banner

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 344 বার পঠিত

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -২

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -২


নারীর জন্য আইন


তারা বলেন, আল্লাহর নির্ধারিত হিস্সার পরে বাকী অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ মেয়েরা পেতে পারে না। সুতরাং বাকী সম্পদ লাভ করবেন এমন উত্তরাধিকারীগণ যাদের জন্য নির্ধারিত কোন হিস্সা নেই বরং তারা অবশিষ্ট সম্পদ লাভ করবেন। এ ধরণের উত্তরাধিকারীদেরকে মাওলা (আছাবা) বলা হয়। তারা বলেন, কন্যা সন্তান মাওলা হতে পারে না। তাই কন্যাদেরকে নির্ধারিত হিস্সা প্রদান করার পরে যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে, তা লাভ করবে মৃতের অপরাপর আছাবাগণ (মাওলা)। আর ভাই-বোন হলেন সে আছাবা, যারা বাকী সম্পদ লাভ করবেন। কারণ হাদীছ শরীফে এসেছে: عـَنْ اِبـْنِ عَـبَّـاسٍ رَضِـيَ الـلـَّه عـَنـْهـُمـَا قـَالَ قـَالَ رَسـُولُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ اِقـْسِـمُـوْا الـْمَـالَ بَـيـْنَ اَهْـلِ الـْفَـرَائِـضِ عَـلـَى كِـتـَابِ الـلـَّهِ فـَمَـا تـَرَكـَتِ الـْفـَرَائِـضُ فـَلاَوْلـَى رَجُـلٍ ذَكـَرٍ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘তোমরা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ বন্টন কর আল্লাহর কিতাব মোতাবেক। যে সম্পদ অবশিষ্ট থেকে যাবে, তা পাবে ঘনিষ্ঠতর পুরুষ লোক।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ)

১। তাছাড়া অন্য হাদীছে এসেছে: عـَنْ جـَابـِرٍ قـَالَ جَاءَتْ اِمْـرَأَةُ سَـعْـدِ بْـنِ الـرَّبـِيـْـعِ بـِاِبـْنـَتـَيـْهـَا مـِنْ سَـعْـدٍ إلـَى رَسُـوْلِ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّـمَ فـَقـَالـَتْ يـَا رَسُـوْلَ الـلـَّهِ هـَـاتـَانِ اِبْـنـَتـاَ سَـعـْدِ بْـنِ الـرَّبـِيـْعِ قـُتـِلَ أَبـُوْهـُمَا مَـعَـك يَـوْمَ اُحـُدٍ شَـهـِيـْدًا وَاَنَّ عَـمَّـهُـمَا أَخَـذَا مَالـَهُـمَا ‏ فَـلَـمْ يَـدَعْ لـَهُـمَا مـَالاً وَلاَ تـُنـْكـَحـَانِ إلاَّ وَلـَهـُمَا مـَالٌ قـَالَ يـَقـْضِيْ الـلـَّهُ فـِيْ ذَلِـكَ فـَنـَزَلـَتْ آيـَة ُ الـْمِـيْـرَاثِ فـَبَـعَـثَ رَسُـوْلُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ اِلـَى عَـمِّـهـِمَا فـَقـَالَ اِعْـطِ اِبـْنـَتـَىْ سَـعْـدٍ الـثــُّلـُثـَيْـنِ وَاِعْـطِ أُمـَّهُـمَا الـثــُّمُـنَ وَمـَا بَـقـِيَ فـَهـُوَ لـَكَ হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূল সা. এর কাছে সা’দ বিন রাবী’য় রা. এর স্ত্রী তার দু’জন মেয়েকে নিয়ে এসে আরজ করলেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল, সা’দ বিন রাবী’য় রা. আপনার সাথে উহুদ যুদ্ধে গিয়েছিলেন। সে যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। এই তার দু’মেয়ে। তাদের সম্পদ তাদের চাচা নিয়ে গেছে; তাদের জন্য কিছুই বাকী রাখেনি। সম্পদ না থাকার কারণে তাদের বিয়েও দেয়া যাবে না।’ রাসূল সা. বললেন: ‘আল্লাহ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন।’ এর পরেই উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সা. তাদের চাচার কাছে খবর পাঠিয়ে বললেন: ‘সা’দের দু’মেয়েকে দু’তৃতীয়াংশ দিয়ে দাও এবং তাদের মাতাকে এক অষ্টমাংশ প্রদান কর। আর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা তুমি পাবে।’ (সুনানু আবু দাউদ, তিরমিযী, সুনানু ইবনি মাজাহ, মুসতাদ্রাক প্রভৃতি)

