banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 894 বার পঠিত

 

দেখে এলাম এভারেস্ট

উদয় হাকিম: মাউন্ট এভারেস্ট। দ্য টপ অব দি ওয়ার্ল্ড। পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ। এভারেস্ট দেখার ইচ্ছে কার না আছে। ছিল আমারও। দুর্নিবার সে ইচ্ছে। অবশেষে পূরণ হলো এভারেস্ট দেখার সাধ! তবে সামিট করে নয়, পাঁয়ে হেঁটে নয়। দেখলাম বিমান থেকে।

দেখলাম আলোর মাঝে অপূর্ব সে আলো। মাথা উঁচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে। যেন সারা পৃথিবীর ভার বয়ে তবু অবিচল। অম্লান শুভ্র বসনে, বীরের বেশে। যেন নিরন্তর চির উন্নত শির।

স্থানীয় সময় সকাল ৭টা। পুব আকাশে সূর্য। চরাচর ভেসে যাচ্ছে উজ্জ্বল আলোয়। পুরো উত্তর পাশ জুড়ে শত শত পাহাড়ের চূড়া। বোঝার উপায় নেই কোনটা এভারেস্ট! তার পরও এভারেস্টের সমান উচ্চতায় আর তো কিছুই নেই। এভারেস্ট দাঁড়িয়ে স্বমহিমায়। যখন একটা এভারেস্ট থাকে, তার চারপাশের অন্য সবকিছু হয়ে যায় ম্লান।

দেখলাম ত্রিকোণাকৃতির চূড়া। অন্য সবকিছুর চেয়ে আলাদা। ভয়াল ধু-ধু বিন্দু। হালকা বাতাস। মেঘেরা ভেসে বেড়ায় অনেকটা দূর দিয়ে। এত উঁচু বন্ধুর পর্বতে মানুষ কীভাবে ওঠে! সুউচ্চ এই চূড়ায় আরোহণ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২০০-এরও বেশি মানুষ। তার পরও থেমে নেই এভারেস্ট জয়ের বাসনা। এভারেস্টের কাছে গেলে মনে হয়, পুরো পৃথিবীটাই বোধহয় এরকম- শুধু বরফের আস্তর, বরফের পাহাড়, বরফের রাজত্ব, কোথাও নেই এতটুকু সমতল।

এভারেস্টের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার। এভারেস্টে ওঠার সর্বশেষ বেস ক্যাম্প সম্ভবত ৭ হাজার ৯০৬ মিটার উঁচুতে। এ জায়গাটাকে মনে হলো যেন বরফের নদী। সম্ভবত বরফ গলতে শুরু করলে এখানে মানুষের দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। এজন্য মে মাসের শেষ সপ্তাহ শুরু হওয়ার আগেই সামিট সিজন শেষ হয়ে যায়।

এভারেস্টের ওপরটা দেখলে মনে হয় না, এত কঠিন এখানে ওঠা। কাছ থেকে মনে হয়, সহজেই ওঠা সম্ভব। কিন্তু বরফের ওপর দাঁড়ানো অত সহজ নয়। মসৃণ চকচকে দেখা গেলেও আদতে ওই স্থানটি অতি ভয়ানক। যারা হেঁটে এভারেস্টে ওঠেন তারা কিন্তু বেশিক্ষণ সেখানে থাকেন না। শুধু ছবি তোলা, পতাকা প্রদর্শন এবং অতি সংক্ষিপ্ত কিছু স্মৃতিচিহ্ন বা স্মারক রাখা ছাড়া আর সময় নেই। কারণ, ওখানে সময় নষ্ট করা মানেই মৃত্যুকে ডেকে আনা।

আগেরবার নেপাল গিয়েও এভারেস্ট দেখতে পারিনি। তাই এবার মিস করতে চাইনি। আগের দিন টিকিট কনফার্ম করেছি। টিকিট ১৯৪ ডলার। কাঠমান্ডুর তিব্বত হোটেল থেকে গাড়িতে নিয়ে যাবে আর দিয়ে যাবে। সব মিলিয়ে ২১২ ডলারের প্যাকেজ।

ভোর সাড়ে ৫টায় গাড়ি এল হোটেলে। তৈরি হয়ে ছিলাম আগেই। আধা ঘণ্টায় এয়ারপোর্টে চলে গেলাম। ইয়েটি এয়ারলাইন্সের বোর্ডিং কার্ড নিলাম। ২ নম্বর গেটে গিয়ে অপেক্ষা। কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের গাবতলী বাস টার্মিনালের চেয়েও দুরবস্থা। ভাঙা একটা বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করলাম। এখানে শুধু এভারেস্ট দেখানোর জন্য বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স কাজ করছে। অফ সিজনেও যাত্রীসংখ্যা নেহাত কম নয়। পাঁচ মিনিট পরপরই একটা করে ছোট বিমান টেক অফ করছে। ঠিক সাড়ে ৬টায় ডাক এল আমাদের।

নড়বড়ে সিঁড়ি দিয়ে বিমানের ভেতরে ঢুকলাম। বিমানবালা নিচু করে ঢুকতে বললেন, না হলে মাথা ঠুকে যাবে ওপরে। বাঁ পাশের সিঙ্গেল সিট আমার। খুব ভালো পজিশন। ডান পাশে দুজন করে বসল। সব মিলিয়ে ১৬-১৭ জন যাত্রী। বিমানবালা দেখতে সুন্দর, ইংরেজি উচ্চারণও খুব ভালো। তবে কথা বলে খুব নিচু স্বরে। কান পর্যন্ত কথা পৌঁছোয় না।

ঘরঘর শব্দ করে বিমান উঠল রানওয়েতে। সিগন্যাল ওকে। ছোট্ট, হালকা বিমান। সামান্য দৌড়েই উড়ে গেল আকাশে। মনে হচ্ছিল, ফড়িংয়ের পিঠে চড়েছি। আমার হাইট ফোবিয়া আছে। কিন্তু ফড়িং বিমানে কোনো ভয় লাগছে না। মনে হচ্ছে বিমানটি আমিই চালাচ্ছি। আরো যদি সুযোগ পেতাম!

নিচে কাঠমান্ডু শহর। উত্তর পাশে বিশাল কালো পাহাড়, যেটি দাঁড়িয়ে আছে বিমানবন্দরকে আড়াল করে। কিন্তু কালো পাহাড়ের পেছনেই যে বি

Facebook Comments