অপরাজিতবিডি ডটকম, ঢাকা : রাজধানীর জেডএইচ শিকদার মহিলা মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন সাউদিয়া আক্তার মিথি। গত বুধবার সকালে হাজারীবাগ সুলতানগঞ্জের ৩/৫ নম্বর সচিবের গলির বাসার ষষ্ঠ তলার একটি কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আরিফ নামের এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে তারা ওই কক্ষটি সাবলেট হিসেবে ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন। মিথির মৃত্যুর পর আরিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার আরিফ আদালতে স্বীকার করেছে, মোবাইল ফোনে তথ্য গোপন করে প্রতারণার প্রেমের সূত্র ধরে সে মিথিকে হত্যা করেছে।
হাজারীবাগ থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, আরিফ কিভাবে মিথিকে হত্যা করেছে জবানবন্দিতে তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। আদালত আরিফকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। সাক্ষী হিসেবে মিথি যে বাসায় থাকতেন সেই বাসার বাসিন্দা নুসরাত সাথী, মিথির বান্ধবী রোমানা নাজনীন ও তার কথিত প্রেমিক অনিও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মিথির সহপাঠী, পুলিশ ও স্বজন সূত্রে জানা গেছে, পাবনার সাঁথিয়ায় পাশাপাশি গ্রামে আরিফ ও মিথির বাড়ি। ভুল নম্বরে মোবাইল ফোন কল চলে যাওয়ার সূত্র ধরে মিথির সঙ্গে যোগাযোগ হয় আরিফের। বেকার আরিফ এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে বলে কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তোলে মিথির সঙ্গে। মিথিও আরিফের কথার জালে আটকা পড়ে প্রেমের ফাঁদে পা বাড়ান। একপর্যায়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন একসঙ্গে থাকার। বাড়িতে হোস্টেলে থাকার কথা জানিয়ে মিথি আরিফের সঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে থাকা শুরু করেন। এর পরই মিথির চোখ খুলতে শুরু করে। চাকরি না করে বাড়ি থেকে মিথির আনা টাকায় আরিফ আয়েশি জীবন কাটাতে থাকে। আরিফের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পর্যন্ত, তাও জেনে যান মিথি। এসব নিয়ে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপড়েন। ভুল শুধরে নতুন জীবনে ফিরতে চেয়েছিলেন মিথি। এটা জানতে পেরেই গত ১ এপ্রিল রাতে আরিফ তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
আরিফ জবানবন্দিতে বলে, রাতে মিথির বান্ধবী রোমানা ও তার কথিত স্বামী অনিসহ দীর্ঘ সময় আড্ডা দেয়। একপর্যায়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মিথির সঙ্গে তার ঝগড়া শুরু হয়। এ সময় তারা নিজেদের কক্ষে চলে যায়। ঝগড়ার বিষয়টি যেন বাইরে থেকে কেউ বুঝতে না পারে এ জন্য সে উচ্চ শব্দে গান বাজাতে থাকে। এ সময় তারা দুজন একে-অন্যের ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে আরিফ মিথির গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। বালিশচাপা দিয়েও রাখে কিছু সময়। মিথির মৃত্যু নিশ্চিত হলে সে গলায় ওড়না বেঁধে সিলিং ফ্যানে ঝোলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মিথির ওজন বেশি হওয়ায় তাকে ঝোলাতে ব্যর্থ হয়। পরে মেঝেতেই লাশ শুইয়ে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ বুধবার সকালে মিথির লাশ উদ্ধার এবং আরিফসহ অন্য তিনজনকে আটক করে।
এদিকে রাতেই মিথিকে পাবনার সাঁথিয়া এলাকায় গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
অপরাজিতবিডি ডটকম/আরআই/এ/০৮ এপ্রিল, ২০১৪.