এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৫
নারীর জন্য আইন
(৩). মেয়ে ও বোনদেরকে মাওলা উত্তরাধিকারী মেনে নিয়ে অবশিষ্ট সম্পদ দেয়ার স্বপক্ষে মতামত না দিয়ে তাদেরকে নির্ধারিত হারে -একজনের জন্য অর্ধেক ও একাধিকের জন্য দু’তৃতীয়াংশ হিসাবে- হিস্সা দিলে হিসাবে গরমিল দেখা দেয়। যাকে ইলমুল ফারাইজে ‘আওল’ বলা হয়। যে আওলের কারণে কুরআনের ফারাইজ সংক্রান্ত সকল নির্দেশনা লঙ্ঘনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। হিসাবে গরমিল দেখা দেয়ার উদাহরণ নিম্নরূপ:
ছক নং – ১.
মেয়ে একজন হলে হিসাবে গরমিল দেখা দেয়ার উদাহরণ [ফুকাহাদের মতানুসারে] : ১২ ১৩ মা. আ সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা স্বামী মাতা পিতা মেয়ে ১ জন = = = = = মোট অংশ = = = = = মোট অংশ [আওলের কারণে হরের পরিবর্তন] = ৩ = ২ = ২ = ৬ = ১,৩৮,৪৬১.৫৪ টাকা = ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা = ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা =২,৭৬,৯২৩.০৮ টাকানোট: কুরআন অনুসারে মৃতের সন্তান থাকলে স্বামী এক চতুর্থাংশ এবং পিতামাতার প্রত্যেকে এক ষষ্টাংশ করে পাওয়ার স্পষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু একজন মেয়ে থাকলে সে মোট সম্পদের অর্ধাংশ পাবে বলে তারা মনে করেন। স্বামী, মাতা, পিতা ও একজন মেয়েকে এ হিসাবে হিস্সা দিলে মোট হিস্সার পরিমাণ দাড়ায়: {( + + + ) = ()}= , যা পাটী গণিতের হিসাবে শুদ্ধ নয়। এ হিসাবে স্বামী ১,৫০,০০০ টাকা, পিতা ১,০০,০০০ টাকা ও মাতা ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও ফুকাহাগণ হিসাবের গরমিল হওয়ার অযুহাতে সবাইকে একটু একটু করে কম দেয়ার কথা বলেন। কারণ তাদের সম্পদের ১ অংশের স্থলে অংশ ভাগ হয়ে গরমিল হতে দেখা যায়। সেজন্য তারা উপরোক্ত মাসআলায় স্বামীকে ১,৩৮,৪৬১.৫৪ টাকা পিতাকে ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা মাতাকে ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা ও মেয়েকে ২,৭৬,৯২৩.০৮ টাকা দিয়ে সমাধান করেন। অথচ তাদের নিজেদের সূত্রমতে মেয়েকে ৩,০০,০০০ টাকা দেয়ার কথা। কিন্তু হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতবাদের আলোকে অংশ ভাগ করলে হিসাবে গরমিল হবে না। তাঁর মতবাদের আলোকে উপরোক্ত মাসআলাটির সমাধান নীচের ছকে দেখুন:
ছক নং ২.
মেয়ে একজন হলে হিসাবে গরমিল না হওয়ার উদাহরণ [আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতানুসারে]: ১২ ২৪ ১৯ মা. তা. রা. সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা স্বামী মাতা পিতা মেয়ে ১ জন অবশিষ্ট অংশের = = = = এর = = = = = সর্বমোট অংশ = = = = = মোট অংশ (রদ্দের কারণে হরের পরিবর্তন) = ৬ = ৪ = ৪ = ৫ =১,৮৯,৪৭৩.৬৮ টাকা =১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা =১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা = ১,৫৭,৮৯৪.৭৪ টাকা নোট: কুরআনের বিধান অনুসারে মৃতের স্বামী ১,৫০,০০০ টাকা, মাতা ১,০০,০০০ টাকা ও পিতা ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা আর মেয়েকে অবশিষ্ট অংশের অর্ধেক ={৬,০০,০০০ – (১,৫০,০০০ + ১,০০,০০০ + ১,০০,০০০)}= ২,৫০,০০০২ = ১,২৫,০০০ টাকা দিলে অতিরিক্ত ১,২৫,০০০ টাকা অবশিষ্ট থেকে যায় যা পুনর্বার এ উত্তরাধিকারীগণই পাবেন। তাতে স্বামী মোট ১,৮৯,৪৭৩.৬৮ টাকা মাতা ১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা পিতা ১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা ও মেয়ে ১,৫৭,৮৯৪.৭৪ টাকা পেলন। এ রকম হিস্সা দিলে হিসাবের গরমিল দেখা দেয়ার কোন কারণ নেই। প্রথমে মাখরাজ হবে ১২, পরে উহাকে তাছহীহ করতে হয়েছে ২৪ দিয়ে। আর সম্পদ অতিরিক্ত থেকে যাওয়ার কারণে পুনর্বার তা এ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে পুন:বণ্টন হয়েছে। তাতে ভগ্নাংশের হর পরিবর্তিত হয়ে ১৯ হয়েছে। যা রদ্দের সূত্র অনুসারে হয়েছে। আর সম্পদের ১ অংশের স্থলে অংশও = ১ অংশই হয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল করার মত- তা এই যে, ফুকাহাদের মতানুসারে হিস্সা দিলে একজন মেয়েকে এত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হয়, যা মেয়ের স্থলে ছেলে হলে, সে ছেলেও পেত না। কারণ স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলে থাকলে সে সর্বোচ্চ অংশ পাবে, ৬,০০,০০০ টাকার সম্পদে তা টাকার অংকে ২,৫০,০০০ টাকা। অথচ তাদের হিসাবে একজন মেয়ে পায় ২,৭৬,৯২৩.০৮ (১ নং ছকে দেখুন) যা স্বাভাবিক বোধশক্তিতে গ্রহনযোগ্য নয়।