banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 2660 বার পঠিত

 

ঘরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে পোড়ামাটির জিনিসপত্র

প্রাকৃতিক পরিবেশ আর জলবায়ুর সঙ্গে মানানসই ঘরদোর বানানোর রীতি একসময় দুনিয়াজুড়েই ঐতিহ্য ছিল। আধুনিক বাস্তুকলায় আমরা নানা কারণেই এসব থেকে দূরে সরে এসেছি। কিন্তু অনেক কিছু ছেড়ে এলেও সব তো আর ভোলা যায় না। তাই এখনো ঐতিহ্য হাতড়ে ফেরে নাগরিক মন। আর এভাবেই একসময় যা ছিল ঐতিহ্য, এখন তা ফিরে আসে হাল আমলের স্টাইল হয়ে। এখন কুমারপাড়ার সব মাটির তৈজসপত্রেরই যেন একটা নাগরিক সংস্করণ পাওয়া যায় রাজধানীসহ বড় বড় নগর-বন্দরে। আটপৌরে প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর নানা উপকরণ বিক্রি হচ্ছে পথের ধারের ফুটপাত, বিপণিবিতান আর বিশেষায়িত পটারি শপগুলোতে। কেউ চাইলেই ঘরের মেঝে থেকে শুরু করে দেয়াল পর্যন্ত সাজাতে পারেন মাটির জিনিস দিয়ে।

ফুলদানি

ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে ফুলদানি কে না পছন্দ করে। আর মাটির ফুলদানি তো ধ্রুপদি সুন্দর। মাটির ফুলদানি ছোট, মাঝারি ও বড়—সব আকারেরই পাওয়া যায়। কিছু ফুলদানিতে মাটির গায়ে খোদাই আর রিলিফের কাজ। হালকা আর গাঢ় রঙে পোড়ানো। আর কিছু মাটির ফুলদানিতে গাঢ় রঙের ওপর জরির কাজ করা। কেউ চাইলে কৃত্রিম ফুলও রাখতে পারেন। আবার পানি দিয়ে তাজা ফুলও রাখতে পারেন মাটির ফুলদানিতে। শোবার ঘর, বসার ঘর—যেকোনো স্থানেই রাখতে পারেন সুদৃশ্য মাটির ফুলদানি। ৬০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে নানা আকৃতির ভিন্ন ভিন্ন নকশার মাটির ফুলদানি।

টেরাকোটা

বাহারি নকশা করা পোড়ামাটির ফলক ঘরের দেয়ালে। আছে ফুল-লতা-পাতা, আছে গ্রামীণ জীবনের ছবি আঁকা। এ ছাড়া পাওয়া যায় বিমূর্ত নানা নকশার টেরাকোটাও। ছোট ছোট বিভিন্ন মাপের টেরাকোটা প্রস্তুত অবস্থায় পাওয়া যায় মৃিশল্পের দোকানে। এ ছাড়া এমন মৃিশল্পের দোকান বা শিল্পীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে নিজের পছন্দমতো বানিয়ে নিতে পারেন মনের মতো টেরাকোটাও। সে ক্ষেত্রে খরচ করতে হবে প্রতি বর্গফুট হিসাবে। বসার ঘরের দেয়ালের কোনো একটা পাশে এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত লাগিয়ে নিতে পারেন টানা একটা টেরাকোটার কাজ। আবার শোবার ঘরের পেছনের দেয়ালেও রাখতে পারেন টেরাকোটা।

শোপিস

এখন সুন্দর সুন্দর মাটির শোপিস পাওয়া যায়। টেপা পুতুল, ছোট হাতি, ঘোড়া থেকে শুরু করে লোক-মোটিফের পোড়ামাটির নানা কাজ কিনতে পাওয়া যায় দোকানগুলোতে। কেউ চাইলেই এগুলো দিয়ে সাজাতে পারেন আপনার শোকেস। অথবা বসার ঘরের কোনো একটি কোনায় ছোট একটি নিচু টেবিল রেখে সাজাতে পারেন মাটির শোপিসে। এগুলোর দাম ৪০-৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকার মধ্যেই।

images (4)

