একজন নারীর স্বপ্ন কখনো শুধু তাঁর নিজের থাকে না—তা হয়ে ওঠে অনেকের আশ্রয়, আশাবাদ এবং এগিয়ে চলার শক্তি। ইফ্ফাত আলম জেসিকা তেমনই এক স্বপ্নবাজ নারীর নাম, যিনি নিজেকে ছাপিয়ে অন্যদেরও সামনে নিয়ে আসার সাহস দেখিয়েছেন।
শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনের পাঠ তিনি পেয়েছেন ছোটবেলা থেকেই। সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাবার বদৌলতে বেড়ে ওঠা ক্যান্টনমেন্টের নিপাট পরিবেশে। পরিবারে অভ্যাস ছিল সাদামাটা পোশাকে ঈদের আনন্দ খোঁজার, আর সেখানেই গজ কাপড় দিয়ে তৈরি সাধারণ জামা নিজের হাতে সাজিয়ে ভিন্নমাত্রায় তুলে ধরতেন ছোট্ট জেসিকা। তখনই যেন বোনা হতে থাকে সৃষ্টিশীল এক ভবিষ্যতের বীজ।
সাধারণ মধ্যবিত্ত চিন্তার রেলগাড়িতে চড়ে তিনিও একসময় ছোটখাটো একটি চাকরিতে ঢুকে পড়েন। কিন্তু তাঁর মন পড়ে থাকত সুই-সুতার জগতে। নিজ হাতে বানানো কুশন কভার, ব্লাউজ কিংবা কাপড়ের কারুকাজ—এসবই ছিল তাঁর প্রাণ। একদিন সহকর্মীদের উৎসাহে নিজের কাজের কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করলেন, আর সেখান থেকেই খুলে গেল এক নতুন দরজা।
প্রথম অর্ডার, প্রথম আয়, প্রথম বিনিয়োগ—সবকিছুর শুরু যেন এক রঙিন গল্পের মতো। নিজের হাতে তৈরি করা ডিজাইন থেকে জন্ম নেয় ‘সর্বজয়া’ নামের একটি উদ্যোগ। এটি শুধুই একটি ফেসবুক পেজ নয়, বরং নারীদের জন্য আত্মনির্ভরতার এক চলমান কর্মক্ষেত্র। এখন এই উদ্যোগে কাজ করছেন প্রায় ৩০ জনের মতো নারী। কেউ ওয়ার্কশপে, কেউ ঘরে বসেই।
তবে এ পথটা সহজ ছিল না। পেছনে টানতে চেয়েছে সমাজের পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি, অনুশাসনের চোখরাঙানি আর “নারীর কাজ নয়” ধরনের তির্যক মন্তব্য। কিন্তু জেসিকা হার মানেননি। মা-বাবা, ভাই এবং স্বামীর সমর্থন ছিল তাঁর পাশে। আর ছিল নিজের প্রতি বিশ্বাস—যা তাঁকে প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে তুলেছে।
আজ ‘সর্বজয়া’ শুধু পণ্য বিক্রির মাধ্যন নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার এক পাঠশালা। সৃজনশীল নকশায় তৈরি ব্লাউজ, থ্রি-পিস, শাড়ি, কুশন কভার—সবকিছুতেই রয়েছে জেসিকার ছাপ। এই উদ্যোগ এখন প্রতি মাসে লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করছে।
জেসিকার চোখে ভবিষ্যৎ স্পষ্ট—তিনি চান সর্বজয়া একদিন হয়ে উঠুক একটি স্বীকৃত ব্র্যান্ড, যা স্থানীয় গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যাবে আন্তর্জাতিক বাজারে। আর সেই ব্র্যান্ডের প্রতিটি সেলাইবাঁধা থাকবে একেকটি নারীর গল্প, সংগ্রাম আর বিজয়ের চিহ্ন।