banner

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 573 বার পঠিত

 

তিন নারী মুক্তিযোদ্ধার জীবন নিয়ে প্রামান্যচিত্র

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। ফারজানা ববির পরিচিত একজন গবেষক গবেষণা করছিলেন যুদ্ধাহত বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে। সেই গবেষণার আর্কাইভ তৈরির কাজটি করেন ফারজানা। এ কাজ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অনেক নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করেন। আবার বিভিন্ন বই ঘেঁটেও মুক্তিযুদ্ধে বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতিত হওয়ার অজানা তথ্যও জানতে পারেন।
‘আর্কাইভের কাজ করার পর থেকেই মনে হচ্ছিল এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। এভাবে শুরু করি বিষকাঁটার কাজ।’ বললেন বিষকাঁটা প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতা ফারজানা ববি। ঢাকার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে ৬ ডিসেম্বর দেখানো হয় বিষকাঁটা ছবিটি। নির্মাতা ফারজানা এর আগে বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন মেহেরজান চলচ্চিত্রে।

তিন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিতা মল্লিক, রমা চৌধুরী আর হালিমা খাতুনের বর্তমান জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরা হয়েছে বিষকাঁটায়। নিজের এলাকা খুলনা থেকেই কাজ শুরু করেন ফারজানা ববি। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন মুক্তিযুদ্ধের সময় সেখানকার নির্যাতিত নারীদের। ফারজানা বলেন, ‘খুলনার লেখক বাবর আলীর স্বাধীনতার দুর্জয় অভিযান বইটি থেকে জানতে পারি বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিতা মল্লিকের কথা। এরপর তাঁকে খুঁজতে থাকি। একসময় তাঁকে পেয়েও যাই। রূপসার পাথরঘাটার যে বাড়িতে নির্যাতিত হয়েছিলেন রঞ্জিতা সেই বাড়িতে হয় বিষকাঁটার পুরো শুটিং।’
যুদ্ধ শেষে স্থানীয়রা রঞ্জিতার জায়গাজমি দখল করে সেখান থেকে তাঁকে উচ্ছেদ করে। পুরো সমাজ থেকে আলাদা হয়ে ৪৩ বছর ধরে রঞ্জিতা অসম্মানের জীবন যাপন করলেও মাথা উঁচু করে সসম্মানে বেঁচে আছে সেই স্বাধীনতা বিরোধীরা।

ফারজানা জানান, বীর শব্দের যোগ নিয়ে আপত্তি আছে রমা চৌধুরীর। তিনি সব সময় বলতেন বীর হলে এত অপমান আর পাশবিক অত্যাচারের শিকার হতে হতো না তাঁদের।
এখন বিশেষ দিনগুলোয় বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে প্রদীপ প্রজ্বলন বা পুনর্বাসনের যে কথা বলা হয়, সেটাও একধরনের প্রহসন মনে হয় ফারজানার কাছে। কারণ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের দলিলে যে ২২ জন নারী মুক্তিযোদ্ধার কথা আছে তার মধ্যে মাত্র ছয়জন যুদ্ধাহত বীর নারীর নাম রয়েছে।
যে কারণে দেশের জন্য নিজের সম্মানটুকু হারিয়েও হালিমার মতো মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাঁদের। ফারাজনা বললেন, ‘অথচ মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশ নিয়ে পা হারিয়েছিলেন হালিমা। যুদ্ধে ক্ষত সৃষ্টি হয় তাঁর দুপায়ে। টাকার অভাবে পায়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। গত ৪৩ বছরে তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা উঠে এসেছে এই প্রামাণ্যচিত্রে।’

সূত্র- প্রথম আলো।

Facebook Comments