পর্ব ২
বাল্যবিবাহ
অপরাজিতাবিডি ডটকম : ১৯২৯ সালের ১ অক্টোবর ১৯ নং এ্যাক্ট দ্বারা বাল্যবিবাহ নিরোধ কল্পে আইন পাশ করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য। ২১ বছর বয়সের নিচে সকল পুরুষ এবং ১৮ বছর বয়সের নিচে সকল নারী বিবাহের অনপযুক্তি হিসাবে শিশু বলে গণ্য। বিবাহের যেকোন এক পক্ষ শিশু হলেই বাল্য বিবাহ হিসাবে গণ্য হবে। যে বা যারা এই বিবাহ দিবে তারাও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী।
বাল্যবিবাহ কী?
বাংলাদেশের সকল ধর্ম, সম্প্রদায়ের জন্য বিয়ের আইনগত বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর। উল্লিখিত বয়সের কম বয়সী মেয়ে এবং কম বয়সী ছেলে যদি বিয়ে করে বা বিয়ে দেয়া হয় তখন তাকে বলা হয় বাল্যবিবাহ।
বাল্যবিবাহের প্রধান কুফলগুলো কী কী ?
বাল্যবিবাহের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় একজন নারী (কিশোরী)। বাল্যবিবাহের প্রধান কুফল হলো:
মেয়েরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে, নানা অসুখে আক্রান্ত হয় এবং তাদের স্বাস্থ্য ভেঙে যায়।
বাল্যবিবাাহের ফলে জন্ম নেয়া সন্তান-সন্ততি শারীরিকভাবে পূর্ণতা পায় না। তদুপরি অপুষ্টি এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত খাকার কারণে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ যথাযথভাবে হয় না।
মেয়েরা শারীরিকভাবে এবং মানুসিক নির্যাতনের শিকার হয়।
তালাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
বাল্যবিবাহের কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
শিক্ষার হার কমে যায়।
মেয়েরা মা বাবার কষ্টের বোঝা বাড়ে।
বাল্যবিবাহের পরিণতি
কচি বয়সে মা হলে শিশুকে ঠিকমত যতœ করা সম্ভব হয় না। অনেকেই বুকের দুধ কম হয়, তাই বাচ্চা দুধ পায় না। অনেক সময় মা নিজেই পুষ্টির অভাবে, রক্ত কম থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ছেলেমেয়েদেরকে ঠিকমত লেখাপড়া শেখাতে পারে না।
শিশুর ওজন কম থাকা
১৮ বছরের কম বয়সী মায়ের বাচ্চা হলে বাচ্চার ওজন কম থাকে। কারণ মার শরীরের গঠন তখনও পরিপূর্ণ হয় না। জন্মের সময় শিশুর ওজন আড়াই কেজির কম হলে এমন শিশু মারা যাওয়ার ভয় বেশি থাকে, আর বেঁচে থাকলেও নানা ধরনের অসুখ হয়, যেমন সর্দি কাশি , ডায়রিয়া নিউমোনিয়া ইত্যাদি । অর্থাৎ অপুষ্ট শিশু সারা জীবন বিভিন্ন অসুখে ভুগতে থাকে। পতিবন্ধী শিশুর জন্মহার বেড়ে যায়।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার অভাব
সাধারণত বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বয়স কম হওয়ার ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের ব্যবধানটা বেড়ে যায়। তাদের মধ্যে পারিবারিক জীবনে ব্যাপক মতপার্থক্য ও সমঝোতার অভাব দেখা যায়, এমনকি প্রায়শই সংসারও ভেঙ্গে যায়।
বাল্য বিয়ের কি বাতিলযোগ্য
বাল্যবিবাহ আইনে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়েদের বিয়ে বে-আইনী তবে, এই বিয়ে বাতিল হবে না। কিন্তু মেয়ে যখন পূর্ণবয়স্ক হবে অর্থাৎ ১৮ বছর পূর্ণ করবে তখন সে চাইলে এই বাল্যবিবাহ অস্বীকার করতে পারবে। এজন্য মেয়েকে বিয়ে বাতিলের জন্য আদালতে আবেদন করতে হবে। আদালত বিয়ে বাতিলের নির্দেশ দিতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে দুইটি শর্ত আছে
মেয়েকে ১৮ বছর হওয়ার আগে আদালতে বিয়ে বাতিলের আবেদন করতে হবে।
মেয়েকে প্রমাণ করতে হবে যে এই বিয়ে বিবাহকালীন তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি।
বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য পিতা-মাতার কী কী শাস্তি হতে পারে?
বাল্যবিবাহ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বর-কনের পিতার প্রত্যেকের ১ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ই হতে পারে। তবে মহিলাদের জরিমানা হতে পারে কিন্তু জেল হবে না। এই বিয়ে সম্পন্নকারীদের (ইমামা বা কাজী) ক্ষেত্রে উল্লিখিত একই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, এই আইনে বাল্যবিবাহ নিষেধ করা হলেও যদি সেই বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়ে যায় তবে তা অবৈধ হবে না।
বাল্যবিবাহ দূর করারর উপায়
আইন সম্পর্কে জানা
মেয়েদের ১৮ বছরের আগে এবং ছেলেদের ২১ বছরের আগে বিয়ে হলে যে শাস্তি পেতে হবে এই আইন অনেকেই জানে না। যার ফলে তারা এ সম্বন্ধে না জেনেই ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়।
এ জন্যে সকল ধরনের প্রচার মাধ্যমের দ্বারা বাল্যবিবাহের শাস্তিমূলক আইন সম্পর্কে সকল বয়সের পুরুষ ও মহিলাকে জানাতে হবে। কোন এলাকায় বাল্যবিবাহ হলে সেই এলাকার ইউনিযন পরিষদ পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বা সরকার নিয়োজিত কোন কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনবেন।
জনগণকে সচেতন করে তোলা
বাল্যবিবাহ মেয়েদের শারীরিক ও মানুসিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও অসুবিধা হয় তা বাবা-মা মুরুব্বী, পাড়া-প্রতিবেশী ও অন্যরা জানলে তারা আর অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেবে না।
অভাব দূর করার ব্যবস্থা
বেশির ভাগ সময়ে অভাবে পড়েই মা-বাবা তাড়াতাড়ি বিয়ে দেন। নানা রকম-রুজি-রোজগারের উপায় বের করে অভাব দূর করার চেষ্টা করা দরকার। আজকাল অনেক কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের কাজ করার দক্ষতা বাড়িয়েছে এবং বেশকিছু এনজিও ও তাদেরকে ঋণের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। সেই টাকা ও নিজেদের দক্ষতা দিয়ে তারা পরিবারকে সাথে নিয়ে ঘরে বসে অনেক ধরনের রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করেছে। সংসারে আয় বাড়ার ফলে এদের মা-বাবা বাল্যবিবাহের কথা বলে না।
অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরআই/এ/২৩এপ্রিল,২০১৪