banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 243 বার পঠিত

 

ঘাতক

অপরাজিতাবিডি ডটকম : তাহলে তোমার ছবিটা প্রোফাইলে দিয়ে দাও না, দেখি

ওরে বাপরে! ছবি দিয়ে সবার কাছে ধরা পড়ে যাই আরকি‍! তাছাড়া আব্বু একটু বেশি ধার্মীক ত যদি জানতে পারেন তাহলে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে বিয়ে দিয়ে দিবেন আজই।

না না তা কি করে হয়? তাহলে চলনা আজই কোথাও দেখা করি? তোমাকে দেখে উহুঁ ঠিক বললে না। প্রথম দেখা  —- জেনী থামিয়ে দিল, লজ্জা পেয়ে । বললো

আচ্ছা তুমি না মেডিক্যাল কলেজ  স্টুডেন্ট? তুমি কি ইচ্ছা করলেই বের হতে পারবে আজ? তা ছাড়া আমারও তো ক্লাস আছে।

না কালতো ছুটির দিন চলো কাল। আমাদের দেখা হয়ে যাক!

জেনী ক বলবে ইতস্তত: করতে লাগলো মনে মনে ভাবলো। তাইতো এভাবে লুকোচুরি করে প্রেম করার চাইতে এর অবসান হওয়া ভালো। তাছাড়া আব্বুতো একজন ডাক্তার পাত্রই খুচছেন। দেখা সাক্ষাত তাড়াতাড়ি হয়ে গেলে আব্বুর কাছে আর গোপন করবনা। সময় সযোগ বুঝে বলা যাবে। রাজী হয়ে গেল।

ঠিক আছে, বল কবে কোথায় কখন দেখা হবে? কিন্তু আমার খুব ভয় লাগছে।! হ্যা আমরা অভিসারে বের হবো। জেনীকে সব পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিল হাসান। তারা ড্রেসকোডও ঠিক করতে ভুলল না যাতে পরস্পর চিনতে পারে।

হাসান আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নিচ্ছে। মেসম্যাট জামাল জিজ্ঞেস করল

কিরে! কোনো অভিসারে যাচ্ছিস মনে হচ্ছে? আজ দোকানে যাবি না?

হাসান মুচকি হেসে শিস দিতে লাগলো । বলল

হ্যা ঠিক ধরেছিস অভিসারে বেরুচ্ছি। মালিকের কাছে ছুটি নিয়েছি। আজ অন্য একজন কর্মচারী থাকবে।

তা কয় নম্বরের কাছে জাচ্ছিস?

এইটা তিন নম্বর। জামাল ওর কথা শুনে আতকে উঠল। বললো

দেখ! তোর এই লম্পট্য বেশীবাড়াবাড়ী মনে হচ্ছে। গুনাহ হইব, গুনাহ! পাপ পাপ। দেখ পাপ কিন্তু বাপকেও ছাড়ে না। এক দোকান কর্মচারী হয়ে তুই কার সর্বনাশ করতে যাচ্ছিস।

রাখ তো গুনাহ আর মুরুব্বীগিরী। আমি যাই বলে মোবাইল ফোনটা সাথে নিয়ে বেরিয়ে গেছে।

মুচকি হেসে হাসান বিদায় নিল; ওর মধ্যে যেন ফূর্তির শয়তান ভর করেছে।

ওদিকে জেনীকে ওর বাবা একটু চঞ্চল অস্থিরভাবে কাজ করতে দেখে অবাক হয়। জিজ্ঞেস করেন

জেনী মা তুমি কী কোথাও যাবে?

কিছুক্ষণ ইতস্তত করে আমতা আমতা করে বললো

হ্যা না এই আর কী হঠাৎ এক বন্ধু দাওয়াত করল; তাই ওখানে যাচ্ছি।

জেনী কখনো বাবা কাছে মিথ্যা বলেনি। ওর মায়ের সাথে বাবার ডিভোর্স হয়েছে। ওর ছোটবেলাতেই । সেই থেকে বাবা ওকে মা বাবা দুজনের আদরে মানুষ করেছেন। বাবা ওর বন্ধুর মতো কলেজ ভার্সিটিতে যা ঘটত, সব কিছু বাবার সাথে শেয়ার করতো। জীবনের এতটাকাল পর আজই প্রথম বাবার সাথে তার লুকুচুরি। মিথ্যার আশ্রয় নিল। অনুশোচনায় বিবেকের পরাজয়ে সে যেন নিজেকে পাকে নামিয়ে নিল।

আচ্ছা যাও কিন্তু এত সাজগোজ করে বাইরে যাওয়া ঠিক না। আজকাল যেভাবে ছিনতাই, হাইজ্যাক বেড়েছে; চিন্ত হয় জানতো। তাড়াতাড়ি ফিরতে চেষ্টা করো।

হ্যা বাবা তুমি খেয়ে নিও আমি খেয়ে আসবো।

ধানমন্ডি লেকের পাড়ে নির্দিষ্ট একটি রেস্টুরেন্টে ওদের দেখা হল। জেনীর কেমন যেন বুক দুরুদুরু করতে লাগলো। ওদের ডেসকোড চিহিৃত করল দুজনকে। এই প্রথম দেখা দুজনের ।একজন দেখে আশাহত, আরেকজন প্রত্যাশার চাইতে বেশি পাওয়ার আনন্দে আপ্লুত। জেনীকে মৃয়মান. নিশ্চুপ দেখে – ধুর্ত চাহনির হাসান নিরবতা ভঙ্গ করল, বললো-

তুমি যে এত সুন্দর আমি কল্পনাই করিনি। দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি।

বা তাহলে এতদিন যে ভালোবাসার কথা শোনালে সেগুলো কি মেকী?

