banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 260 বার পঠিত

ঘাতক

facebook-front_179_2232542b-400x250অপরাজিতাবিডি ডটকম : আগামীকাল অ্যাসা্ইনমেন্টের পেপারস জমা দিতে হবে। এরপর প্রেজেন্টশন এর ঝামেলা গ্রুপের সবাইকে কল করে পাওয়া যাচ্ছে না। এতগুলো চিন্তা মাথার মধ্যে যেন কাকের বাসার মতো জট পাকিয়ে যাচ্ছে। মাথা বো বো করছে। এক কাপ গরম গরম কফি হলে মন্দ হতো না! আক ঝাটকায় আজটগুলো খুলে যেত মেজিকের মতো। মাকে বলি না থাক, চিন্তা ঘুরিয়ে নিল। নিজেই কফি মেকারে বানিয়ে আনল কফি । পিসির সামনে বসলো জুতসই করে।

হ্যা পেপারস রেডি করার আগে ফেসবুকের মাঠটা একটু ঘরেই আসিনা কেন! ওপেন করে দেখি চেটিং এর মাঠে কে কে খেলছে জেনি আর রুমা থাকলে এক হাত বকা ঝকা করা যাবে। গত পরশুদিনের আগের দিন থেকে কল করেও কাউকে পাচ্ছি না কেন?

রিফাত ফেসবুক ওপেন করেই আতকে উঠলো! এ কি ! এ যে অবিশ্বাস্য! এ হতেই পারে না। এটা কি করে হতে পারে কেউ দুষ্টুমি করে এ খবর দিচ্ছে কি নানা অনেকেই সেড হচ্ছে এ কেমন করে হয় নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। হাত পা কাপতে শুরু করেছে। বুকের ভিতরটায় হাড়টবীট বেড়ে গিয়ে মনে হয় মুগুর পিটাচ্ছে কী ঘটলো? ধপ করে বসে  পড়লো চেয়ারটায় তাড়াতাড়ি মাউস্টা চালাতে গেল পারল না। বজ্রাহতর মতো আঙ্গুলগুলো অসাড়, থান্দা। কিুছুতেই যেন কী বোর্ড চালাতে পারছি না।

কী করব? মাকে বলবো? না, এতো রাতে মাকে বলে মায়ের টেনশন বাড়িয়ে মাকে অসুস্থ বানানো ঠিক হবে না। রুমা কী জানে? হ্যা রুমাকে ফোন করি ! কল দিতেই পেয়ে গেল-

রুমা , তুই কি কিছু জানি খবর? ও প্রান্ত থেকে কণ্ঠস্বর ভারী শোনাল , মনে হল কান্না চেপে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা বৃথা হচ্ছে।

রুমা আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না! রিফাতের কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে উঠলো । ওপ্রানইত থেকে অনেক কষে। কথা বের হল।

হ্যা, রিফাত কেমন করে সব এলামেলো হয়ে গেলা! আমি জেনীকে ফোন করে না পেয়ে ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম আর শুনলাম— আমি সহ্য করতে পারলাম না রে!

বলে বুকভাঙ্গা চাপা কান্নার গমকে ভেসে আসলে । কান্না থামিয়ে বলল

হ্যা রিফাত , তুই সকাল বেলা ক্যাম্পাসে আয়, তাড়াতাড়ি আসিস। সব ঘটনা ওখানে বলা যাবে, কেমন!

সারাটা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারলাম না। এসাইনমেন্ট তো চিন্তা থেকে উড়ে গেছে; মাকেও কিছু বলতে পারিনি। মগজের মধ্যে জেনীর চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।

অথচ গত পরশুদিনের আগের দিন গ্রুপের সবাই যখন স্টাডিতে বসে পরবর্তী প্রেজেন্টেশনটা সেট করছিল জেনী তখন আনমনা হয়ে যাচ্ছিল। কোথায় কোন দিগন্তে যেন হারিয়ে যা্চ্ছিল মাঝে মাঝে । রুমা ওর ধ্যান ভঙ্গ করল।

-কি রে কার ধ্যানে মগ্ন হয়েছিস? মন দিয়ে শোন কি করবি!

-অ্যা ! ও হ্যা বল কি বলছিলি?

