নাদিম কার্ডের সাথে মিলিয়ে নিলো হ্যা এই নাম্বারই তো, বাসার নাম “রোজারিও লজ” নাদিমের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো কলিং বেল বাজিয়ে দাড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ, উত্তরার ৪ নং সেক্টর এটা। হঠাৎ শক খেয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো নাদিমের সে দেখলো, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গেট খুলে গেলো, গেটের কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই পুরোভাগ দেওয়ালের ভেতরে। হা করে তাকিয়ে থাকলো নাদিম, ভেতরে ঢোকার কথা ভুলে গেলো । এবার আরো বিস্মত হলো রাজিবের কন্ঠ শুনে, অথচ রাজিবকে দেখা যাচ্ছেনা। ও বলছে,
-নাদিম ভেতরে এসো,
দ্রুত গতিতে ভেতরে ঢুকলে শুনতে পেলো,
-লিফটের ২ এ এসো।
নাদিম লিফট থেকে নামার সাথে সাথে একটা এলুমিনিয়ামের পাত দেয়ালে ঢুকে গেলো, আর হাসি হাসি মুখ নিয়ে সামনে দাড়ানো রাজিব, নাদিম ঢুকেই অবাক কন্ঠে,
-আরে একেবারে যাদুর মতো ব্যাপার স্যাপার, আমিতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
রাজিব নাদিমের কাঁধে হাত রাখে, কেথাও একটা চাপ দেয়, এলুমিনিয়ামের পাতটি বন্ধ হয়ে যায় । নাদিমকে ভেতরে নিতে নিতে,
– এ আর কী নাদিম,অবশ্য এ সবই যিশুর কৃপা। এসো ভেতরে এসো, এইযে হল রূমটি দেখছো, এতো লোকজন সবাইকে নিয়ে রিলিজিওন কনফারেন্স হবে, এখানে মামা কথা বলবেন।
নাদিম খেয়াল করলো হলরুমটিতে যারা বসে আছে তারা সবাই হাই সোসাইটির লোকজন, পোশাক, চালচলন সবই, রাজিবের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাজিবও দামী সাফারী পরেছে, এবার নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে গেলো নাদিম, বিষয়টি রাজিবের দৃষ্টিকে এড়াতে পারেনি।
রাজিব নাদিমকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে ব্লেজার বের করলে,
– সরি আসলে তোমাকেতো আমি কনফারেন্সর কথা বলিনি, দেখো এটা মনে হয় হবে তোমার আমার হাইট তো একই, ফিটিংসেও হয়ে যাবে।
নাদিম মনে মনে বললো,
-তুমি বললেও আমি যা পরে এসেছি এর চেয়ে ভালো কিছু পরে আসা সম্ভব ছিলোনা। এবার লজ্জিত কন্ঠে,
-ঠিক আছে, পরছি।
-হ্যা তুমি পরে নাও তারপর ডিনার সেরে আমরা হলরুমে যাবো।
নাদিম জানেনা রাজিব কেন ওকে ডেকেছে, বাইবেলটা রাজিবের লাইব্রেরি থেকে নেয়া লাইব্রেরী এখানে নয়, ফার্মগেটে, বিভিন্ন্ জায়গায় রাজিব লাইব্রেরী খুলেছে। নাদিম শুনছিলো বাইবেল পড়লেই নাকী মানুষ ধণী হয়ে যায়, তাই নিয়েছে, সে জানেনা এতে সওয়াব হয় নাকী গুণাহ হয়? জানতেও চায়না ওর অনেক টাকা প্রয়োজন,মায়ের সুখের জন্য। কনফারেন্সে ধণী হওয়ার হয়তো লেটেষ্ট উপায় বাতলে দেয়া হবে তাই দ্রত সেখানে যায়।
রাজিবের ওখান থেকে ফিরে নাদিম আরো অন্য মনষ্ক হয়ে গেছে, কোন কাজই ভালো লাগছেনা শুধু রাজিবের মামার কথায় মনে পড়ছে, কী করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। তবুও কাজে মনোযোগ দেয়াটা জরুরী, কারণ কাজ না করলে খাবে কী?
দু দিন পর স্মৃতি আজ আনুর সাথে খুব বেশী কথা বলছেনা, আনু বলছিলো ছেলেটাকে দেখাবে, স্মৃতির এক ফোঁটাও ইচ্ছে নাই দেখার। এক স্যার এসে বিমর্ষ কণ্ঠে বললেন,
-আজ তোমাদের ছুটি, রবিণ স্যারের বাবা মারা গেছেন আমরা ওখানে যাবো।
আনু খুব খুশি হয়, পুরো সময় ও ওর বয় ফ্রেন্ড কে দিতে পারবে। অন্যরা চলে যায় সুফিয়া চৌধুরী এখনও আসেননি তাই বাধ্য হয়ে স্মৃতি বসে থাকে।
আনু ফোনে কিছু একটা বলে, স্মৃতি বরং পড়াতে মনোযোগ দেয়।
স্মৃতি একটু পরেই এক পুরুষ কন্ঠ শুনতে পেলো কিন্তু স্মৃতি পড়া থেকে মাথা উঠালোনা। শূনতে পেলো,
-হাই আনু কেমন আছো?
আনু খুব দ্রুত ছেলেটির কাছে চলে গেলো, বললো,
-ভালো আছি রাজিব, তুমি কেমন আছো? আর দেখো ও স্মৃতি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। রাজিব স্মৃতিকে লক্ষ করে,
-হ্যালো স্মৃতি কেমন আছেন?
স্মৃতি ইতস্তত দৃষ্টিতে তাকায়, কিন্তু ওর দৃষ্টি ইতস্তত ভঙ্গি কাটিয়ে একদম স্থীর হয়ে যায়, স্মৃতি দৃষ্টি সরাতে কয়েক সেকেন্ড সময় নেয়।
রাজিব মৃদু হাসে,
-এক্সকিউজ মি, আামি রাজিব।
স্মৃতি দ্রুত মাথা নিচু করে,
– সরি আমি তাসনিয়া চৌধুরী স্মৃতি।
আনু উচ্ছল কন্ঠে,
-বলেছিলামনা স্মৃতি, ওকে দেখলে তুমি চোখ সরাতে পারবেনা? ঠিক বলেছিলামতো?
স্মৃতি খুবই লজ্জিত হয়, আবার আনুর কথা শুনে অবাকও হয়, দুদিন আগের লজ্জিত আনু আর আজকের আনুতে কত তফাৎ যুবকটি কী যাদু জানে! কতোটা নির্লজ্জ ভাবে কথাগুলো বললো।
স্মৃতিকে কিছুক্ষন একা থাকতে হচ্ছে আনু চলে গেছে।
এবার হন্তদন্ত হয়ে স্মৃতির সামনে আসলো নাদিম মৃদু স্বরে,
-এখানে কি রাজিব নামে কেউ এসেছিলো?
স্মৃতি মাথা উচু করে, রাজিবের সাথে এর অনেক মিল, স্মৃতি বললো,
-হ্যা এসেছিলো চলে গেছে। নাদিম তবুও কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকে, স্মৃতির সাথে ওর দৃষ্টি বিনিময় হয়।
কিন্তু পরক্ষনেই নাদিম পেছন ফিরে দৌড়ে চলে যায়, স্মৃতি ওর পথের দিকে অনেকটা সময় ধরে তাকিয়ে থাকে।
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে, কী হলো আমার? চলবে………