে ১২০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত।
বিয়ের অনুষঙ্গের মধ্যে আরও রয়েছে আফসান, রুমাল, পালকি ও ঝুড়ি। এগুলোর দাম পড়বে ১০০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়াও পান-সুপারী, মাছডালা ২৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, টুথপিক ২০ থেকে ৫০ টাকা, তাজা গোলাপ ফুল প্রতি পিস ৫ থেকে ১০ টাকা, সাদা ফুল প্রতি পিস ৪ থেকে ৬ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ৫ থেকে ১০ টাকা।
*কনের শাড়ী
এ ছাড়া বিয়ের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কনের শাড়ি তো থাকছেই। বিয়েতে কনের জন্য লাল, সাদা, নীল, মেরুন, ভারী কাজের শিফন, জামদানি, বেনারসি বা জর্জেট শাড়ি থাকতে পারে। শাড়ির মধ্যে কমলা বা সবুজ রঙের শাড়িও রাখতে পারেন। বিয়ের শাড়ির সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি সুতি বা হাফ সিল্কের শাড়ি রাখতে হয়। স্বর্ণের গহনার পাশাপাশি শাড়ির সঙ্গে অ্যান্টিক লুক বিভিন্ন পাথরের তৈরি নেকলেস বা কানের দুলও দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে কনের বিয়ের বেনারসি, শিফন, জর্জেট ও জলপাই রঙের শাড়িসহ বিয়ের সব শাড়ির দাম পড়বে ৬ হাজার থেকে ৭০ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর জুতার দাম পড়বে ১ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।
কোথায় পাবেন
বিয়ের যাবতীয় উপকরণ কিনতে আপনাকে যেতে হবে রাজধানীর বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে লুবনান, বাংলার মেলা, ইনফিনিটি, ও টু, রঙ, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফট প্রভৃতি। এ ছাড়া যেতে পারেন রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, বেইলি স্টার, ফরচুন, টুইন টাওয়ার, মৌচাক, গুলশান, বনানী, হাতিরপুল, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, চাঁদনীচকসহ বিভিন্ন মার্কেটের শোরুমগুলোতে। তাই আর দেরি কেন! দিনক্ষণ ঠিক রেখে বাজেট করে বিয়ের বাজারে এখনই নেমে পড়ুন।
জুতা
বিয়ের অনুষ্ঠানে সাজসজ্জা ও পোশাকের পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ে যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হয়। আর তা হলো জুতা। বর-কনে উভয়ের জুতা হতে হবে অনুষ্ঠানের উপযোগী। অনেক জুতা আছে যা খুব কষ্ট করে পরতে হয়। বিয়েতে এমন জুতা পরিহার করাই উত্তম। এতে সহজেই পায়ে দাগ পড়ে যেতে পারে। কনে শাড়ি বা লেহেঙ্গার সাথে উঁচু হিল পরতে পারে। ফ্ল্যাট স্যান্ডেল শাড়ির সাথে মানানসই হবে না। আর বরের জন্য বিয়েতে পাঞ্জাবির সাথে নাগরা মানানসই হতে পারে। বউভাতে স্যুট প্যান্টের সাথে মানানসই জুতা। এক্ষেত্রে জুতার রং স্যুট-প্যান্টের বিপরীত রং হলে ভালো হয়। তবে যাই পড়া হোক না কেন, খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আরামদায়ক হয়।
Facebook Comments