banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 582 বার পঠিত

 

ঢং

ঢং


ডা.মিথিলা ফেরদৌস


ঢং বা ন্যাকামো মেয়েদের একটা অলংকার বলা যেতে পারে।এইটা মেয়েদের বাড়তি সৌন্দর্য বর্ধনে সাহায্য করে।যে মেয়ের এই অর্নামেন্ট নেই,তার সৌন্দর্যের কিছু ঘাটতি থেকেই যায়।এইটা কঞ্জেনিটাল বা একুয়ার্ড দুইভাবেই মেয়েদের আয়ত্বে আসতে পারে।যেভাবেই হোক এইটা আয়ত্বে আনা মেয়েদের জন্য অপরিহার্য।
কুত্তা,বিলাই,ইন্দুর,চিকা,তেলাপোকা, মাকড়শা এমন কি পিপড়া দেইখা কারো কান্ধে ঝাপায় পরা ঢংয়ের একটা উদাহরণ। এছাড়াও বিভিন্ন পদের ঢং আছে।তবে ঢং এমন হতে হবে যা দেখলে ছেলেদের মধ্যে মায়া মহব্বত আপনাতেই উথলায় উঠে।অবশ্য ঢং যে শুধু মেয়েদের আছে তা না।ছেলেদেরও ঢং আছে।তবে সেইটা ছেলেদের খুত হিসেবে গণ্য করা হয়।

জন্মগত ভাবেই হোক বা নিজে নিজে কোনভাবেই এই জিনিস আমি আয়ত্বে আনতে পারিনি।ফলে বাড়তি এই সৌন্দর্য থেকে ছোটকাল থেকেই বঞ্চিত।ঢংয়ের অভাবে তাই চিরকাল মানুষের মায়ামহব্বত থাইকা বঞ্চিত।

বিবাহের পর একদিন শ্বশুরবাড়ির সিঁড়িতে দুই বিড়ালের ঝগড়াঝাঁটি মারামারিতে আমার জামাই আর তার বড় ভাবীর চিল্লাফাল্লা লাফালাফি দেখে বিড়াল না দেইখা এদের দেখে প্রথম অবাক হই।জামাইকে জিগাই,”উনি মেয়ে মানুষ ভয় পাইছে স্বাভাবিক,কিন্তু তুমি বিড়াল দেইখা ভয় পাইলা কি মনে কইরা বুঝলাম না।” জামাই বিরক্ত,কয়,’ভয়ের আবার মেয়ে আবার ছেলে কি?’
তাইতো ভয়ের তো লিংগান্তর ঠিক হয় নাই,চাইপা যাই।

কিছুদিন পর আমার প্রচন্ড জ্বর হয়,জ্বরে ঠিক অজ্ঞান হবার আগেই শুনতে পাই,আমার জামাই বলতেছে,”ঢং করতেছো কেন?”আমার আর কিছুই মনে নাই।আমি নিজেকে খুঁজে পাই, ঢাকা মেডিকেলের একটা কেবিনের বদ্ধরুমে জ্ঞান ফিরে তাও ছয়দিন পর।জানতে পারি,আমাকে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড করেছিলেন ছয়জন মেডিসিনের প্রফেসর। এরপরেও আমার জ্বর কমেনা।সন্ধ্যা করে জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকতো পুরা রুম গরম হয়ে যেতো।স্যাররা অসংখ্য টেস্ট করালেন।কিছুই ধরা পরেনা।তিনমাস টানা জ্বর ছিলো।এইসময় আমার মনে আছে,আমি কারো সাথেই কথা বলতাম না,কেবিনের হলদেটে দেয়ালের দিকে ফাকা দৃষ্টি নিয়ে তাকায় থাকতাম।মাঝে মাঝে প্রচন্ড মাথা ব্যথায় মাথায় হাত দিয়ে নিজেই ব্যথা কমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতাম।আমার জামাই বুঝেছিল,আমি আসলে ঢং করতে জানিনা।

এত পর আমার আল্লাহ্‌ এর অশেষ রহমতে আর বড় কোন অসুখ বিসুখ কখনও হয়নাই।তবে মাঝে মাঝে জ্বর আসলে কাথা মুরি দিয়ে থাকি,সহ্যের বাইরে গেলে ঔষধ খেয়ে নিই।আবার সুস্থ হয়ে চাকরী সংসার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি।কাউকেই আমার জন্যে বিড়ম্বনায় পরতে দেইনা।

রুগীদের মধ্যে অনেককেই দেখি,সামান্য ব্যথা বা ব্যথা ছাড়াই লতায় পরে,সংগে আসা প্রেমিক বা জামাইয়ের উদ্বিগ্ন মুখ।তখন বুঝি ঢং দৈনন্দিন জীবনে কতটা অপরিহার্য ব্যাপার। ভালোই লাগে দেখতে।

তবে আমি আমার মত করে চলতেই পছন্দ করি।লতানো পরগাছা হয়ে বেচে থাকার মধ্যে আমি কোন আনন্দ খুঁজে পাই না।এইটা যেহেতু আমার ডেফিসিয়েন্সি, সেহেতু পরিবেশের সাথে সেইভাবেই আমাকে অভিযোজিত হতে হয়।

সবার সব কিছুই থাকেনা,কেউ অন্ধ,কারো হাত নেই,কারো পা নেই,কারো শীতে কাপড় নেই তবুও তারা তা মেনে নিয়েই সুখে বেচে আছে।আমার তো মাত্র ঢং নেই তাতে কি?

Facebook Comments