banner

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 346 বার পঠিত

ইয়াবার ভয়ংকর ছোবল!আসক্ত হচ্ছে স্কুল ছাত্রীরাও!

mojnubhaiblog_1316253447_1-_YABA_~1
অপরাজিতা ডেস্কঃ বি.বাড়িয়ায় মারণনেশা ইয়াবার আসক্তি দিন দিন বাড়ছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সীরা এ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। সাম্প্রতিককালে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের এ নেশায় আসক্ত হয়ে  পড়ার ঘটনায় অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। জেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি জেলা শহরের একটি গার্লস স্কুলের এক ছাত্রীর ব্যাগে ইয়াবা পাওয়ার পরই এ নিয়ে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়।
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশিষ্ট চিকিৎসক, জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি ডাক্তার মো: বজলুর রহমান গত ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্কুলছাত্রীদের ইয়াবা আসক্ত হওয়ার কথা উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গভ: মডেল গার্লস স্কুল ও আনন্দময়ী (নিতাই পাল) বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ব্যাগে ইয়াবা পাওয়া গেছে। ওই স্কুলের ছাত্রীরা ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়েছে। ওই সভায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা সিভিল সার্জন ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধনাঢ্য পরিবারের এক মেয়ে নিজের ঘর থেকে টাকা চুরি করে নিয়ে এসে ধরা পড়ে স্কুলে। তার স্কুলব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় অনেক টাকা। ওই ছাত্রী শিক্ষককের কাছে অকপটে স্বীকার করে, ওই টাকায় ইয়াবা কেনাই ছিল তার উদ্দেশ্য।
এইচএসসির প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী বেশ কয়েক দিন ধরে পড়ালেখায় অমনোযোগী। মা তাকে নিয়ে আসেন চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসকের জিজ্ঞাসার মুখে ওই ছাত্রী জানায়, সে ইয়াবার আসক্ত। ইয়াবা আসক্তির পর থেকেই সে অস্থিরতায় ভুগছে।
ওই দুই ছাত্রীর মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরো অনেক ছাত্রীই এখন ইয়াবায় আসক্ত। জেলার সুধীজনেরা এ নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা কমিটির ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ও সংশ্লিষ্ট দুই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মোশারফ হোসেনও ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এ ব্যাপারে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য ডা: বজলুর রহমান বলেন, ছাত্রীদের ইয়াবা আসক্তির বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। মূলত ছেলেবন্ধুদের প্ররোচনায় তারা ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবার আগে অভিভাবকদেরই সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।
ইয়াবা ট্যাবলেট সম্পর্কে তিনি বলেন, অন্যান্য মাদকের মতো কারো ইয়াবার আসক্তির বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি বুঝা যায় না। এ মাদক তিলে তিলে একজন মানুষকে শেষ করে দেয়। ইয়াবার টাকা জোগাড়ের জন্য খুন, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই করতেও আসক্তরা দ্বিধা করে না। ইয়াবা আসক্তিতে অকাল মৃত্যু অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গভ: মডেল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা পারভীন আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলের মেয়েদের ব্যাগে ইয়াবা পাওয়ার বিষয়টি একটা গুজব। তবে আমরা অনেক দিন ধরেই স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সন্দেহ করছিলাম। কিন্তু তাদের স্কুল ব্যাগ চেক করে মোবাইলফোন ছাড়া কিছু পাইনি। একটি মেয়ের কাছে বেশি টাকা পাওয়া গেলে অভিভাবককে ডেকে বুঝিয়ে দিই। তাকে বেশ কিছু দিন স্কুলে আসতে দেয়া হয়নি। তবে এখন সে পরীক্ষাও দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা ওঠায় আমরা সতর্ক আছি। এমনকি প্রতিনিয়তই মেয়েদের নজরদারি করা হচ্ছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই একদিন মেয়েদের স্কুলব্যাগ চেক করা হয়। কিন্তু তখনো কিছুই মেলেনি। মূলত মেয়েরা ফেসবুকের
দিকে আসক্ত হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী নেত্রী তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত বলেন, একটি মেয়ের স্কুলব্যাগ থেকে ইয়াবা পাওয়ার পর বিষয়টি এখানেই শেষ তা ভাবলে আমরা ভুল করব। স্কুলের মেয়েদের ইয়াবা আসক্তির বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। একজন জনপ্রতিনিধি তার মেয়ের বরাত দিয়ে এক ছাত্রীর স্কুলব্যাগে ইয়াবা পাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। ইয়াবা প্রতিরোধে কিভাবে সম্মিলিতভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করব।
এ দিকে গত চার মাসে পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় ১৩ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ প্রায় ৩০ জন মাদক বিক্রেতাকে আটক করেছে। 
Facebook Comments