না না না তো কেন হবে মানে—

থাক মানে মানে করত হবে না। আমি জীবনে প্রথম তোমাকে ভালোবাসার কথা বলেছি; বাস  তোমাকেই ভালোবাসবো মেয়েরা যাকে মনপ্রাণ দিয়েই ভালোবাসে সে যেমনি হোক। সত্যি? আচ্ছা এখানে কেমন যেন সবাই দেখছে চল আমরা ভিতরে যাই।

জেনী এ কথাতে কেমন ভয় পেয়ে গিয়ে বললো

না না ভিতের কেন? এখানেই বেশ ভালো

বলছিলাম কি; তুমিত কথায় বলতে পারছা না ভিতরে একটা রুম আছে স্বাচ্ছন্দে কথা বলতে পারবে। আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না?

না তা হবে কেনো; ঠিক আছে চল। জেনীর অনিচ্ছা স্বত্তেও ভিতরে গেল।

কিছুক্ষণ পর বেয়ারা নাস্তা দিতে এসে রুম বন্ধ করে , হাসানের পূর্ব পরিকল্পনা মতো আর ডিস্টার্ব করেনি।

সেদিন জেনী রাতে অন্ধকারে বাড়ি ফিরে বাবার সামেন মুখ দেখাতে পারবেনা বলে দরজা বন্ধ করে পড়েছিল। পরদিন সাকেল ঘুম থেকে উঠার পর মাথাটা কেমন ভাড়ী ভাড়ী লাগছে; অন্যমনস্ক চুপচাপ জেনী বাইরে গেল। শুধু বুয়াকে বলে গেল।

সাইবার ক্যাফে ঢুকতেই আজ কেমন অপরিচিত লাগছে সবাইকে। রিসিপশনে যে ছেলেটি থাকে সে অনেক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ দৌড়ে ভিতরে গেল। ওর কিছু বোঝার আগেই কর্মচারীদের মধ্যে ফিস ফিস গুঞ্জন। জেনী খেয়াল করলো না।

সে একটি সেটের সামনে বসলো। অন্যন্য সেটের সামনে যারা বসেছে সবাই কেমন যেন কৌতুহল নিয়ে দেখছে ওকে। এটা খেয়াল করে জেনীর খুব অস্বস্তি হতে লাগলো।

এমনিতেই সে খুব বিধ্বস্ত। নিজেকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে। তার উপর সবার কৌতুহলের কারণ বুঝতে না পেরে আরও খারাপ লাগছে।

চলে যাবে? না ওই লম্পটের একটা চূড়ান্ত ব্যবস্থা না করে যাব না।

‌ ‘নেটে’ কানেকশন দিয়েই ও আতকে উঠল। যা দেখল তাতে সে আহত, ক্ষত-বিক্ষত; যেন শিকারীর গুলিতে আহত পাখীর মতো কাতরাচ্ছে। ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। চোখ ফেটে অশ্রুধারা ঝরছে।

সেই পাষণ্ড লম্পট গতকালে ঘটে যাওয়া সব কিছু নেটে ছেড়ে দিয়েছে। নিজেকে আড়াল করে । দু’হাতের তালুতে মাথা চেপে ধরলো। পৃথিবীটা দুলছে মনে হয় পড়ে যাবে ভূমিকম্প ভল্কানোর ও অগ্নিগিরি ওকে ডুবিয়ে দিচ্ছে। না পড়ে গেল চলবে না। এখান থেকে বের হতে হবে। কোনরকম শরীরটা সোজা করে একটা নাম, ই-মেইল এড্রেস ফেসুবকের নাম সব দিয়ে একটা চিরকুট লিখে আর কিছু টাকা দিয়ে ম্যানেজার জাহিদ ভাইকে দিয়ে বললো-

যদি পারেন এই লম্পটের একটা শাস্তি ব্যবস্থা করেন, তাহলে আপনার এই বোন আপনার কাছে চীরঋণী হয়ে থাকবে।

বোন আমি বুছেছি তোমার অবস্থা। তোমার এই ভাই তোমার অনুরোধ রাখার চেষ্ট সাধ্যমতো করবে।

সবার অলক্ষ্যে কখন ও বাড়ি থেকে বেরিয়েছে কেউ টের পাযনি। টেবিলে পড়ে থাকা চিঠিটা আলি মিয়া সালাম সাহেবের হাতে দিল, তিনি পড়লেন-

আব্বু

আমায় ক্ষমা কর। আজ যদি তোমার আদর্শ মতো চলতাম। তাহলে হয়ত আমার আজকের পরিণতি হতো না। আমি এক লম্পটের অধ:পতের শিকার। আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু এই জীবনের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, তার কাছে জবাবদিহির জন্য জীবনটার কোন ক্ষতি করার সাহস পেলাম না। আমার আত্মহত্যা করা চলবে না। আমার মত অবস্থা যাদের, তারা কেউ যেন আত্মহত্যা না করে। সমাজকে কলুষমুক্ত করতে আমাদের বেচে থাকতে হবে। সেই লম্পটের শাস্তির ব্যবস্থা যেদিন করতে পারবো, সেদিন তোমার কাছে ফিরে আসব। ততদিন তুমি ভালো থেকো বাবা! আর আমার জন্য দোয়া করে যাও

তোমার হতভাগী

জেনী’।

 

(শেষ…..)

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/১৩ মে ২০১৪.

Facebook Comments