না তুই মনে হয় অন্য কিছু ভাবছিস? কি হয়েছে তোর?

-না না, তেমন কিছু ভাবছিনাতো?

তাহলে আয় কাজগুলো গুছিয়েনিই! বলে রুমা, রিফাত সবুজ সবাই কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো।

 

জেনী, শরীর খারাপ লাগছে এই অজুহাতে আগেই বাসায় চলে আসলো । এরপর এই কদিনেই এমন কী ঘটলো যে একটি জীবন এক ইতিহাস রচনা করলো! মানুষের জীবনটা কী এমনই! যে কোন মুহুর্তে রচিত হতে পারে মর্মান্তিক বা সুখকর কোন ইতিহাস যা কোন বইতে লিখা হয় না, কিন্তু কোন কোন হৃদ্বেয় হয় রক্তক্ষরণ।

পরদিন ফজরের নামাজের পর আকাশে সুবহে সাদেকের বিমূর্ত রুপ দেখার সৌভাগ্য হল রিফাতের । আজ রুমার কথামত ক্যাম্পাসে তাড়াতাড়ি যাওয়ার কথা। জেনীর বিষয়ে সব কথা না জানা পর্যন্ত অশান্ত মঙ্গে কিছুতেই বশ মানাতে পারছে না।

 

সকালবেলা ক্যাম্পাসে শুনশান নিরবতা। দু একজন ছাত্রছাত্রীকে দেখা যাচ্ছে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে যে যার গন্তব্যে দ্রুতলয়ে চলে যাচ্ছে। রিফাত চঞ্চল পায়ে স্টাডিতে ঢুকলো। রুমার হিজাবের রঙ আর ডিজাইন দেখে সহজেই পেয়ে গেছে ওর অবস্থান। সে আগে থেকে স্টাডিতে বসে আছে। জানালার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে উদাসভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

রিফাত সন্তর্পনে ওর কাছে এস আস্তে করে ওর কাধে হাত রাখলো। রুমা চমকে যায়নি। ওর দিকে না তাকিয়েই ওর হাতটা চেপে ধরল। বুঝা গেল ওর চোখ দিয়ে অবাধ অশ্রুধারা ঝরছে। রিফাত রুমার পাশে বসলো। ওর চোখও বাধ মানল না। রুমা নিরবতা ভঙ্গ করল-

 

জেনীর জীবনে যে এমনটা ঘটবে, আমি ভাবতেও পারিনি।

রুমা তুই কি জানিস সব বল আমাকে! আমি আর অন্ধকারে থাকতে পারছিনা। আরে আসতে কথা বল সবাই কি ভাববে বলতো?

স্টাডিতে ওরা ছাড়া আরো কয়েকজন পড়াশুনা করছিলো। কেউ কেউ আজকের খবরের কাগজে বড় বড় হেডলাইনে লিখা —‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর নিখোজ’ এটা প্রায় সবাই খবরের কাগজের উপর হুমড়ি খেয়ে খবরটা গিলছে যেন। আর ফিস ফিস গুঞ্জন —।

রিফাত আমি জেনীর বাসায় ফোন করেছিলাম কে একজন ধরল আমি কথা বললাম

হ্যালো কে আমি রুমা বলছি জেনীকে দেয়া যাবে? আমাকে চিনে ফেলে আলী চাচা। আপা আমি আলী মিয়া কইতাছি! আপা আপনে একটু বাসায় আসবেন তাড়াতাড়ি! আমাদের খুব বিপদ! আপনে আইলে সব বুঝবেন, দয়া কইরা একটু তাড়াতাড়ি আসেন কেমন?

কেনো? কী হয়েছে? আলী চাচা?

 

ফোনে কওন যাইব না আপনে আসেন এক্ষনি!

হ্যা হ্যা আমি আসছি!

 

দ্রুত একটা রিক্সা নিযে চরে আসলাম কলিং বেল টিপতেই আলী চাচা দরজা খুলে ইলারায় জেনীর আব্বু সালাম সাহেবের ঘর দেখিয়ে চুপ থাকতে বললো। তাকে ডাক্তার ওষুধ খাইয়ে ঘুম পড়িয়ে রেখেছেন। নির্ঘুম টেনশন, ইত্যাদি উচ্চরক্তচাপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আমাকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে আলী চাচাও বসলো। চাচা কি হয়ছে বলূন, আমার তো খুব ভয় লাগছে।

হ বলি- সেদিনের ঘটনা আলী চাচা বললেন—

জেনির আব্বু অস্থিরভাবে পায়চারী করছেন। হঠাৎ লোডশেডিং। দু্ এক ঘন্টা পর পরই লোডশেডিং। বিরক্ত জনসাধারণ। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ নেই। দু হাজার সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার  যদি এই দুরবস্থা হয় তাহলে দেশে তো আর আবার তলাহীন ঝুড়িতে পরিণত হবে; এসব ভাবতে ভাবতে পায়চারী করছেন আর জেনীর অপেক্ষা করছেন। হঠাৎ মনে হল কে যেন এসছে। আলো না থাকাতে চিনতে পারলেন না, কে কে ওখানে?

জেনীর নিস্তেজ নিরুত্তাপ জবাব

আমি জেনী, আব্বু

ওহ তুমি এসছো। এতো দেরী করলে কেন মা! আমি যে কী চিন্তায় ছিলাম। প্রেশারটা  বোধ হয় বেড়েছে।

জেনী অবসন্ন শরীরটা টেনে নিযে ঘরৈ গেল। বাথরুম থেকে কাপড় পাল্টে শুয়ে পড়ল। হাসি বুয়া কিছুক্ষণ পর এস ডাকছে।–

 

আপা আসেন, খালু জান খাইতে ডাকে।

হাসু আপা আমি খাব না আপনি আর আব্বু খেয়ে নিন। আব্বুকে বুঝিয়ে বলবেন, আমি খাব না্ আমার ক্ষিদে নই।

আ্চছা যাই

 

পরদিন অনেক বেলা অব্ধি যখন কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেলনা জেনীর অজানা আশঙ্কায় সবাই আতঙ্কিত। দারওয়ান আলি হাসু বুয়া অনেক ডাকাডাকি করল কিন্তু কোন সাড়া নেই ভিতর থেকে সালাম সাহেব কাপতে কাপতে বসে পড়লেন। আলী বলল-

স্যার দরজা ভাইঙ্গা ফালান, স্যার।

আমি কিছু বুঝতে পাছি না , তোমরা যা হয় একটা কিছু করো। বলে তিনি মাটিতে বসে পড়লেন মাথায় হাত দিয়ে।

দরজা ভাঙ্গা হলোন। ভিতেরর অবস্থা দেখে সবাই স্তম্ভিত নিশ্চুপ; সবার শ্বাসপ্রশ্বাসও যেন বন্ধ হয়ে গেছে। কারও মুখে কোন কথা নেই।

খাটের উপর জেনীর সব কাপড় চোপড় পড়ে আছে সিলিং ফ্যানের সাথে শাড়ীর একপ্রান্ত বাধা । কিন্তু জেনী? জেনী কোথায়‍‍? ও ঘরে নেই। ঘরের ভিতরের দিক বন্ধ করে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু যাওয়ার আগে দুটো চিঠি টেবিলে উপর রেখে গেছে।

রুমা চিঠি দুটো রিফাত কে দিল

পড়ে দেখ।

তুই পড়েছিস?

হ্যা। সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে চুপ করে রইল। রিফাত দ্রুত হাতে চিঠি খুলে পড়তে শরু করলো। সেলুলয়েডের ফিতায় যেন সিনেমার দৃশ্যের মতো চোখের সামনে চলল ঘটনাগুলো—

একটি সাইবারক্যাফে বসে চ্যাট করছে জেনী-

অনেদকিন হয়ে গেলো আমাদের বন্ধুত্বের । তোমার কি ইচ্ছে করে না দেখা করতে?

কি যে বল? করে না আবার? চাতক পাখির মতো হা করে আছি, কবে এই ফেসবুকের না দেখা বন্ধুকে দেখবো! বলনা কবে দেখা হবে?

আমিও তো তোমাকে ?? এটা তো ঠিক না কি বল?

চলবে…………

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/১২ মে ২০১৪

Facebook Comments