banner

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 254 বার পঠিত

রমজানে নারীর আমল

 

Ramadan-14

 

এ.কে.এম মহিউদ্দীন : রমজানের ১৩তম দিন শনিবার। মাগফেরাতের দশকের তিনটি দিবস অতিক্রান্ত হচ্ছে। রোজাগুলো যত প্রান্তরেখার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে তত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বেশি বেশি দোয়া, ইবাদত ও আমলের। আমাদের খোদাবন্দ তায়ালা অতিশয় দাতা ও দয়ালু, ক্ষমা মার্জনার সব থেকে নির্ভরযোগ্য স্থল। সুতরাং তার দিকে বান্দাকে অবশ্যই ঝুঁকতে হবে। এটা মানবকুলের কাছে প্রতিভাত বিষয় : ‘বিশ্বে যাহা কিছু চির কল্যাণকর/অর্ধেক তাহার আনিয়াছে নারী অর্ধেক তাহার নর।’ নারী এবং নর একজন আরেকজনের পরিপূরক। একাকী পুরুষের পক্ষে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। পাশাপাশি ইবাদতের ক্ষেত্রেও একইভাবে এটা প্রযোজ্য-উভয়কেই জবাবদিহিতা করতে হবে। তবে আজকের কলামে বিশেষভাবে নারীদের রমজানের কিছু আমল পৃথকভাবে এখানে আমরা উল্লেখ করতে চাই। ইসলামের কিছু চিন্তক সিয়াম সাধনার বিষয়ে পুরুষের কর্মব্যস্ততাজনিত কারণ দেখিয়ে বলছেন, রোজার দায়িত্ব-কর্তব্য ও আমলের দিক থেকে নারীদের বিষয়টি একটু আলাদা। কেননা পুরুষরা বাইরের নানা দিক সামাল দিতে গিয়ে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও রমজানের পরিপূর্ণ দাবি পূরণে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়। সাধারণত নারীদের বাইরের ব্যস্ততা কম থাকে। বাইরে বেরুলেও বেশি সময় বাইরে থাকতে হয় না। ঘরোয়া পরিবেশেই কাটে রোজার দিনগুলো। ফলে তাদের পক্ষে রমজানের পূর্ণ ফায়েজ ও বরকত লাভ করা অনেকাংশে সহজ।

 

যেহেতু নারীদের জন্য কিছুটা বাড়তি সুযোগ রয়েছে, তাই তাদের জন্য উচিত হলো রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে জীবনের সফলতার দ্বার উন্মোচন করা। রমজানের দিনগুলোর সদ্ব্যবহার করতে হলে রমজানের শুরুতেই রমজান কাটানোর একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার। কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেতে হলে নারীদের রমজান মাসে কিছু জিনিসের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

 

এক. ইবাদতের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য আনতে হবে। রমজানে প্রতিটি ইবাদতেই সত্তর গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রোজাই হচ্ছে রমজানের প্রধান ইবাদত। তবে রোজার চেয়ে নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। রোজা রাখার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে এটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু অনেকেই আছেন রোজা রাখেন কিন্তু নামাজ ঠিকমত পড়েন না, এটা খুবই অন্যায়। অন্য সময় তো নামাজ পড়বেনই, রমজানে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন। তা ছাড়া অন্যান্য ইবাদতের মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে হবে।

 

দুই. বাকসংযম করতে হবে। অধিক বাকপ্রবণ বলে নারীদের একটি বদনাম আছে। পরচর্চা, কুৎসা, নিরর্থক বিষয় নিয়ে মাতামাতি ইত্যাদি তাদের চিরায়ত অভ্যাস। কিন্তু এগুলো রোজার জন্য খুবই ক্ষতিকারক। না খেয়ে উপোস থাকা যেমন রোজার অংশ তেমনি বাকসংযমও। তাই রমজানে নারীদের জন্য উচিত হলো যথাসম্ভব বাকসংযম করা।

 

