আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কেবল বর্জনই নয়, প্রতিহত করতে হবে।
২৫ অক্টোবরের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের বিল পাস না করলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হটিয়ে দেশ বাঁচাতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে মিলিটারি, পুলিশ, আনসারসহ প্রশাসনের সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দেন বিরোধীদলীয় নেতা।
রোববার বিকালে খুলনার সার্কিট হাউস মাঠে এক বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত সার্কিট হাউস মাঠের এই জনসভায় খুলনার ১১টি জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন, জনসভাটি এ সময় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে খালেদা জিয়া জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হন এবং বিকাল পৌনে ৫টায় ভাষণ শুরু করেন।
দীর্ঘ ৫০ মিনিটের বক্তব্যে খালেদা জিয়া সরকারের নানা ব্যর্থতা, অপশাসন, দুর্নীতি, আগামী নির্বাচন, আন্দোলনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। সরকারের একক নির্বাচনের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না। ২৫ অক্টোবরের পর আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন। জনগণকে ওই কর্মসূচিতে অংশ নিতে প্রস্তুত হতে হবে।
তিনি বলেন, সারাদেশে মানুষ জেগে উঠেছে। সরকার যদি সংসদে দ্রুত বিল নিয়ে না আসে তাহলে মানুষের যে স্ফুলিঙ্গ তিনি দেখেছেন, তা ঠেকানোর ক্ষমতা কারো থাকবে না।
ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা সরকারি কর্মকর্তাদের একদলীয় নির্বাচনে কাজ না করলে ‘বাড়ি পাঠানো’ হুমকি সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার বুঝতে পেরেছে, চুরি করে এখন কিছু করা যাবে না। তাই আওয়ামী লীগের একজন নেতা সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তাই সরকারকে বলবেন, ‘আপনাদের সময় শেষ হয়ে গেছে। বাড়ি পাঠানোর ক্ষমতা থাকবে না। আপনাদেরই বাড়ি পাঠানো হবে।’
সরকারি কর্মকর্তার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা তাদের অন্যায় নির্দেশ মানবেন না। এতে আপনাদের চাকরি চলে গেলে আমরা পুনর্বহাল করব।’
গণতন্ত্র রক্ষায় দেশে জনগণের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রশাসন এবং সর্বস্তরের পেশাজীবীদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘রাজপথে আবার দেখা হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে বেইমান, জুলুমবাজ সন্ত্রাসী সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’
তিনি অবিলম্বে সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি নয় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বললেও মূলত নির্বাচনমুখী বক্তব্যে দিয়ে তিনি খুলনাবাসীর জন্য ব্যাপক উন্নয়নের আশ্বাস দেন। বলেন, ক্ষমতা এলে দেশের উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা আছে। যা সময়মতো জনগণকে জানানো হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র করার বিপক্ষে নন তিনি। তবে রামপালের মতো জায়গায় বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দেয়া হবে না। সুইটেবল জায়গায় এটি করতে হবে। যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। রামপালে হলে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পশু থাকবে না, পাখি থাকবে না, পরিবেশ থাকবে না। মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দেয়া যাবে না। আন্দোলনকারীদের সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করা হবে। বিএনপি আন্দোলনের পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, এ সরকার কাউকে সম্মান দিতে জানে না। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কি আচরণ করেছে সবাই জানেন।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে গ্রামীণ ব্যাংককে ড. ইউনূসের কাছে ফিরিয়ে দিবেন।
এ সরকার গার্মেন্ট শিল্পকে ধ্বংস করে বেকার সমস্যা বাড়াচ্ছে। দারিদ্র্যবিমোচন এ সরকারের কাজ নয়। এ সরকারের কাজ বেকার সমস্যা বাড়ানো। তারা দারিদ্র্যবিমোচন করেছেন। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিএনপি সরকার কৃষকদের মূল্যায়ন করেছে। আগামীতে কৃষকদের সব রকম সহায়তা দেবে। কৃষি এবং শিল্পনগরী এই খুলনাকে আবার নতুনভাবে সাজাবে। খুলনাতে তারা ইপিজেডের কাজ করবেন। মংলা বন্দরকে আধুনিকায়ন করবেন। যা এ সরকার করতে পারেনি। এ কাজে নতুন বিপ্লব হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, ভবিষ্যতে আল্লাহ তাদের ক্ষমতায় নিলে নতুন আঙ্গিকে সরকার গঠন করবেন। তারা পরিবর্তন ও ঐক্যের রাজনীতি করবেন। সবাইকে নিয়ে। ভালো ভালো লোকদের সরকারে আনা হবে। যারা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার কথা ভাবেন। তার সরকারের কর্মকৌশল কী হবে তা ঠিক করা আছে।
বর্তমান সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, গতবার আওয়ামী লীগ ও তাদের কিছু লোক অপপ্রচার চালিয়েছিল। কিন্তু এবার তারা বহুগুণে দুর্নীতি করেছে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু করতে পারেনি। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক দাতা ও সাহায্য সংস্থাগুলো সরকারের দুর্নীতির কারণেই পদ্মা সেতু করতে পারেনি। তারা ব্যাংকিং খাত তছনছ করে ফেলেছে। সোনালী ব্যাংকের এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে ৫টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। যা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ৩০৯ বছর সময় লাগবে। যে ঋণের বোঝা পরবর্তী প্রজন্মকেও বহন করতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের এই যে দুর্নীতি তা দেখছে না দুদক। কারণ দলীয় লোকদের দুদকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে যে অস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে সেখানে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে।