banner

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 71 বার পঠিত

 

পারিবারিক ভাঙনে বাড়ছে বৃদ্ধাশ্রম

 

সালেহ(কাল্পনিক চরিত্র) এক সময় ছিলেন একটি সুখী পরিবারের প্রধান।
তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছিলেন।
কিন্তু কয়েক বছর আগে ছেলেরা চাকরি সুবাদে শহরে চলে যায়, মেয়েও তার পরিবার নিয়ে পাড়ি জমায় দূর শহরে।বছরে একবারো আসার সময় করতে পারেনা তার আদরের সন্তানেরা। স্ত্রীর মৃত্যু পর একদমই একা হয়ে পড়েন সালেহ, একাকীত্বের চাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি শেষ আশ্রয় হিসেবে বেচে নেন বৃদ্ধাশ্রমকে

এটা আজকের বাস্তবতা। পারিবারিক ভাঙনের কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাচ্ছে।
সাধারণত; গ্রামীণ সমাজে পারিবারিক সম্পর্ক অনেক দৃঢ় ছিল, কিন্তু আধুনিকতার প্রভাবে ছোট পরিবারের কাঠামো, উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের শহরে চলে যাওয়া, এবং পরিবারের সদস্যদের কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধাশ্রমে প্রবেশকারী বৃদ্ধদের সংখ্যা দিনদিন বাড়িয়েছে।

বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে দ্রুত সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিকতা, বিশ্বায়ন এবং আর্থিক চাপের কারণে অনেক পরিবারে মুলতঃ একটাই সঙ্কট- পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি। শহরাঞ্চলে, অনেক তরুণ-তরুণী বাবা-মায়ের সাথে সময় কাটানোর চেয়ে তাঁদের কর্মজীবনে বেশি মনোযোগী।এর ফলে বৃদ্ধরা একাকী জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে, বয়সজনিত অসুস্থতার জন্য তারা তাদের সন্তানদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাননা। ফলে বৃদ্ধাশ্রমকে শেষ অবলম্বন করে নিতে হচ্ছে অনেককে।

বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বৃদ্ধাশ্রম

বাংলাদেশের সমাজে পরিবার এবং সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই মূল্যবোধে হ্রাস দেখা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি শহরেই বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক। শহরকেন্দ্রিক জীবনযাত্রার পরিবর্তন, অতিরিক্ত আবাসন খরচ এবং চাকরি নিয়ন্ত্রণের কারণে শহরে বৃদ্ধদের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। শহরগুলির মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্কও কমে গেছে, এবং এখানকার পরিবারগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্কও দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হলো পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি। সরকার এবং সমাজের উচিত, পরিবারগুলির মাঝে ভালোবাসা এবং যত্নের বন্ধন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।নৈতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা-মার প্রতি দায়িত্বশীল হয়।
পাশাপাশি, বৃদ্ধাশ্রমের মান উন্নয়ন এবং সেখানে বসবাসরতদের জন্য মানসিক সহায়তা দেওয়া দরকার। শুধুমাত্র বৃদ্ধাশ্রমই নয়, বরং পরিবার ও সমাজকে আরও সহানুভূতিশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে, যাতে বৃদ্ধরা সুখী এবং শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারেন।

Facebook Comments