অপরাজিতাবিডি ডটকম : গৃহকর্তা কর্তৃক যৌন নির্যাতন ও মায়ের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়ার বদলে উল্টো মারধরের অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে গৃহকর্মী শিশু রুনা(১৪)। টানা চারদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে পরাজিত হল ছোট শিশুটি। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে সে মারা যায় বলে চমেক হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ ঘটনায় নগরীর সদরঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গৃহকর্তার যৌন নির্যাতন সইতে না পেরে অপমানে গত ২৯ নভেম্বর রুনা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চারদিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করার পর গতকাল সে মারা যায়।
এ ঘটনায় থানায় দায়ের করা এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রুনা আক্তার নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ হাতিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে। তার মা রোকেয়া আক্তার নগরীর কর্ণফুলী থানার জহির মাঝির কলোনী সৈন্যেরটেক এলাকায় থাকেন। প্রায় ৬ মাস আগে রোকেয়া তার মেয়েকে সদরঘাটস‘ আমিন আহমেদের বাসায় কাজ করতে দেন। বেতন ছিল মাসিক দেড় হাজার টাকা। প্রত্যেক মাসের শেষে রোকেয়া মেয়েকে দেখতে ওই বাসায় যেতেন।
মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, গত ২৯ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে রোকেয়া দেখতে গেলে রুনা তাকে জানায়, গৃহকর্তা আমিন তাকে প্রায়ই যৌন হয়রানি করে। সে আর ওই বাসায় কাজ করবে না। কিন্তুরোকেয়া তাকে আরও কয়েকমাস ওই বাসায় কাজ করার জন্য অনুরোধ করে। রুনা এতে রাজি না হওয়ায় রোকেয়া তাকে চড় দেন। এদিকে গৃহকর্তা আমিনও ক্ষুব্ধ হয়ে রুনাকে লাথি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে রুনা রান্নাঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় রুনার মা রোকেয়া ও গৃহকর্তা আমিন ভেজা কাপড় ও কম্বল চাপা দিয়ে আগুন নেভান। রোকেয়া মেয়ের আগুনে পোড়া শরীর দেখে সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। এরপর ওই বাসার অন্যান্য লোকজন রুনাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এদিকে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার পর ২৯ নভেম্বর রাতে রোকেয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। এতে আমিন আহমেদের বিরুদ্ধে রুনার সঙ্গে খারাপ আচরণ এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সদীপ কুমার দাশ বলেন, রুনা আক্তার নামে এক গৃহকর্মী গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। মঙ্গলবার সকালে সে মারা গেছে। এ ঘটনায় থানায় গৃহকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।