মাইনুল হাসান জনি, রাজশাহী : ‘শাহীন মঞ্জিল’। রাজশাহী নগরীর উপশহর হাউজিং এস্টেটের ১ নম্বর সেক্টরের ৬৪৫ নম্বর বাড়ি। বাড়ির চারতলায় ছাদজুড়ে বিশাল বাহারি বাগান। আর সেই বাগান গড়ে জাতীয় পদক পেয়েছেন সালেহা খন্দকার।
গত ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট আর ৩০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।
জাতীয় পুরস্কারে গর্বিত সালেহা খন্দকার এখন রাজশাহীর গর্ব ও প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।
সালেহা খন্দকার তার এ সাফল্যে মরহুম স্বামীর অনুপ্রেরণা ও একমাত্র ছেলে শাহীনের সহযোগিতার কথা স্বীকার করেন। ছেলে শাহীন সালেহউদ্দিন কৃষি কর্মকর্তা। গাছপাগল। গাছ নিয়েই থাকেন। ছুটি পেলে বাসায় এসে আগেই উঠে পড়েন ছাদে। নীবিড় পরিচর্যা শুরু করেন নিজেও। সালেহা খন্দকার জানালেন, তার এ সাফল্যে ছেলের অবদান সবচেয়ে বেশি।
জাতীয় পদকে ভূষিত সালেহা খন্দকার দ্য রিপোর্টকে জানান, বাজারে বিষমুক্ত টাটকা ফলমুল ও শাক-সবজির অভাব। এ অভাবের তাড়নায় বিষমুক্ত ও টাটকা শাক-সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে দুই হাজার বর্গফুট ছাদে ফলমূল ও শাক-সবজির বাগান গড়ে তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী জুবাইদ আলী কৃষিবিদ ছিলেন। বগুড়ার শেরপুরে আমাদের ছোট খামারবাড়ি আছে। সেখানেও সব ধরনের ফলমূলের গাছ আছে।’
কথা বলতে বলতে এক সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সালেহা খন্দকার।
তিনি বলেন, ‘সে (আমার স্বামী) আজ বেঁচে নেই। পুরস্কারটি পাওয়ার পরে তাকে বেশি মনে পড়ছে। কারণ তিনি বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।’
শাহীন মঞ্জিল নামের বাড়িটির খোলা আকাশে ছাদের উপর এখন যেন অন্য এক সবুজ সংগ্রহশালা। আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, লেবু, জাম্বুরা, কুল, জলপাই, ডালিম, শরিফা, বেল, সফেদা, আমলকি, কমলালেবু, আমড়া, জাম, কদবেল, আঁশ ফল, কামরাঙা, মালটা, লটকন, চালতা, করমচা, আরবরই, গোলাপজাম ও জামরুল গাছ রয়েছে। ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট টবে সাজানো রয়েছে পাথরকুচি, সাজনা, শতমূলী, তেঁতুল, থানকুনি, কালোমেঘ, ঘৃতকুমারী, বাসক, তুলসি ও আমলকিসহ নানান জাতের ওষুধি গাছ আর ফুল যেন উঁকি দেয় সবুজের মাঝে।
গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, এস্টার, বেলি, বাগানবিলাস, জারবেরা, কাঠগোলাপ, আলকানন্দ, কামিনী, থুজা, ড্রাসিনা, এরিকাপাম, মানিপ্ল্যান্ট, মালফুজিয়া, ল্যান্টানা, পয়েনসেটিয়া, চেরি, হাইব্রিড জবা, মুসান্ডা, রাধাচূড়া, মর্নিং গ্লোরি, কিরীটিনী, মে ফ্লাওয়ার ও জেফির লিলি। সংগ্রহশালার মধ্যে আরও রয়েছে- ছাতিম, বৈইচি, শেওড়া, অশথ, বট, পাইকর, লাইকড় ও জিলাপি ইত্যাদি বনসাই।
এ ছাড়া কদম, নিম, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, ইপিল-ইপিল, কাঞ্চন, দেবদারু, বকুল, মহুয়া, জাম ও শিমুল রয়েছে একই বাগানে। সেখানে আরো রয়েছে টমেটো, বেগুন, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়াপাতা, লাউ, পুঁইশাক, গিমা কলমী, পালংশাক, শিম, চালকুমড়া, করলা, পটল ও মিষ্টি কুমড়াসহ সব ধরনের সবজি, যা পরিবারের পুষ্টি যোগান দেয়। আর যেটি দেখলে মণ-প্রাণ জুড়িয়ে যায় তা হলো বহুজাতের ক্যাসটাস। কিন্নরী, জ্যাট্রফা, সাইকাস, ড্রাগন ফ্রুট ও জাবেটিকাবাসহ অন্য ক্যাসটাসের জাত রয়েছে ছোট ছোট টবে।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল আমিন দ্য রিপোর্ট জানান, ছাদে বাগান সৃজন পরিশ্রমসাপেক্ষ। সালেহা এই পরিশ্রমসাপেক্ষ কাজটি করে নজির স্থাপন করেছেন। তিনি বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা করেছেন, যত্ন করেছেন, সাফল্য পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘কৃষি দফতর এমন বাগান গড়ে তুলতে উৎসাহ দিয়ে আসছে। পরিবেশ সুরক্ষায় সবুজ বাগান সৃজনের বিকল্প নেই।’
বাড়ির ছাদে ছাদে এমন বাগান সৃজনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।সূত্র: দ্য রিপোর্ট
অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/২২ জুন ২০১৪ই.