banner

সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 14 বার পঠিত

 

সায়েন্স ফিকশন : তারকামন্ত্র

সাল ২১৫৭। পৃথিবী এখন প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ পার করছে। মেঘের ওপর দিয়ে উড়ন্ত নগরী, গ্রহান্তর ভ্রমণের সুযোগ, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবাধ ব্যবহার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই অগ্রগতির মাঝেও এক অদৃশ্য সঙ্কট ঘনিয়ে আসছে। পরিবেশের ধ্বংস, অবাধ যুদ্ধে শক্তির অপচয় এবং মানবজাতির মধ্যে বাড়তে থাকা বিভক্তি ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, মানব সভ্যতার অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
ঠিক এই সময়ে, আকাশে একটি নতুন তারা উদয় হয়। এটি কোনো মহাজাগতিক ঘটনা নয়, বরং একটি বিশাল মহাকাশযান। এর ভেতর থেকে একটি বার্তা ভেসে আসে, যা পৃথিবীর প্রতিটি ডিভাইসে সম্প্রচারিত হয়। বার্তাটি ছিল এক অচেনা ভাষায়, যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পৃথিবীর সব ভাষায় অনূদিত হয়।
“আমরা জেনাসি। আমরা তোমাদের সাহায্য করতে এসেছি। মানবজাতি নিজেদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা তোমাদের নতুন একটি জীবন দিতে পারি, কিন্তু বিনিময়ে তোমাদের অতীত বিস্মৃত হতে হবে। তোমাদের স্মৃতি মুছে ফেলে একটি শূন্য পাতা থেকে শুরু করতে হবে।”

এই প্রস্তাব শোনার পর পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গোষ্ঠী, যারা নিজেদের “উন্নয়নপন্থী” বলে পরিচয় দেয়, জেনাসিদের প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। তারা মনে করে মানবজাতির অতীত ভুলে নতুন করে শুরু করাই ভবিষ্যত অগ্রগতির একমাত্র উপায়।
কিন্তু অন্যদিকে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী “নস্টালজিস্টরা” এই প্রস্তাবকে দাসত্বের সামিল বলে আখ্যায়িত করে। তাদের বিশ্বাস, স্মৃতি ছাড়া মানুষ আর মানুষ থাকবে না।
এর মাঝেই এক তরুণ বিজ্ঞানী আয়েশা এই ঘটনার গভীর রহস্য উন্মোচনে এগিয়ে আসে। আয়েশা কাজ করছিল এক গোপন প্রকল্পে, যার মাধ্যমে জেনাসিদের প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছিল। সে আবিষ্কার করে যে, জেনাসিদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি একটি ফাঁদ। তারা মানবজাতির স্মৃতিকে শুধুমাত্র মুছে ফেলবে না, বরং সেই স্মৃতিগুলো সংগ্রহ করে একটি বিশেষ অস্ত্র তৈরি করবে।
এই অস্ত্রটি হবে একটি “স্মৃতিশক্তি” বোমা, যা যে কোনো জাতির মস্তিষ্কের স্মৃতি মুছে ফেলতে সক্ষম। জেনাসিরা পৃথিবীকে শুধু সাহায্য করার ভান করছে, আসলে তারা মানবজাতিকে তাদের পরবর্তী শিকার বানাতে চায়। আয়েশা বুঝতে পারে যে, তার হাতে সময় খুব কম।

মহাকাশযানটিতে প্রবেশ করার জন্য আয়েশা একটি বিপজ্জনক মিশন হাতে নেয়। বিদ্রোহীদের একটি দল তার সঙ্গী হয়। জেনাসিদের জাহাজে প্রবেশ করে তারা দেখতে পায়, সেখানে পৃথিবীর ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং ব্যক্তিগত স্মৃতির বিশাল ভাণ্ডার তৈরি করা হচ্ছে। এই স্মৃতিগুলো থেকে জেনাসিরা তাদের অস্ত্রের জ্বালানি তৈরি করছে।
অবশেষে, আয়েশা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে পৌঁছায়। কিন্তু সেখানে তাকে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি সে এই সিস্টেম ধ্বংস করে তবে পৃথিবী রক্ষা পাবে, কিন্তু একই সঙ্গে পৃথিবীর সব প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মুছে যাবে। অন্যদিকে, যদি সে জেনাসিদের সঙ্গে আপস করে, তবে মানুষের স্মৃতি হারানোর ঝুঁকি থাকবে।
আয়েশা একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। সে জেনাসিদের সিস্টেম ধ্বংস করার পাশাপাশি, পৃথিবীতে একটি বার্তা পাঠায়—”আমাদের অতীতই আমাদের শক্তি। স্মৃতি হারানো মানে আমাদের অস্তিত্ব হারানো।”

এরমাঝে জেনাসিদের জাহাজ ধ্বংস হয়,আর পৃথিবী আবার নতুনভাবে তার যাত্রা শুরু করে।
এই মিশন এখানে শেষ হলেও, আকাশে জেনাসিদের মতো আরও কোনো সভ্যতার হুমকি থাকতেই পারে। কিন্তু এবার মানুষ আরো দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত।

-আরওয়া আনাম

Facebook Comments