banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 585 বার পঠিত

 

লকডাউনে দিনলিপি

লকডাউনে দিনলিপি-৩০শে মার্চ


হাসনিন চৌধুরী


লকডাউনে অলরেডি দম বন্ধ লাগা শুরু হয়েছে। ইচ্ছে হচ্ছে একটা রিকশা নিয়ে ছোট ভাই এর সাথে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই, সেই আগের দিনগুলোর মতো।

যদিও লকডাউন তো সবে শুরু হলো… গুনে দেখলাম, মাত্র পাঁচ দিন গেছে। আদৌ কতদিনে শেষ হবে এই বন্দী বন্দী খেলা? সপ্তাহ, মাসে, বছরে?

মাঝে মাঝে ভাবি, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, কাশ্মিরের মানুষেরা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস যখন গৃহবন্দী হয়ে থাকে, তাদের কেমন লাগে? বুক ফেটে গেলেও আপন জনদের দেখতে পায় না৷ খাবার ও ওষুধের দোকান বন্ধ থাকে। সাধারণ জ্বর, কাশির জন্যও ওষুধ পায় না?

কেমন লাগে, যখন বছরের পর বছর সে দেশে কোন উৎসব, আনন্দ উদযাপিত হয় না, তারাবী হয় না, হজ্জে যেতে পারে না বা অল্প কিছু লোক একত্র হয়ে ঈদের সালাত পরে?

দম বন্ধ লাগে না?

নাকি অভ্যেস হয়ে গেছে দম আটকে রাখার? বহু বছর তারা বুক ভয়ে শ্বাস নেয় না, হৃদয় থেকে শুধু দীর্ঘশ্বাস দেয়ায় অভ্যস্ত এরা।

এই নিরস্ত্র, অসহায় মানবসন্তানেরা কয়েক যুগ ধরে কেবল দীর্ঘশ্বাসই ফেলেছে, তাদের ভারী নিঃশ্বাসগুলো জমতে জমতে আজ আকাশ ছুঁয়েছে।

মনে আছে, সমুদ্রে ভেসে আসা দেড়/ দু বছরের আয়লান কুর্দির কথা?

সেই যুবকের কথা, যে বোমার আঘাতে প্রাণ হারানো অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে কবরে শুইয়ে দিয়েছিলো, স্ত্রীর সাথে সেদিন মাটি চাপা দিয়েছিলো জীবনের সকল আনন্দ আর স্বপ্নও।

সেই বাবাটার কথা ভুলে গেছেন, মৃত শিশুদের কোলে নিয়ে যিনি পাথরের মতোন বসে ছিলেন?

নিশ্চয় ভুলেন নি ঐ শিশুটির কথা? যে কিনা ছোট্ট জীবনে পৃথিবীবাসীর নিদারুণ নিষ্ঠুরতায় আশ্চর্য ও ব্যাথাতুর হয়ে, মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলো, “আমি সব বলে দেবো আল্লাহর কাছে!”

হায়, আফসোস….শিশুটি নিশ্চয় সব বলে দিয়েছে। তার সাথে সুর মিলিয়েছে জুলুমে জুলুমে কেঁপে ওঠা রুহের আর্তনাদ।

আমরাই শুধু ভুলে গিয়েছ, মজলুমের বদদুয়া আর আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই!

ভুলে গিয়েছি, কাবা ধ্বংস করতে আসা আবরাহার হস্তীবাহিনীকে কিভাবে সর্বশক্তিমান মালিক, তাঁর অতি ক্ষুদ্র সৃষ্টি, এক ঝাঁক পক্ষীবাহিনী দিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন।

কিভাবে তিনি অহংকারী নমরুদকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মশার কাছে।

এ যুগের পরাশক্তিরা যখন অন্যায় ভাবে হামলা করেছিলো একের পর এক দেশ, বাধা দেয় নি কেউ। তাবত পৃথিবী জুলুমকারীদের সাথী হয়েছিল।

হয় সরাসরি পক্ষ নিয়েছিলো, নতুবা মজলুমের চিতকার না শোনার জন্য কানে তুলো দিয়ে ডুবে গিয়েছিলো বিলাসে, ভোগে, অসাড় আনন্দ ও স্বার্থপরতায়।

আল্লাহ রশি ছেড়ে দিয়েছিলেন, এবার তার প্রায় অদৃশ্য এক সৃষ্টিকে পাঠালেন৷ চোখে দেখা যায়না এমন অস্তিত্বের ভয়ে কেঁপে উঠলো পুরো দুনিয়া।

এতদিন ধরে চলে আসা অন্যায়,ব্যভিচারিতা, সমকামীতা, মজলুমকে নিপীড়ন ইত্যাদি ছাপিয়ে, মৃত্যু ভয় আচ্ছন্ন করে ফেললো, ভোগবাদী জগতকে।

যে অভাব, মৃত্যু আতংক, লকডাউন দিয়ে শায়েস্তা করা হয়েছিলো অসহায়দের, আজ সেই একই ভয়াবহতা গ্রাস করেছে সমগ্র পৃথিবীকে।

চোখে দেখা যায় না এমন জীবানুর আঘাতে ধরাশায়ী হয়ে গেলো সকল পরাশক্তি ও বিশ্ব অর্থনীতি।

সিরিয়া আফগানিস্তানের মতো লাশের মিছিল লেগে গেলো দেশে দেশে।

দিল্লীর দাংগার সময়েও কি ভাবতে পেরেছিলাম, বিশ্ব রাজনীতির পট পরিবর্তন হতে বেশি দিন বাকি নেই? অচিরেই আমরা বুঝতে পারবো মহাপরাক্রমশালী স্বত্ত্বা কেবল একজনই!

তিনিই সেই রব, যিনি ‘হও’ বললেই, সব হয়ে যায়। পৃথিবীর প্রতি, এর মানুষের প্রতি এতোদিন যে অন্যায় হয়ে এসেছে, তার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিশোধ শুরু হয়ে গেছে।

দিল্লীতে মুসলিমদের যখন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছিলো, একটি কবিতার জজবায়, তখন তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল অনলাইন দুনিয়া।

চলমান অন্যায়ের প্রতিবাদে আবৃত্তিকার দৃপ্ত কণ্ঠে গজরে উঠেছিলেন,

তিনি বলেছিলেন, ” আসমান পে ইনকিলাব লিখ্যা যায়েগা।”

সেই কবিকে খুঁজে পেলে, বলতাম, আসমান পে ইনকিলাব লিখ্যা হো গ্যায়া…সাব বাদ দুয়া জামিন কি লোগো পে লাগ গ্যায়া..

দুনিয়াতে যা হচ্ছে… তা কি আমাদেরই হাতের উপার্জন নয়?

Facebook Comments