ঢাকার রাজপথ যেন সেদিন রূপ নিয়েছিল গাজা উপত্যকার প্রতিচ্ছবিতে। শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান—চারপাশে ছিল ক্ষোভ, বেদনা আর প্রতিরোধের আগুন। শত সহস্র মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল অবিচারের বিরুদ্ধে দীপ্ত প্রতিবাদ। সেই স্বরলিপিতে নারীর কণ্ঠ ছিল অনস্বীকার্য ও দৃঢ়—মমতার মাটি থেকে উঠে আসা প্রতিবাদের উচ্চারণ, যেখানে প্রতিটি পা যেন গাজায় নিহত এক শিশুর জন্য ন্যায়ের দাবি হয়ে গর্জে উঠেছে।
২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে লাখো মানুষ অংশ নেন। শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত সমাবেশে নারী-পুরুষের কণ্ঠ এক হয়ে উচ্চারিত হয়েছে: “ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে আছি”।
ইবনে সিনা নার্সিং ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ এমনকি নারায়ণগঞ্জের মদনপুর বা কেরানীগঞ্জ থেকেও নারীরা যোগ দিয়েছেন। শিক্ষার্থী, গৃহিণী, শিক্ষক ও পেশাজীবীরা—সবাই একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে।
মনিকা নামের এক নার্সিং শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা যত দূরেই থাকি, গাজার জন্য এই মুহূর্তে পাশে থাকা মানেই প্রতিবাদ।” নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ৬১ বছরের শান্তা বেগম বললেন, “ফোনে ইউটিউবে দেখে জানলাম গাজার কথা, তাই এসেছি।”
প্রকৌশলী সোনিয়া খান প্রশ্ন তুলেছেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধে চুপ থাকা মানেই তা সমর্থন করা।” কেরানীগঞ্জের শিক্ষক মাবিয়া আক্তার জানান, “আমরা বাংলাদেশি নারীরাও মুসলিম উম্মাহর পাশে আছি।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনের নারীদের কান্না ও শিশুদের নিথর দেহ দেখে অনেকেই আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি।
ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড আর প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত এ সমাবেশে নারীদের দৃপ্ত অংশগ্রহণ জানিয়ে দিল—তারা শুধু ঘরের নয়,মানবতার প্রশ্নে তারা সদা সবখানে জাগ্রত।
সোহরাওয়ার্দীর প্রান্তর সাক্ষী হয়ে রইল সেই অঙ্গীকারের—মানবতার বিরুদ্ধে কোনো জুলুম মেনে নেবে না এ প্রজন্ম।
আর গাজার ধ্বংসস্তূপের গায়ে হয়তো একদিন এই কণ্ঠগুলোর প্রতিধ্বনি পৌঁছে যাবে, জানিয়ে দেবে—তারা একা ছিল না। অস্ত্র নয়, ভালোবাসা ও প্রতিবাদের ভাষা নিয়েই
বাংলাদেশের নারীরাও তাদের পাশে ছিল।