banner

রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 25 বার পঠিত

 

জান্নাতুল ফেরদৌসের সাহসী উদ্যোগ: পরিবেশবান্ধব ক্যাফে ও টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্ন

 

রাজধানী ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় গেলে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য চোখে পড়বে। প্রধান সড়কের পাশে একটি দালানের দ্বিতীয় তলার ছাদ যেন এক সবুজ উদ্যানে পরিণত হয়েছে। গাছপালায় ঘেরা এই ছাদে রয়েছে একটি ক্যাফে, যার নাম “ওরেন্ডা অ্যান্ড বিনস”। এটি শুধু একটি খাবারের জায়গা নয়; বরং এটি পরিবেশবান্ধব ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল ব্যবসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আর এই অভিনব উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন এক তরুণ উদ্যোক্তা—জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট যেখানে গ্যাস ও বিদ্যুৎনির্ভর, সেখানে জান্নাতুল ফেরদৌস একটি ব্যতিক্রমী পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁর ক্যাফের রান্নাঘর, আলোকসজ্জা এবং এমনকি কফি মেশিন পর্যন্ত চলে সৌরবিদ্যুতে। ছাদে বসানো সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ক্যাফেটি নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণও কমিয়ে আনে। এটি শুধুমাত্র ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ওরেন্ডা অ্যান্ড বিনস শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনেই নয়, বরং অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায়ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করেছে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, খাবার পরিবেশনের জন্য নেওয়া হয়েছে পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং। এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, বরং সচেতন নাগরিকদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি জায়গাও তৈরি করেছে।

শুধু একটি ব্যবসা গড়ে তোলাই জান্নাতুল ফেরদৌসের লক্ষ্য নয়। তিনি তাঁর ক্যাফের লভ্যাংশের একটি অংশ সমাজসেবামূলক কাজে ব্যয় করেন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষা সহায়তা, নারীদের ক্ষমতায়ন ও পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন।
জান্নাতুলের এই উদ্যোগের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর লন্ডনপ্রবাসী বড় ভাই মঞ্জুর মিয়া। বিদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার দেখে তিনি জান্নাতুলকে এই বিষয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর জান্নাতুল গবেষণা ও পরিকল্পনা করে তাঁর এই ক্যাফে বাস্তবায়ন করেন।

বর্তমানে জান্নাতুল ফেরদৌস বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে স্নাতক করছেন। তবে তার অভিজ্ঞতা আরও বিস্তৃত—গত ৯ বছর ধরে তিনি দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক কার্যক্রমেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন।

জান্নাতুল ফেরদৌসের লক্ষ্য কেবল নিজে সফল হওয়া নয়; তিনি চান, বাংলাদেশের নারীরা আরও বেশি উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক, নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। তিনি মনে করেন, নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হলে তাদেরকে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং সমাজকে তাদের এই পথচলায় সহযোগিতা করতে হবে।
ভবিষ্যতে তিনি একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে নারীরা পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্পর্কে শিখতে পারবেন। তার বিশ্বাস, সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিকভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টাও প্রয়োজন। শুধু বৃক্ষরোপণ করলেই পরিবেশ রক্ষা করা যাবে না; বরং টেকসই ও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, প্লাস্টিক বর্জন এবং সচেতন জীবনধারার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Facebook Comments