২। এ হাদীছে মেয়েদেরকে নির্ধারিত হিস্সা দেয়ার পরে অবশিষ্ট অংশ রাসূলুল্লাহ সা. ভাইকে দিয়েছেন যা প্রমাণ করে যে, কন্যা সন্তানের সাথে ভ্রাতাগণও অবশিষ্ট হিস্সা পান।খ.       কন্যাদের সাথে বোনেরাও হিস্সা পায় বলে ছাহাবায়ে কেরামের একাংশ ও অধিকাংশ ফুকাহাদের যে মতামত রয়েছে, তার স্বপক্ষে কি যুক্তি ও দলীল রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে একটি দলীল হল নিুোক্ত হাদীছ। বর্ণিত হয়েছে: عـَنْ اَبـُوْقـَيـْسٍ قـَالَ سَـمـِعـْتُ هـُذَيـْلَ بـْنَ شـُرَحـْبـِيـْلَ يـَقـُوْلُ سـُئـِلَ اَبـُوْ مـُوْسـَى عـَنْ اِبـْنـَةٍ وَاِبـْنـَةِ اِبـْنٍ وَاُخـْتٍ فـَقـَالَ لـِلاِبـْنـَةِ الـنـِّصْـفُ وَلـِلأُخـْتِ الـنـِّصْـفُ وَائـْتِ اِبـْنَ مـَسـْعـُوْدٍ فـَسـَيـُتـَابـِعـُنـِى فـَسـُئـِلَ اِبـْنُ مـَسـْعـُوْدٍ وَاُخـْبـِرَ بـِقـَوْلِ اَبـِىْ مـُوْسـَى فـَقـَالَ لـَقـَدْ ضَـلـَلـْتُ اِذَنْ وَمـَا اَنـَا مـِنَ الـْمـُهـْتـَدِيـْنَ أَقـْضِـيْ فـِيـْهـاَ بـِمـَا قـَضـَى الـنـَّبـِيُّ صَـلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسـَلـَّمَ لـِلاِبـْنـَةِ الـنـِّصْـفُ وَلاِبـْنـَةِ اْلاِبـْنِ الـسـُّدُسُ تـَكـْمـِلـَةَ الـثـُّلـُثـَيـْنِ وَمـَا بـَقـِيَ فـَلـِلأُخـْتِ فـَأَتـَيـْنـاَ اَبـاَمُـوْسـَيْ فـَاَخـْبـَرْنـاَهُ بـِقـَوْلِ اِبـْنِ مـَسـْعـُوْدٍ فـَقـَالَ لاَ تـَسـْأَلـُوْنـِيْ مـَا دَامَ هـَذَا الـْحـَبـْرُ فـِيـْكـُمْ ‘হযরত আবু কায়েস রাহ. বলেন: আমি হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হযরত আবু মূসা আশআরী রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, যদি একজন মেয়ে, একজন ছেলের তরফের নাতিন ও একজন বোন থাকে, তাহলে কে কত হিস্সা করে পাবে? তখন তিনি বললেন: ‘মেয়ে অর্ধাংশ পাবে আর বাকীটুকু পাবে বোন। তুমি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ এর কাছে গিয়ে দেখতে পার, তিনিও আমার অনুসরণ করবেন।’ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. কে জিজ্ঞাসা করলে এবং আবু মুসা রা. এর মতামতের কথা জানালে তিনি বললেন: ‘আমি সঠিক পথের দিশা না পেলে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। আমি এমন রায় দেব যে রকম রায় দিয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ সা.। মেয়ে অর্ধাংশ পাবে, নাতিন পাবে এক ষষ্টাংশ যাতে করে দু’জনের হিস্সা মোট দু’তৃতীয়াংশ হয়। আর বাকীটুকু পাবে বোন।’ আমরা হযরত আবু মূসা আশআরী রা. এর কাছে ফেরত গিয়ে তার কাছে ইবনু মাসউদ রা. এর রায়ের কথা জানালে তিনি বললেন, ‘এ পন্ডিত যতদিন আছে, ততদিন আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা কর না।’ (ছহীহ বুখারী, তিরমিযী, মুসতাদ্রাক)

৩। তাদের আরেকটি দলীল ফারাইজের গ্রন্থাবলীর সুত্রে জানা যায়। সে দলীলটি হল, রাসূলুল্লাহ সা. এর কথিত হাদীছ। যেমন বর্ণিত হয়েছে: اِجـْعـَلـُوْا اْلاَخـَوَاتِ مـَعَ الـْبـَنـَاتِ عـَصَـبـَةً ‘তোমরা মেয়েদের সাথে বোনদেরকে আছাবা বানাও।’ (সিরাজী, আল বাহরুর রায়ীক)

৪। উপরোক্ত বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে ফুকাহা ও ফারাইজবিদগণ আছাবা (মাওলা) উত্তরাধিকারীগণকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন।

১. ‘আছাবা বিনাফসিহী’,

২. ‘আছাবা বিগায়রিহী’ এবং

৩. ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’।

চলবে..

Facebook Comments