হাবীবাহ্ নাসরীন, ঢাকা : ঈদের পোশাকটি একটু নজরকাড়া না হলে কি হয়? গরম ও বর্ষার কথা মাথায় রেখে এবার আরামের পোশাকটি তো কিনবেনই, সেইসঙ্গে খেয়াল রাখবেন, আপনার পছন্দের বসনটি যেন বেশ জমকালো হয়।
ঈদ বলে কথা! তবে পোশাকে আরামদায়ক ভাবটা চাইলে সাদামাটা পোশাকের কথাই সবার আগে মনে পড়ে। জমকালো এবং স্বস্তিদায়ক, এই দুই মিলিয়ে ঈদের পোশাক বাছাই করা একটু যেন কষ্টকর। ঈদ এবং বর্ষা ঋতুর কথা মাথায় রেখেই ঈদের পোশাকের ডিজাইন করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। বেছে নিয়েছেন একই সঙ্গে জমকালো আর স্বস্তিদায়ক কাপড়। যেমনটা বলছিলেন ফ্যাশন হাউস মুমু মারিয়ার কর্নধার এবং ফ্যাশন ডিজাইনার মারিয়া সুলতানা মুমু, ‘এবার ঈদ যেহেতু বর্ষায় তাই বর্ষার আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই ঈদের পোশাকগুলোর ডিজাইন করেছি। ব্রাইট তবে ক্যাটক্যাটে নয়, এমন সব কালার বেছে নিয়েছি। রাতে লাল, কালো, নীল, মেজেন্টা, কমলা এবং দিনে গোলাপি, বেগুনি, আকাশী, অ্যাশ রঙয়ের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কাপড় হিসেবে প্রাধান্য দিয়েছি শিফন, মসলিন, জর্জেট কাপড়কে। আর তাতে জমকালো ভাব ফুটিয়ে তুলতে করা হয়েছে জারদৌসির কাজ। কামিজের ক্ষেত্রে প্যাটার্ন হিসেবে প্রাধান্য দিয়েছি লং, এ লাইন, মেক্সি স্টাইলকে। ঈদের সকালে অনেকে একটু হালকা ধরনের পোশাক পরতে চান। তাদের জন্য হালকা রঙের সুতির পোশাকও রয়েছে। ঈদের সকালে কিংবা দিনেরবেলায় পরার জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের টপস পাওয়া যাবে। যারা শাড়ি পরতে ভালোবাসেন তাদের জন্য রয়েছে জমকালো কিছু শাড়ি। মুমু মারিয়ায় টপস এবং থ্রিপিস পাবেন ১৮০০-৭৫০০ টাকার মধ্যে। তবে একটু গর্জিয়াস পোশাক কিনতে চাইলে টাকার অংকটা আরেকটু বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে ৮০০০ টাকা থেকে শুরু। মুমু মারিয়ার শোরুম রয়েছে শুধু যমুনা ফিউচার পার্কেই।’ ফ্যাশন ডিজাইনাররা মনে করেন, যে পোশাকটা দেখতে ভালো লাগে, সেটা পরেও আরাম। তাই এ সময়ের পোশাকের রঙ হালকা হলেই দেখতে ভালো লাগবে। হালকা নীল, নীল, সাদা, গোলাপি, হালকা বেগুনী, আকাশী, শ্যাওলা, হালকা লাল, সবুজ, কমলা, হলুদ ও লেবু রঙের পোশাক তৈরি করেছেন তারা। শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজে কারুকাজ হিসেবে বেছে নেয়া হচ্ছে অ্যামব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক, ব্লক, হাতের কাজ, স্প্রে, হ্যান্ডপেইন্ট, টাইডাই প্রভৃতি। কাটিংয়েও আনা হয়েছে নতুনত্ব। সুতার কাজে মেশিন অ্যামব্রয়ডারি, কারচুপি, অ্যাপলিকের মাধ্যমে অধিক রঙ ব্যবহার করার ফলে প্রতিটি পোশাক হয়ে উঠেছে আধুনিক আঙ্গিকের।
নিজেই যখন ডিজাইনার : যারা চাচ্ছেন নিজের পোশাকটি নিজেই ডিজাইন করবেন অর্থাৎ কাপড় কিনে পছন্দমতো পোশাক বানিয়ে নেবেন, তারা পোশাকে জমকালো ভাব এবং ঈদের আমেজ দুটোই ধরে রাখতে বেছে নিতে পারেন মসলিন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, মটকা, সুতি, খাদি, শিফন, জর্জেট, কাতানের পোশাক। বর্ষার দিকটা মাথায় রেখে সিল্ক, শিফন ও জর্জেট কাপড়কে পছন্দের প্রথম দিকে রাখতে পারেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের তাঁতের কাপড়ও ব্যবহার করতে পারেন। আর তাতে মেশিন ও হ্যান্ড এমব্রয়ডারি ছাড়াও স্ক্রিন প্রিন্ট, পুঁতি, জরি, মেটাল, কাঠ ও পুঁতির কাজের ব্যবহারে পোশাকে বৈচিত্র আনতে পারেন। পাশাপাশি রাজশাহী সিল্ক বা হাফসিল্ক, সুতি জর্জেট বা বেক্সি জর্জেটের তৈরি পোশাকগুলোও বর্ষার দিনে আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা দেবে। তা ছাড়া সুতি অ্যান্ডি কাপড়ের তৈরি পোশাকেও বেশ অভিজাত দেখাবে আপনাকে। ঈদের রাতে জমকালো আয়োজনেও পরা যাবে এসব কাপড়ের পোশাক।
কাটছাঁট : কামিজের কাটিংয়ে গেল বছরের তুলনায় এ বছর খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। এ বছরও কামিজের দৈর্ঘ্যরে জায়গাটায় লংকামিজেরই একক আধিপত্য। চাইলে সেমি লং কামিজও বেছে নিতে পারেন। কামিজ, টপস, ব্লাউজে উঁচু গলার পাশাপাশি চার কোনা, পানপাতা ও ভি-আকৃতির গলাও বেশ চলছে। হাতার ক্ষেত্রে ফুলস্লিভ, থ্রি কোয়ার্টার, স্লিভলেস কিংবা ম্যাগি হাতা বেছে নিতে পারেন। সালোয়ারের ক্ষেত্রে ধুতি ও প্যান্ট-ধাঁচের সালোয়ার বেশ পছন্দ করছে সবাই। বিশেষ করে ওপরের দিকটা চাপা এবং নিচের দিকটা ছড়ানো পালাজ্জো ধাঁচের সালোয়ারের দিকেই ঝুঁকছেন তরুণীরা।
তবে আর দেরি কেন! হাঁটি হাঁটি করে সময় কিন্তু ঠিকই চলে যাচ্ছে। বাজার ঘুরে পছন্দের পোশাকটি বাছাই করতে হলে হাতে একটু সময় নিয়েই কেনাকাটা সেরে ফেলতে হবে। ঈদে একটু জমকালো আর আরামদায়ক পোশাক চাই তো? আপনি চাইলে সেটা খুব সম্ভব। বাজার ঘুরে মনের মতো পোশাকটি কিনে ফেলুন। এই ঈদে আপনার পছন্দের পোশাকটিই উঠুক আপনার গায়ে।