মাটির ব্যাংক

শুধু শখের বশে খুচরা পয়সা বা টাকা জমানোর জন্যই নয়, মাটির ব্যাংক দিয়ে সাজাতে পারেন ঘরও। বিভিন্ন ফল, ব্যাঙ, হাতি, ঘোড়াসহ নানা আকৃতির ব্যাংক পাওয়া যায় মাটির। এগুলোতেও ঘরের শোভা বাড়াতে পারেন আপনি। দাম পড়বে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।

দেয়াল সাজানো
অনেকেই ঘরে মাটির জিনিস রাখতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে বাড়িতে ছোট ছেলেমেয়ে থাকার কথা বলেন। তাঁরা চাইলেই কিন্তু দেয়ালে টাঙানোর উপযোগী মাটির নানান জিনিস কিনে সাজাতে পারেন ঘরের দেয়াল। পর পর তিনটি তিন সাইজের মাটির মাছ দিয়েই সাজানো যেতে পারে দেয়ালের একটা দিক। তার আগে শিশুর ছবি আঁকার প্যাস্টেল রঙে কয়টা ঢেউ এঁকে নিতে পারেন দেয়ালে। আর মাছের ওপরেই উড়িয়ে দিতে পারেন মাটির রঙিন প্রজাপতি। যেকোনো ঘরেই এগুলো ভালো লাগবে। দাম পড়বে ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
মাটির ঘণ্টি
বসার ঘরের সিলিংয়ে কিংবা প্যাসেজের দরজায় ঝুলিয়ে দিতে পারেন টুংটাং মাটির ঘণ্টি। দুই বা তিনটি ঘণ্টি অথবা অনেকগুলো ঘণ্টি দিয়ে একটি সুন্দর চাইমও। ঘণ্টিগুলো সুতা বা ফিতে দিয়ে বেঁধে নিজের মনের মতো করে যেমন সাজাতে পারেন, তেমনি কিনে নিতে পারেন নানান ডিজাইনে বানানো এমন চাইমও। মিষ্টি একটা টুংটাং আওয়াজের এই মাটির ঘণ্টির দাম ২০ টাকা থেকে ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে।
অ্যাশট্রে
ধূমপান না করাই ভালো। কেউ যদি এখনো এই অভ্যাস ছাড়তে না-ই পারেন, আর অতিথি হয়ে আসেন আপনার বাড়িতে, তাহলে কী করবেন। একটা কর্নার টেবিলে রেখে দিতে পারেন একটা মাটির অ্যাশট্রে। এই অ্যাশট্রেও কিন্তু এখন পাওয়া যায় নানান জিনিসের আকৃতিতে। আছে বাহারি নকশা করা মাটির অ্যাশট্রেও। এতে যেমন সৌন্দর্য বাড়বে, তেমনি হঠাত্ প্রয়োজনও মিটবে। ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায় মাটির অ্যাশট্রে।

বড় চাড়ি ছোট বাটি

মাটির পাত্রে স্বচ্ছ টলটলে পানি রেখে দিয়ে ঘর ঠান্ডা করার পদ্ধতি অনেক পুরোনো হলেও এখন তা আবার ফিরে এসেছে নগর জীবনেও। গরমের দিনে একটা বড় চাড়িতে পানি দিয়ে তা ঘরের মাঝখানে রেখে দিতে পারেন। আর তাতে ছোট ছোট ফুল ও ফুলের পাপড়ি ছেড়ে দিতে পারেন। ভাসাতে পারেন দু-একটা কাগজের নৌকাও। সন্ধ্যায় কয়েকটি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে দিলে ঘরের পরিবেশই পাল্টে যাবে।

