আজকের প্রভাতে যখন সূর্য উঠেছে, তখন গাজার আকাশে কেবল ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপ। সেই ধ্বংসের নিচে চাপা পড়ে গেছেন এক সাহসিনী—ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ফাতিমা হাসুনা, যিনি শহীদ হয়েছেন ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বর্বর বোমা হামলায়। গাজা শহরের নাফাক অঞ্চলে নিজ বাড়িতে চালানো হামলায় শহীদ হয়েছেন তিনি ও তাঁর পরিবারের আরও ১০ জন সদস্য।
ফাতিমা হাসুনা শুধু একজন আলোকচিত্রী নন, তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ইতিহাস, গাজার চোখে দেখা সত্যের নির্ভীক ভাষ্যকার। তাঁর হাতে ছিল ক্যামেরা, আর হৃদয়ে প্রতিরোধের আগুন। তাঁর প্রতিটি ছবি একেকটি ভাষ্য, যা দখলদারদের গোলার চেয়ে কম শক্তিশালী ছিল না।
গাজা যখন আগুনে জ্বলছে, চারপাশে ধ্বংস আর মৃত্যু, তখন ফাতিমা ছুটে যেতেন ঘটনাস্থলে—হাতে ক্যামেরা, চোখে আগ্রহ, হৃদয়ে সাহস। তিনি তুলতেন সেইসব ছবি, যা পৃথিবীর অনেক মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছে। ধুলায় ঢাকা পথ, কাঁদতে থাকা শিশু, খালি থালা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধা—এসবের মধ্যেই তিনি দেখাতেন আগ্রাসনের চেহারা।
এক সাক্ষাৎকারে ফাতিমা বলেছিলেন—
“আমি অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলেছি। আমি কাজ করি হৃদয় দিয়ে, মহান রবের সন্তুষ্টির জন্যে। কেউ তো আমাদের কান্না শুনবে!”
“আমার ক্যামেরা আমার অস্ত্র। তারা আমার দেশ ও জনগণকে হত্যা করতে পারে, কিন্তু আমার চিত্র/ছবিকে পারবেনা।”
এগুলো আজ আর কেবল বাক্য নয়, এখন ইতিহাসের এক একটি স্তম্ভ। ফাতিমার ক্যামেরা আজ নীরব, কিন্তু তাঁর ছবিগুলো আজও কথা বলে। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে যে রক্ত ঝরে, তার সাক্ষী হয়ে আছে তাঁর প্রতিটি ক্যাপচার করা মুহূর্ত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মৃত্যুতে শোক আর শ্রদ্ধা জানিয়ে অনেকেই লিখেছেন—”ফাতিমার লেন্স থেমে গেলেও, তাঁর তোলা ছবি ইতিহাসের বুক থেকে কেউ মুছতে পারবে না।”
আরো বলা হচ্ছে—
“তিনি ছিলেন গাজার প্রতিরোধের এক নারীচিত্রী, যিনি প্রমাণ করে গেছেন—প্রতিরোধ মানে শুধু অস্ত্র নয়, প্রতিরোধ মানে সত্যের চিত্র তুলে ধরা।”
তিনি বলেছিলেন: “আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পাই না। আমি ছবি তুলি, কারণ কেউ তো আছে, যাকে দেখাতে হবে আমাদের উপর কী ঘটছে। কেউ তো আমাদের কান্না শুনবে।”
তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত ছিলেন তার সংগ্রামের ক্যামেরা হাতেই।
আজ তাঁর এই অস্ত্র থেমে গেছে। কিন্তু তাঁর প্রতিরোধ এখন ছবি হয়ে বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে, সংগ্রামের অনুপ্রেরণায়, উম্মাহর চেতনায়।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লাহ তাঁকে শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিন, জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দিন।