নিজের জীবন ধারা পুরোপুরি পাল্টে চলে এসেছেন একটি সুন্দর বা পরিপাটি জীবনে। আর তিনিই হলেন ব্রিটিশ মডেল কারলি ওয়াটস।
কারলি ছিলেন অশোভন পোশাকের মডেল। পেশাগত কারণে তাকে পরতে হয়েছে শোভন-অশোভন পোশাক। এখন যেন তাকে (কারলি) অনেকে চিনতেই পারছেন না। কারণ তিনি এখন পরেন বোরকা। তার মনে এমন সুন্দর চিন্তাভাবনা এমনিতেই জাগেনি। তার উদয় ঘটেছে এক মুসলিমের সংস্পর্শে এসে। নাম মোহাম্মদ সালেহ।
কারলির বয়স প্রায় ২৪ বছর আর সালেহর প্রায় ২৫। কারলি ওয়াটস বলেন, আমার জীবনকে একেবারে পাল্টে দিয়েছে লাইফগার্ড সালেহ। আমি পুরোপুরি একজন মুসলিম নারী হতে চাই। কারণ এখন আমি মেনে চলি ইসলামি বিধিবিধান। বড় কথা হলো, জীবনের অর্থ কী আমাকে তা অনুধাবন করতে বা বুঝতে শিখিয়েছেন মোহাম্মদ সালেহ। সালেহর বাড়ি তিউনিসিয়ায়। গত এপ্রিল মাসে ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যে কারলি বেড়াতে যান তিউনিসিয়ায়। সেখানে গিয়ে কারলির পরিচয় হয় মোহাম্মদ সালেহ নামে এক যুবকের সাথে। উভয়ের মধ্যে কথাবার্তার একপর্যায়ে একজন যেন আরেকজনকে পছন্দ করেন মনের অজান্তেই। এমনকি বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নেন তারা। কারলি তার একমাত্র মেয়েসন্তান আলালাহকে নিয়ে মোহাম্মদের পরিবারের সাথে থাকবেন আগামী অক্টোবর থেকেই। সেখানে কারলি অবস্থান করবেন প্রায় ছয় মাস। তারা থাকবেন তিউনিসিয়ার মনাস্তির শহরে। এরপরই ধর্মান্তরিত হবেন কারলি। তারপর সালেহকে বিয়ে করার মনস্থির করেন তিনি।
কারলি বলেন, এত দিন আমি মডেলিং করেছি। বেশি সময় চলে গেছে নাইট কাবে। পরিচালনা করতে হয়েছে কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল জীবন। অনেক সময় নাচতেও হয়েছে সংক্ষিপ্ত পোশাকে। মনে হলো, ওই জীবন ভালো নয় মোটেই। কিন্তু সুশৃঙ্খল জীবনে ফিরে আসতে পেরেছি মোহাম্মদকে ভালোবাসার পর থেকেই। অর্থাৎ কারলি জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সালেহ মোহাম্মদের সাথেই।
কারলি আরো বলেন, আমি গুরুত্ব দিই সালেহর ধর্মবিশ্বাসকে। আর এ কারণেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ধর্মান্তরিত হওয়ার। একসময় মডেলিংয়ের অনেক কিছুই আমার প্রায় অজান্তে ছাপা হয়ে যেত চটকদার নানা ম্যাগাজিনে। কিন্তু এখন সেগুলো আর নয়। আমার দিন পাল্টে গেছে। তিনি এমনো বলেছেন, প্রায় দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে আমাকে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে তিউনিশিয়ায়। তার নজর এখন হিজাব, বোরকা প্রভৃতি শালীন পোশাকের প্রতি। কেননা শেখা হচ্ছে ইসলামি বিবিবিধান। কারলির পেশা সম্বন্ধে প্রথমেই সালেহ তার অভিভাবককে না জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। কেননা, প্রথমে তারা তা নাও বুঝতে পারেন। কারলি ওয়াটস নরফকের দিয়ারহাম অঞ্চলের একজন মডেল ছিলেন কিছু দিন আগেও।
গণমাধ্যমকে কারলি বলেন, আমার বান্ধবীরা বলেন, সে (কারলি) একজন উন্মাদ এবং একটা পর্যায়ে কারলির চার দিকে বান্ধবীরা ভিড় জমাবে, তা আশা করা যায় না মোটেই। একটি মেয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন, তা অবিশ্বাস্য হতে পারে অনেকের কাছে। এখন আমার জীবন অবিশ্বাস্য পরিবর্তনের দিকে, বলেছেন কারলি ওয়াটস। অবশ্য এ নিয়ে আমার মধ্যে নেই কোনো উৎকণ্ঠা। বিয়েবহির্ভূত মায়েদের কথা ও কাজের কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না তিউনিসিয়াতে। সেখানে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করে বিয়েবহির্ভূত জৈবিক কাজকেও। অবশ্য তা আইনেও দণ্ডনীয়। অনেক স্থানেই ঠাঁই নেই বিয়েবহির্ভূত মায়েদের। পুরুষরা অবিবাহিত মেয়েদের বাজে কাজে বাধ্য করলে ওই সব পুরুষকে পাঠানো হয় বন্দিশালায়। আর এটাই হলো পরিবারের বিশদ বিবরণ এবং এভাবে মাকে মূল্যায়ন করছেন কারলি।
কারলি বলেন, ‘এ সংস্কৃতিকে আমি যে ভালোবাসি এটি তার মূল্য।’ তিনি আরো বলেন, নারীদের দেখা হয় সম্মানের চোখে। তারা নিজেরা তাদের দেহ সম্বন্ধে বোঝে। নারীরা তাদের দেহকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যও মনে করে না। আমি যখন মোহাম্মদের সাথে থাকি তখন অনুভব করি তিনি তৃপ্ত, শান্ত এবং সুখী। আমি জানি, আমার জন্য তিনি একজন দয়ালু ও পরিবারপ্রেমিক লোক।
তিউনিসিয়ায় একসময় থাকতেন কারলি ওয়াটস। তার বাবা কাজ করতেন তেল কোম্পানিতে। তিউনিসিয়া ছিল তখন ফরাসি ঔপনিবেশের পাশ্চাত্য আরব দেশের একটি। এ দেশ পুনরায় সেই অবস্থায় ফিরে যেতে পারে বলে অনেকের ধারণা। তবে সততার সাথে বলতে হয়, এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে প্রায় ৩০ বছর। দুই বছরের বেশি আগে তিউনিসিয়ায় ধর্মনিরপেক্ষতা ও ইসলামের মধ্যে কমবেশি পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তার পরও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো বলেও মনে করেন অনেকে।