রাত পোহালেই ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর সে সময়কার রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি সেনারা।
কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক কোন জায়গায় আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল তা অনেকেরই অজানা। উদ্যানে গিয়েও জায়গাটি খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ সেই নির্দিষ্ট স্থানটির কোনো চিহ্ন বা স্মারক নেই।
অথচ ওই জায়গাটি চিহ্নিত করতে চার বছর আগে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। পাশাপাশি ওই অংশটিকে ‘স্বাধীনতা উদ্যান বা লিবার্টি স্কয়ার’ করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছিল।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে ২০০৯ সালের ২৫ জুন হাইকোর্টে রিট করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। ওই বছরের ৮ জুলাই আদালত রায় দেন এবং ২০১০ সালের জুলাই মাসে লিখিত রায় প্রকাশিত হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কে এম সফিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবকিছু করব করব করে ফেলা রাখা ঠিক না। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার জন্য আমরা এ কাজটি করতে চেয়েছিলাম। তা এখনো নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছায়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অবশ্য প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, আত্মসমর্পণের জায়গাটিসহ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাতটি ঐতিহাসিক স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো ফলক বা স্তম্ভ বসানো হয়নি। শিগগির এ কাজ শুরু হবে।
হাইকোর্টের ওই রায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে জায়গায় বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন সেই জায়গা এবং ১৬ ডিসেম্বর যে জায়গায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল সে জায়গাসহ ঐতিহাসিক সাতটি স্থান চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন।
সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, এখনো আদালতের ওই রায়ের বাস্তবায়ন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সাতটি স্থান চিহ্নিত করার কথা বললেও উদ্যানে তার কোনো চিহ্ন নেই। বঙ্গবন্ধু ঠিক কোন জায়গায় ভাষণ দিয়েছিলেন, কোন জায়গায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল তা বোঝার উপায় নেই।
তবে শিখা চিরন্তনের উত্তর পাশে শিশুপার্কের সীমানার কাছাকাছি একটি স্তম্ভ দেখা যায়। তাতে লেখা আছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ওই স্তম্ভটিও আছে অবহেলায়। শেওলা পড়ে গেছে, লেখাও অনেকটা মুছে গেছে। এর পশ্চিমে আরেকটি ছোট স্তম্ভ আছে। কিন্তু তাতে কী লেখা আছে, তা এখন উদ্ধার করা দুরূহ।
এ ছাড়া শিখা চিরন্তনের কিছু আগে আরেকটি স্তম্ভ আছে। তা হলো ‘বিজয় স্তম্ভ’। ১৯৯৫ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখনো শুধু ভিত্তিপ্রস্তরটিই আছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্মারকগুলো চিহ্নিত হবে কবে?
Facebook Comments