banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 146 বার পঠিত

কিংবদন্তী নারী, ক্যাথেরিন দ্যা গ্রেট

অষ্টাদশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন। রাশিয়ান ক্রীতদাসদের পক্ষে করা তার কাজ আজও কিংবদন্তী। তিনি রাশিয়াকে ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে গড়ে তুলেছেন, সাহিত্যকে করেছেন পৃষ্ঠপোষকতা। বলছি ক্যাথেরিন দ্যা গ্রেট নামের এক কিংবদন্তী নারীর কথা। ১৭৬২ থেকে ১৭৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি রাশিয়াতে রাজত্ব করেছেন। রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সময় রাজত্ব করা এই নারী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন একজন সফল শাসক। তার শাসন আমলে রাশিয়া একদিকে হয়েছে শক্তিশালী, অপরদিকে শিক্ষা আর প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ।
বর্তমান পোল্যান্ডের ভন আনহাল্ট-জার্বস্ট অঞ্চলে ১৭২৯ সালের আগস্ট মাসে জন্ম এই মহীয়সী নারীর। জন্মের সময় তার নাম ছিল সফি ফ্রেড্রিক। ১৭৪৫ সালে তিনি তার নাম পরিবর্তন করে ক্যাথেরিন রাখেন এবং অর্থডক্স খ্রিষ্টান হন। এসময় তিনি রাশিয়ান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী পিটার দ্যা গ্রেটের নাতি গ্র্যান্ড ডিউক পিটারকে বিয়ে করেন। শুরুর দিকে রাশিয়ান আদালত ক্যাথেরিনকে সন্দেহের চোখে দেখতো। কারণ একটাই, সে রাশিয়ার মেয়ে নন। রাশিয়ার সংস্কৃতি আর উদার মনোভাবের অভাব ছিল তার আচরণে। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নিজেকে তৈরি করে ফেলেন রাশিয়ান হিসাবে। আর রাশিয়ান আদালতের সাথে গড়ে তোলেন সুসম্পর্ক। তার জন্ম পরিচয় পেছনে পড়ে যায়। কূটনৈতিক দক্ষতায় তিনি ছাড়িয়ে যান তার স্বামী সম্রাট তৃতীয় পিটারকে। তার স্বামী ছিলেন দুর্বল, শিশুসুলভ আর অপদার্থ ধরনের মানুষ। তাদের মধ্যে সম্পর্কও ছিল দুর্বল। কথিত আছে ক্যাথেরিন এই সময়ে রাশিয়ান আদালতের অনেক শীর্ষ ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শুরু হয় ক্যাথেরিন দ্যা গ্রেটের রাজত্ব। তার রাজত্বের সীমানা ছড়িয়ে পড়ে বেলারুশ, লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ড পর্যন্ত।
ক্যাথেরিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল গ্রেগরি পটেমকিন। যদিও তাদের মধ্যে একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল, তবুও তা রাজনৈতিক দিক দিয়েও ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পটেমকিনের সামরিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। তিনি রাশিয়ার দক্ষিণ অঞ্চলের একজন শক্তিশালী নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তার সাহায্যেই ক্যাথেরিন ক্রিমিয়ার জয় করেন। আর এই বিজয় রাশিয়াকে ইউরোপের নতুন পরাশক্তি হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
জীবনের প্রথম দিনগুলোতেই ক্যাথেরিন উদার মনোভাব নিয়ে বড় হয়ে ওঠে। মানবাধিকার এবং ন্যায় বিচারের পক্ষে ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠস্বর। বেশ কিছু আইন এবং নির্দেশনা তিনি তৈরি করেন, যা ছিল ঐতিহাসিক আইন। কিন্তু ১৭৬৮ সালের অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে তা আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। ক্যাথেরিনের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতির একটি খারাপ দিক আবির্ভূত হয়। সামরিক খাতে বেশি ব্যয় হওয়াতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয় রাশিয়াতে। ফলে সাধারণ মানুষ রাজ্য বিস্তারের কোন মানে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। ফলে ১৭৭৪-৭৫ সালের দিকে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিদ্রোহের জন্ম হয়। কিন্তু ক্যাথেরিন তার রাজনৈতিক দক্ষতা আর মহত্ব কাজে লাগিয়ে এসব বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হন। তিনি দেশের জনগণের ক্ষমতায়ন এবং অতিরিক্ত অধিকারের ব্যবস্থা করেন। ক্যাথেরিনকে রাশিয়ার অন্য শাসকদের চেয়ে আলাদা করা যায় তার শিক্ষা, শিল্প এবং সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা দেখে। তিনি অধ্যয়নের জন্য ব্যয় করেছেন জীবনের অধিকাংশ সময়। তার সবচেয়ে বড় অবদান হল— তিনিই প্রথম নারীদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে রাশিয়া পান ভলতেয়ার ও Diderot-এর মতো অসাধারণ কিছু সাহিত্যিক। ১৭৯৬ সালে মারা যান মানব ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই রাজনৈতিক নেতা।
 
সূত্র- দৈনিক ইত্তেফাক।
Facebook Comments