”
নারী জন্য আইন
ব্যাখ্যা করে তারা বলেন যে, সকল পুরুষ উত্তরাধিকারীগণ হলেন ‘আছাবা বিনাফসিহী’, যারা স্বনির্ভর অবশিষ্টাংশভোগী আছাবা। পক্ষান্তরে কন্যা ও বোনের মত নারী উত্তরাধিকারীগণ, যাদের জন্য নির্ধারিত হিস্সা আল্লাহ বলে দিয়েছেন বলে তারা মনে কেরন, তারা তাদের ভাইদের সাথে যৌথভাবে উত্তরাধিকারী হলে সে ভাইদের কল্যাণে তারা বোনেরাও আছাবায় পরিণত হন। এ রকম পরনির্ভরশীল আছাবাদেরকে বলা হয় ‘আছাবা বিগায়রিহী’। আর কন্যা সন্তানদের সাথে যদি মৃতের এক বা একাধিক বোন উত্তরাধিকারী জড় হন, তবে কন্যাগণ যবীল ফুরূজ ঠিকই থাকবেন, কিন্তু বোনেরা আছাবায় পরিণত হয়ে অবশিষ্ট সম্পদ লাভ করবেন। এ ধরণের আছাবা হওয়াকে তারা ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’ বলে অভিহিত করে থাকেন।গ. ফুকাহাগণ আরো বলেন: ‘সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত পাঠ কালে মনে হতে পারে যে, সন্তানের উপস্থিতিতে ভাই অথবা বোনেরা উত্তরাধিকারী নন। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। কারণ আয়াতে বলা হয়েছে: اِنِ امْـرُؤٌ هَـلـَكَ لـَيْـسَ لـَهُ وَلـَدٌ وَلـَهُ اُخْـتٌ فـَـلـَهَـا نـِصـْفُ مـَا تـَرَكَ وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘যদি কোন নি:সন্তান লোক মারা যায় এবং তার একজন বোন থাকে, তবে সে বোন মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তার অর্ধেক পাবে – এবং সে ব্যক্তিও তার বোনের (যদি মারা যায়) উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন সন্তান না থাকে।’’ প্রকৃতপক্ষে এ আয়াতে সকল সন্তানের কথা বলা হয়নি, বরং পুত্র-সন্তানের কথা বলা হয়েছে। কারণ এ আয়াতে ব্যবহৃত ‘ওলাদ’ শব্দের অর্থ হল পুত্র-সন্তান। কারণ এ রকম অর্থ গ্রহন না করলে উপরে বর্ণিত হাদীছ গুলোর সাথে এ আয়াতের সমম্বয় করা যায় না।’ পক্ষান্তরে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা. সহ কিছু সংখ্যক ছাহাবায়ে কেরাম ও অন্য একদল ফুকাহার মতে সন্তান পুত্র হোক অথবা কন্যা- কোন ধরণের সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন উত্তরাধিকারী বলে বিবেচিত হবেন না। যেমন বর্ণিত আছে: عَـنْ عَـطـَاءَ اَنَّ اِبْـنَ عَـبـاَّسٍ كـاَنَ يـَقـُوْلُ اَلـْمـِيـْرَاثُ لِـلـْوَلـَدِ فـَاِنـْتـَزَعَ الـلـََّهُ تـَعـَالـَي َمـِنـْهُ لِـلـزَّوْجِ وَالـْوَالـِدِ হযরত আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ইবনে আব্বাস বলতেন: ‘মালের হকদার হলেন সন্তানগণ। সেখান থেকে আল্লাহ পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রীদের জন্য কিছু সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছেন।’ (আল মুছান্নাফ)
৫। তারা ‘আছাবা বিনাফসিহী’, ‘আছাবা বিগায়রিহী’ অথবা ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’- প্রভৃতি পরিভাষার সমর্থনে কোন বক্তব্য দেন নি। আমরা প্রথম দলের চাইতে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. প্রমুখদের মতামতকে অধিক যুক্তিসঙ্গত ও সমর্থনযোগ্য বলে মনে করি। আমাদের নিম্নোক্ত আলোচনায় প্রমাণীত হবে যে, কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন প্রকার উত্তরাধিকারী নন। ক. কন্যা সন্তানদেরকে ‘যবীল ফুরূজ’ বিবেচনা করা সংক্রান্ত তাদের প্রথম দাবী নিুোক্ত কারণে সঠিক নয়। (১). মেয়েরা ছেলেদের মত মাওলা (আছাবা) হতে পারে বলে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন কুরআন শরীফে স্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন। আল্লাহ বলেন: وَلـِكـُلٍّ جَـعَـلـْنـَا مَـوَالِـيَ مِـمَّـا تـَرَكَ الـْوَالِـدَانِ وَاْلاَقـْرَبـُوْنَ “আর পিতামাতাও আত্মীয় স্বজনেরা যা কিছু ছেড়ে যাবেন তাতে (পুরুষ ও নারীর) প্রত্যেককে আমরা মাওলা বানিয়েছি।” (সূরা নিসা-৩৩)। এ আয়াতে বর্ণিত ‘মাওলা’ শব্দের অর্থ হল অবশিষ্টাংশভোগী উত্তরাধিকারী, যাকে অনেকেই ‘আছাবা’ নাম দিয়ে থাকেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. কাতাদা