তিন. চলাফেরা ও চালচলনে শালীন হতে হবে। জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকা ও এ ধরনের যে কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন না হওয়া রোজার একটি অংশ। নারীদের খোলামেলা চালচলন তাদের নিজেদের রোজার পবিত্রতার জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি পর পুরুষের রোজা নষ্ট কিংবা হালকা করার জন্যও দায়ী। এ জন্য রমজানের দিনে নারীদের বাইরে বের হতে হলে শালীনতার সঙ্গে বের হওয়া উচিত।

 

চার. অধিকহারে দান-সদকা করা। কেননা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় রমজানে দান-সদকার ফজিলত অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে নারীদের রয়েছে দারুণ সুযোগ। সংসারের নিয়ন্তা হিসেবে তারা ইচ্ছে করলে এ মাসে গরিব-দুঃখীর দিকে সহানুভূতির হাত প্রসারিত করতে পারেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র বিশেষ কৃপা কুড়ানোর আশা করা যায়।

 

পাঁচ. সবার সঙ্গে মার্জিত আচরণ করা। রোজা রাখলে ক্ষুধা লাগবে, পিপাসা পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর প্রভাব যেন কোনোভাবেই আচরণে প্রকাশ না পায়। সাংসারিক কাজের ঝামেলার কারণে অনেক মহিলা রোজা রেখে মেজাজ খারাপ করে রাখেন।

 

ছয়. রোজা রেখে অহেতুক কাজ বর্জন করা উচিত। হাদিসে রোজাদারকে নিরর্থক কাজ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ করা হয়েছে। রোজা রেখে অনেকের দিন কাটতে চায় না এই অজুহাতে বিভিন্ন আজেবাজে কাজে সময় ব্যয় করেন। কিন্তু এটা সমীচীন নয়। কেননা রোজাদারের সারাদিন হবে ইবাদতের শামিল। বাহ্যিক কোনো ইবাদত না করলেও তার ধ্যান-ধারণা থাকবে ইবাদতের প্রতি। রোজার পবিত্রতা নষ্ট করে এমন কোনো কাজ যেন না হয়।
সাত. সংসারের শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতি খেয়াল করা। বছরের অন্যান্য সময় থেকে যেহেতু রমজানের রুটিন কিছুটা ভিন্ন সেজন্য সাংসারিক কাজকর্ম কিংবা পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তা নিরসন করার দায়িত্ব নারীদের ওপর। অন্যের সুবিধার কথা চিন্তা করে, নিজে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করে হলেও সংসারের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।

 

আট. বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। রমজান হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। এ মাসের সঙ্গে কোরআনের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব অনেক গুণ বেশি। যারা কোরআন পড়তে পারেন তারা বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করবেন। আর যারা কোরআন পড়তে পারেন না, তারা এ মাসে তা শিখে নিতে পারেন।

 

নয়. অপচয় রোধ করা। রমজানে যত খুশি খরচ কর, তাতে কোনো বাধা নেই, এ ধরনের একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত। এর ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেকটি পরিবারেই খরচের মাত্রা বেড়ে যায়, যা অপচয়ের গণ্ডি স্পর্শ করে। কিন্তু মূলত এ কথাটি ঠিক নয়। রমজান সংযমের মাস হিসেবে সব কিছুতেই সংযমতা আনতে হবে।
দশ. শেষ দশকে ইতিকাফ করা। ইতিকাফ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। নারীরাও ইচ্ছে করলে ইতিফাক করতে পারেন। তবে তা অন্দরমহলে পূর্ণ পর্দা বজায় রেখে। এর মাধ্যমে রমজানের দাবি যেমন ভালোভাবে আদায় করা যায় তেমনি মহিমান্বিত রাত শবে কদরের ফয়েজ ও বরকত লাভে ধন্য হওয়া যায়। তাই নারীদের জন্য এ সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। উৎস: দ্য.রি:

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/২৭ জুলাই ২০১৪ই.

Facebook Comments