banner

বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 20 বার পঠিত

 

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, তবু কেন থামছেনা অপরাধ?

 

 রাফসান গালিব: দেশে ধর্ষণের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডই। এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ধর্ষককে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এক সপ্তাহ আগেও। ঘটনাটি ঘটেছিল কখন? ছয় বছর আগে।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হবার পরেও কেন ধর্ষণ রোধ করা যাইতেছে না? এর অন্যতম কারণ হইল, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা।

বগুড়ার তুফান সরকারের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই অনেকের। এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর মা-মেয়ের চুল কেটে দিছিল তুফান৷ গোটা দেশে ঝড় উঠে এই ঘটনায়৷ তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়৷

হাইকোর্ট এই ঘটনার বিচার করতে ছয় মাস সময় বেধে দেয়। কিন্তু ৩ বছরেও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয় না। পরে ঠিকই তুফান সরকার জামিনে বের হয়ে মা-মেয়েকে হুমকি দেয়া শুরু করে। সেই তুফানের আজও বিচার হয় নাই।

একের পর ধর্ষণের ঘটনায় ঘটতে থাকায় এবং ধর্ষণের বিচার যথাযথভাবে করতে না পেরে পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে সংসদে ধর্ষককে ক্রসফায়ার দেয়ার মতো ভয়ংকর দাবি উঠেছিল। বিচারবহির্ভূতভাবে র‍্যাব দিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্ত কয়েকজন হত্যাও করা হয়। মানুষ ক্রসফায়ারকে সেলিব্রেট করে৷ কী দুর্ভাগ্য আমাদের!

ধর্ষণের বিচার কেন দ্রুত হবে না? কেন বছরের পর বছর আটকে থাকবে? এমন সময় বিচারের রায় হয়, তখন মানুষ ঘটনার কথাই ভুলে যায়। ফলে মৃত্যুদণ্ড দিয়েও সেই রায় আর সমাজে দৃষ্টান্তমূলক হয় না। ধর্ষণের ঘটনার ২০ বছর পর রায় হয়েছে, এমনও ঘটেছে। এটা তো বিচারের নামে তামাশা ছাড়া কিছু নয়।

ধর্ষণের ক্ষেত্রে আরেক ভয়াবহ ও বাজে দৃষ্টান্ত আছে, তা হলো ধর্ষকের সঙ্গেই ভুক্তভোগীর বিয়ে দেয়া। আদালতের সম্মতিতেই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনাও এখানে ঘটেছে৷ যথাযথ আইন প্রয়োগ ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই ধর্ষণের পর ধর্ষকের সাথে বিয়ার মাধ্যমে নারীর প্রতি আরেক চরম জুলুম চাপিয়ে দেয়া হয়।

ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ৯০-১২০ দিনের মধ্যে কেন করা হবে না? একেবারে বিশেষ বা জটিল কোনো কেস ছাড়া ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত বিচার অবশ্যই সম্ভব। শুধু তাই নয়, এ দেশে ঘটনা ঘটার এক সপ্তাহের ভেতরে বিচারের রায় দেয়ার দৃষ্টান্তও আছে৷

নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এ ব্যাপারে আওয়াজ তুলতে হবে। সরকারকে এইখানে অবশ্যই বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে৷ একটা ধর্ষণের বিচার চলতে চলতে আরও কয়েক ডজন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাবে, তা কোনোভাবেই মানা যায় না।

শুধু আইন বানাইলেই হবে না, শাস্তি বাড়াইলেই হবে না; বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে৷ এইটার ফলাফল নিকট অতীতেই আছে। নারীদের উপর এসিড সন্ত্রাস কিন্তু আমরা এভাবেই বন্ধ করতে পেরেছি৷

দ্রুত আইন প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে মানুষ ক্রসফায়ারের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকেই আবার আহবান করবে। পারলে নিজেরাই ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে বা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারবে৷ এইটা তখন আরও খারাপ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে আমাদের সমাজকে। সরকারকে বলব, এমন ঘটনা ঘটার আগেই ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থাকে দ্রুত কার্যকর করুন।

*
ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যে ধরনের ফেসবুক পোস্ট ভিক্টিমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও পোটেনশিয়াল রেপিস্টকে সত্যিকারের রেপিস্ট হইতে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে পারে- এইটা নিয়ে বিশ্লেষণ পড়ুন এই লিংকে:
https://www.facebook.com/share/p/1NpGnsHhHo/

Facebook Comments