banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 318 বার পঠিত

গত এক বছরে সাড়ে ৫হাজারেরও বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

 বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস’ উদ্যাপন কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ পালন করছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নবেম্বর ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। জাতিসংঘ দিবসটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরামসহ বিভিন্ন নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের নানা আয়োজনে দেশব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ এবং ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ পালিত হচ্ছে। নারী নির্যাতন বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই সঙ্গে দিবসটি পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০১৪ পালন করা হবে। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য এলিমিনেশন অব ভায়োলেন্স এ্যাগেইনস্ট উইমেন’ বা আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ২০১৪ থেকে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ শুরু হলো মঙ্গলবার। ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ২০১৪’ উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ যৌথ উদ্যোগে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সেই সঙ্গে নারী নির্যাতনবিরোধী পোস্টার, স্টিকার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে সমাজ কাঠামো, বিকশিত হচ্ছে সভ্যতা। পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে মানুষের জীবন যাত্রায় বরং নারী শব্দটিই যেন নির্যাতন ও শোষণের প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে। উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা অনুপাতে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইরানের নাম আছে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বপরিসংখ্যানে প্রথম সারিতে। এর মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশে ৯৫% পরিবার তাদের কন্যার বিয়েতে যৌতুক দিতে বাধ্য হন। যৌতুক দিলেও নারীরা নানা অজুহাতে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে উইকিপিডিয়াতে। পাকিস্তানের পরেই নারী নির্যাতনের দেশ হিসেবে উইকিপিডিয়াতে উঠে এসেছে বাংলাাদেশের নাম। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ৪ হাজার ৪শ’৭ জন নারী যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে বলে প্রকাশ করেছে উইকিপিডিয়া।

 

untitled-13_100063
২০১৩-২০১৪ এক বছরে বাংলাদেশে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ১৪টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তৈরি করা পরিসংখ্যানমতে, নির্যাতিত নারীদের মাত্র ২% আইনের আশ্রয় নেন। এ ছাড়া লোকলজ্জার ভয়ে নির্যাতনের কথা লুকিয়ে রাখার প্রবণতার কারণে গণমাধ্যমে অনেক খবরই প্রকাশ পায় না। প্রকৃত ঘটনার চিত্র এবং পরিসংখ্যান অনেক ভয়াবহ বলে মনে করেন মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ। ২০০৮ সালে যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২শ’ ৬৯টি। ২০১২ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৭শ’ ৭১টি। অর্থাৎ ২০০৮-২০১২ সালে নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ধর্ষণের হার বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নযয়ন অন্বেষণ’-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।

‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’-২০১৪ উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ‘যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও সকল প্রকার সহিংসতা মুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই’ আহ্বান জানিয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালির শুরুতে সভাপতির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তানিয়া হক। র‌্যালিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ মোট ৫০০ জন উপস্থিত ছিলেন। ‘নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে সমাজের বিবেক জাগ্রত হোক’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে র‌্যালি শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বটতলায় যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক পটগান পরিবেশন করে ‘রূপান্তর’-এর শিল্পীবৃন্দ। র‌্যালির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, নীলক্ষেত মোড়, নিউমার্কেট এলাকা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আজিমপুর মোড়, আজিমপুর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও গণমানুষের মাঝে নারী নির্যাতনবিরোধী পোস্টার, স্টিকার ও লিফলেট বিলি করা হয়।নারী নির্যাতন প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এটি অপরাজেয় বাংলা থেকে শুরু হয়ে টিএসসি ঘুরে পুনরায় অপরাজেয় বাংলায় গিয়ে শেষ হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও বয়সের শতাধিক নারী পুরুষ অংশ নেয়। 

এর আগে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক অনুষ্ঠানে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়। এতে উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপার্সন তানিয়া হক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আয়েশা খানম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে-শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা, পটগান পরিবেশন, ছাত্র-শিক্ষক মতবিনিময় ইত্যাদি।

Facebook Comments