banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 464 বার পঠিত

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব-১

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -১


নারীর জন্য আইন


অধিকাংশ সাহাবাগণের মতামতের ভিত্তিতে এবং কুরআনের সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতের আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, “মৃত ব্যাক্তির যদি স্বামী বা স্ত্রী না থাকে, তার যদি এক বা দুই জন কন্যা সন্তান থাকে তাহলে তারা প্রথমত দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তি পাবে এবং রদের ভিত্তিতে বাকী সম্পত্তিটুকু পাবে। যদি মৃত ব্যাক্তি কালালা (নিঃসন্তান) হয় তাহলে মৃত ব্যাক্তির সম্পদের অংশ থেকে তার ভাই অথবা বোন পাবে। এখানে কালালার ব্যাপারে বলা হচ্ছে। হযরত কাতাদাহ্ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “কালালা এমন ব্যাক্তি যার অধঃস্থন ও উর্দ্ধতন কেউ নেই। অর্থাৎ, যারা পিতা বা দাদা অথবা ছেলে কিংবা মেয়ে কেউ নেই (ইব্নে জাবির)। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর (রা.) এর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, আমি যা বলেছি সঠিক বলেছি (আমি বললাম) আপনি কি বলেছেন? তখন তিনি বললেন, কালালা হলো এমন লোক যার কোন সন্তান নেই। হানাফী মাজ্হাবের অনুসারী কিছু আলেমগণ কুরআনের আয়াতের বিপরীতে কিছু দূর্বল হাদীসের ভিত্তিতে মৃত ব্যাক্তির কন্যাদের কে তার সম্পদের অর্ধেক প্রদান করে বাকী অর্ধেক মৃত ব্যাক্তির ভাই অথবা বোনকে প্রদান করে। সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত নাজিল হয়, রাসূল (সা.) এর যুগের শেষ দিকে অর্থাৎ বিদায় হজ্জ্বের সময়। যাকে গ্রীষ্মকালীন আয়াত নাম দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আয়াত নাজিল হবার পরে মেয়ে সন্তান থাকা অবস্থায় রাসূল (সা.) ভাই বোনকে অংশ দিয়েছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং কুরআন ও হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধও নেই। কিন্তু বড়ই দূর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমাদের দেশ সহ দেশে দেশে মেয়ে সন্তান হলে তার সাথে ভাই – বোনকে ও সম্পত্তিতে অংশীদার করা হয়। যা সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতের সরাসরি লংঘন বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া উহা নারীর প্রতি সুস্পষ্ট বৈষম্য। কুরআন উহা অনুমোদন করে না। বরং এ সর্বশেষ আয়াতের মাধ্যমে পূর্বেকার বিধানগুলোকে মানসূখ করা হয়েছে। মানসূখ বিধানকে বাতিল করে এ ১৭৬ নং আয়াতের বিধানের মাধ্যমে ফারায়েজের সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার: একটি ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গি মাওলানা সৈয়দ জিল্লুর রহমান মানুষ মরণশীল।

একদিন সবাইকে মরতে হবে। সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হবে। মৃত্যু পরবর্তী কর্মকান্ডের মধ্যে সম্পদ বন্টণ এবং উত্তরাধিকারই প্রধান কাজ। উত্তরাধিকারী আত্মীয়গণের মধ্যে কিছু আত্মীয়ের উত্তরাধিকার শর্তহীন ও প্রশ্নাতীত। যেমন ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রী। আবার কিছু সংখ্যক আত্মীয় এমন আছেন, যাদের উত্তরাধিকার শর্তহীন নয় এবং যাদের উত্তরাধিকার নিয়ে চিন্তাশীল মনিষীদের মধ্যে ভিন্নমত ও বিতর্ক রয়েছে। কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোনদেরকে উত্তরাধিকারী গণ্য করে হিস্সা প্রদান করা এমন একটি বিতর্কিত বিষয়।মৃতের সন্তানদের মধ্যে যদি এক বা একাধিক কন্যা সন্তান থাকে এবং তাদের সাথে মৃতের ভাইবোনও বর্তমান থাকেন, তাহলে এ এতিম কন্যাদের পাশাপাশি শক্ত-সামর্থ ভ্রাতা-ভঙ্গিগণ উত্তরাধিকারী গণ্য হবেন কি না, তা নিয়ে মনিষীদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিতর্ক রয়েছে। হযরত উমার রা, ইবনু মাসঊদ রা. ও আবু মুসা আশআরী রা. সহ একদল ছাহাবায়ে কেরাম ও বিরাট সংখ্যক ফুকাহাগণ কন্যাদেরকে নির্দিষ্ট হারে হিস্সা দেয়ার পরে অবশিষ্ট অংশ ভাইবোনদেরকে প্রদান করার পক্ষে মত প্রকাশ করে থাকেন। তাদের মতের সমর্থনে নিুোক্ত প্রমাণাদি তারা পেশ করেন:ক.       তাদের বিবেচনায়, মেয়েরা হল এমন উত্তরাধিকারী যাদের জন্য নির্ধারিত হিস্সা রয়েছে। যাকে ইলমুল ফারাইজে বলা হয় ‘যবীল ফুরূজ’। কারণ, তারা বলেন, মেয়ে একজন হলে সে অর্ধেক সম্পদ পায়, একাধিক হলে পায় দু’তৃতীয়াংশ। যেমন আল্লাহ তা’লা বলেন: فـَاِنْ كـُنَّ نـِسَـاءً فـَوْقَ اثـْنـَتـَيـْنِ فـَلـَهـُنَّ ثـُلـُثـَا مَـا تـَرَكَ وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهَـا الـنـِّصْـفُ وَلأَبـَوَيـْهِ لـِكـُلِّ وَاحِـدٍ مِـنـْهـُمـَا الـسُّـدُسُ مِـمـَّا تـَرَكَ اِنْ كـَانَ لـَهُ وَلـَدٌ ‘‘সুতরাং তারা যদি দু’য়ের অধিক কন্যা সন্তান হয়, তাহলে তারা পাবে দু’তৃতীয়াংশ যা কিছু সে রেখে যাবে তা থেকে। আর যদি সে একজন নারী হয়, তাহলে সে পাবে অর্ধেক। এবং পিতামাতার প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তাতে এক ষষ্টাংশ করে পাবেন, যদি মৃতের কোন সন্তান থাকে।” (সূরা নিসা-১১)।

চলবে…

সংগ্রহঃ কানিজ ফাতিমা আপুর ফেসবুক ওয়াল থেকে…

Facebook Comments