আর ছোট ছোট মাটির বাটি অনেক কাজেই লাগে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বাটিতে রাখতে পারেন টুকিটাকি নানা জিনিস। বিভিন্ন আকৃতির একদম সাধারণ বা কিছুটা নকশা করা মাটির বাটির দাম ২০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।

ফুলের টব

টব তো মাটিরই হওয়া দরকার। এখন অনেক আকৃতির আর নানা নকশার টব পাওয়া যায়। আছে গোল ও চৌকো আকৃতির মাটির টবও। ওপরে-নিচে কিংবা সারা গাজুড়ে নকশা করা মাটির টব পাওয়া যায় বিভিন্ন রঙের। এসব টবে শুধু ফুল কিংবা পাতা বাহারই নয়, বারান্দাটা একটু বড় হলে লাগিয়ে দিতে পারেন কোনো একটা ফলের গাছও। ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন আপনার মনের মতো টব।

মাটির-হাঁড়ি-পাতিল

আয়না

দিনের মধ্যে সবারই একবার হলেও আয়নার সামনে যেতেই হয়। আর আয়নাতেও রাখতে পারেন মাটির কারুকাজের ছোঁয়া। গোল, চার কোনা—নানা আকৃতির আয়না পাওয়া যায় মাটির ফ্রেমে। খাবার ঘরের হাত ধোয়ার স্থানে কিংবা প্যাসেজেও রেখে দিতে পারেন একটা ছোট মাটির ফ্রেমের আয়না। এ ধরনের আয়নার দাম ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।

মাটির থালাবাসন

পুরো ঘরদোরই যদি মাটির জিনিসে সাজিয়ে ফেলেন এই গরমের দিনে, তাহলে আবার খাবার টেবিলটাই বা বাদ যাবে কেন! আপনি চাইলেই বাসায় রেখে দিতে পারেন একটা মাটির ডিনার সেট। বিশেষ দিনে অতিথি আপ্যায়নে ব্যবহার করতে পারেন এই মাটির থালা-বাসন-গ্লাস বা কাপ-পিরিচ।

মাটির জিনিস ব্যবহারে সতর্কতা ও যত্ন

মাটির জিনিস ব্যবহারে একটু তো সতর্ক থাকতেই হবে। মাটির চাড়ি বা ফুলদানিতে পানি রাখলে তা অবশ্যই নিয়মিত পালটাতে হবে। কারণ পানি নোংরা হলে তাতে মশা হতে পারে। আবার চাইলে ফুলদানির ভেতরে একটা পলিথিন দিয়ে তাতে পানি দিতে পারেন। এতে পাত্রে সামান্য পানি চুঁইয়ে পড়ার সুযোগ থাকলে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। আর মাটির জিনিসে ধুলোবালি একটু বেশিই চোখে পড়ে। তাই নিয়মিত শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে রাখতে হবে মাটির জিনিস। এসবে ভেজা কাপড় ব্যবহার না করাই ভালো।

যেখানে পাবেন

মাটির জিনিস এখন অনেক জায়গাতেই পাওয়া যায়। শিশু একাডেমির সামনে দোয়েল চত্বর, নিউ মার্কেট, ঢাকা কলেজের সামনে, ধানমন্ডি ৬ নম্বর সড়কের ফুটপাত, কলাবাগান, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটেও পাওয়া যায় মাটির জিনিস। তবে কিনতে হবে একটু দরদাম করে।

সবশেষে বলে রাখতে চাই একটা ছোট্ট টিপস। নানান ঘরোয়া আড্ডায়-অনুষ্ঠানে জ্বালিয়ে দিন মাটির কয়েকটি ছোট্ট প্রদীপ। এ ছাড়া ব্যবহার করতে পারেন মাটির মোমদানিও। আর শুধু নিজের ঘরের জন্যই নয় চাইলে বন্ধুকেও উপহার দিতে পারেন পোড়ামাটির এসব খাঁটি জিনিস।

Facebook Comments