রাহ. মুজাহিদ রাহ. ইবনু যায়েদ রাহ. সহ বড় বড় তাফসীরকারকদের এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য দেখা যায়। (দেখুন তাফসীরে তাবারী, বাগাবী, ফাতহুল কাদীর, জালালাইন প্রভৃতি)। আর কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে অপর কেউ মাওলা হওয়ার অধিকারী নন। যেমন সন্তানের পরে সর্বাধিক শক্তিশালী মাওলা হলেন পিতা। এ কারণে পিতার উপস্থিতিতে ভাইবোন উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। কিন্তু সে পিতাও কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে মাওলা হওয়ার অধিকারী নন। বরং তখন তিনি নির্ধারিত হিস্সাদার ‘যবীল ফুরূজ’ হিসাবে এক ষষ্টাংশ পাবেন। আল্লাহ বলেন: وَلاَبـَوَيـْهِ لـِكـُلِّ وَاحِـدٍ مِـنـْهُـمَـا الـسُّـدُسُ مِـمَّـا تـَرَكَ اِن كـَانَ لـَهُ وَلـَدٌ “আর পিতামাতার প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তাতে এক ষষ্টাংশ করে পাবেন, যদি মৃতের কোন সন্তান থাকে।” (সূরা নিসা-১২)। পিতার পরে সর্বাধিক শক্তিশালী মাওলা হলেন ভাই। কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সে ভাই কোন হিস্সাই পান না। আল্লাহ তা’আলা বলেন: وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘এবং সে ব্যক্তিও (ভাই) তার মৃত বোনের উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন সন্তান না থাকে।” (সূরা নিসা- ১৭৬)। কারণ মেয়েরা নিজেরা মাওলা হওয়ার কারণে অপরাপর মাওলাদেরকে তারা দূরে সরিয়ে দেয়। তবে কথা হল এই যে, একজন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের সমান শক্তিশালী মাওলা নন। বরং দু’জন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের সমান। আর একজন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের অর্ধেক হিস্সার অধিকারী। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন: لـِلـذَّكـَرِ مِـثـْلُ حَـظِّ اْلأُنـْثـَيَـيـْنِ ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে।” (সূরা নিসা-১১)। আল্লাহ আরোও বলেন: وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهَـا الـنـِّصْـفُ ‘‘ছেলেমেয়েদের মধ্যে যদি একজন মাত্র মেয়ে হয়, তাহলে সে পাবে অর্ধেক।” উহার অর্থ হবে وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهـَا نـِصـْفُ حَـظِّ الـذَّكـَرِ অর্থাৎ ছেলেমেয়েদের মধ্যে যদি একজন মাত্র মেয়ে হয়, তাহলে সে পাবে- একজন ছেলে থাকলে সে যতটুকু পেত- তার অর্ধেক। আর দু’য়ের অধিক কন্যা সন্তান হলে তারা পাবে দু’তৃতীয়াংশ ঠিকই, কিন্তু বাকী এক তৃতীয়াংশ পাবেন পিতামাতা, যা আয়াতেই উল্লেখ আছে। উহা দ্বারা প্রকৃতপক্ষে নির্ধারিত হিস্সা বুঝায় না। তাছাড়া কন্যাগণ যদি নির্ধারিত হিস্সা ভোগ করে, তাহলে পুত্রগণও কন্যাদের সমান নির্ধারিত হিস্সা ভোগ করতে হবে। কারণ আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে, ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে।” দু’জন কন্যা সন্তানের অতিরিক্ত কোন হিস্সা পুত্রকে দেয়া হয়নি। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরী মনে করছি, তা হল: لـِلـذَّكـَرِ مِـثـْلُ حَظِّ اْلأُنـْثـَيـَيـْنِ আয়াতাংশ দ্বারা মূলনীতি বর্ণণা করা হয়েছে এবং فـَاِنْ كـُنَّ نـِسَـاءً فـَوْقَ اثـْنـَتـَيـْنِ فـَلـَهـُنَّ ثـُلـُثـَا مـَا تـَرَكَ আয়াতাংশ দ্বারা পূর্বের আয়াতাংশের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ কারণে ব্যাখ্যা অংশের শুরুতে فَ বর্ণটি প্রয়োগ করা হয়েছে, যাকে ব্যাখ্যাদানকারী বর্ণ বা اَلـْفـاَءُ لـِلتـَّفـْسِـيـْرِ বলা হয়। সুতরাং আয়াতের এ অংশ দিয়ে নতুন কোন মূলনীতি নির্ধারিত হবে না বরং পূর্বের আয়াতাংশের বিশ্লেষণ ও তাফসীর হবে। এ কারণেই ব্যাখ্যা অংশে দু’জন কন্যার হিস্সার কথা বলা হয়নি। কারণ ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে”- বলার মাধ্যমে দু’জন কন্যার হিস্সার কথা বর্ণিত হয়েছে।