banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 713 বার পঠিত

টাঙ্গাইলে বৈশাখীর ব্যস্ততা

tat shilpo pic-d_20233_0

অপরাজিতাবিডি ডটকম, টাঙ্গাইল: আসছে পহেলা শৈাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। দিনটিকে কেন্দ্র করে বাংলার ঘরে ঘরে মহোৎসব। সরকারি-বেসরকারি  সংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও দিনটি উদযাপন করে ধুমধামের সাথে। দিনটি যেন বাঙালি জাতির কাছে চির চেনা। ধর্মীও অনুষ্ঠানের চেয়েও সার্বজনীন উৎসব হিসেবে দিনটি এখন আনন্দ উৎসবে পরিনত হয়েছে। আর এই আনন্দকে আরও  আনন্দময় করতে চাই নতুন কাপড়। নারীর চাই নতুন শাড়ী। নারীদের বৈশাখী সাজে সাজাতে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী এখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। নববর্ষকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল শাড়িতে যোগ হয়েছে বাহারি রঙ আর নতুন কারুকাজ। বৈশাখের আগেই নিপুন হাতে বৈশাখী শাড়ি তৈরি শেষ করতে হবে। এ কারণেই মুলত তাঁত পল্লী এখন উৎসব মূখর আর তাঁতীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। টাঙ্গাইল সদরের বাজিদপুর, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ও চন্ডী ও কালিহাতীর বল্লা রামপুরের তাঁত সমৃদ্ধ এলাকায় একই চিত্র দেখা যায়। ভোর হতে শুরু হয় তাঁতের খটখটি শব্দ। রাতভর কাজ করেও তাঁতীর ক্লান্তি নেই। প্রতিযোগিতা একটাই, উৎপাদন যত বেশী হবে, সাপ্তাহিক বিল তত বেশী পাবে।

 

এক সময় দেশীয় শিল্পিদের নিপূন হাতে তৈরি মসলিন কাপড় দেশ বিদেশী রমনীদের নজর কেড়েছিল। সময়ের বিবর্তনে পূরনো মসলিনের কথা আধুনিক নারীদের স্মৃতিতে ধারন না থাকলেও বর্তমানে টাঙ্গালের তৈরি তাঁতের শাড়ী সেই মসলিনের মতই দেশ বিদেশী রমনীদের মনে স্থান করে নিয়েছে। এজন্যই প্রবাদ রয়েছে “ নদী নালা খাল বিল গজারীর বন টাঙ্গাইলের শাড়ী তার গর্বের ধন” আর এই গর্বের ধন এমনভাবে হারাতে বসেছিল যা দেখবার কেও ছিলনা । সুঁতার দাম বৃদ্ধি,কারিগর ও মহাজনদের মধ্যে লাভ্যাংশের অসম বন্টন আর কারিগরের অভাবে তাঁত শিল্পের গত দু-বছর ছিল সংশয়ে। সুঁতার দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে মূল্যসিমা হাতের নাগালের বাহিরে চলে আসাতে চরম বিপর্যয়ে ছিল টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প। মিডিয়াতে সুতার দাম নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের জুরালো প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও সুতার দাম কমার লেশমাত্র চিহ্ন ছিলনা। অন্য দিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশিলতা বিশেষ করে হরতাল অবরোধ, জ্বালাও পোড়াও  তাঁতশিল্পের ওপর মারাত্বকভাবে প্রভাব পড়েছিল। সুঁতা আছে, কারীগর নেই। কারীগর আছে তো হরতালে সুঁতা আসছে না। কাপড় উৎপাদন হচ্ছে অথচ দুর-দূরান্ত থেকে মহাজন আসতে পাড়ছে না।

 

তাঁত শিল্প সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক জানান, গত দু-বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা তাঁতশিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। সেতু, ছাইহাম, উত্তরা, সপছিল, কটন, জরি, রেয়ন, পাকুয়ান সহ সব ধরনের সুতার দাম তাঁত মালিকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে এসেছে। বর্তমানে জরি ৪শ৫০ টাকা থেকে ৭শ টাকায়, পাকুয়ান ১৬শ থেকে ২৫শ, ৩০ টাকা মুরা সতার বর্তমান মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ৪০ কাউন্টের ১১শ টাকার সুতা ২হাজার টাকা, ছাইহাম ১৫শ থেকে ২৬শ টাকা । বিশ্ববাজারে সুঁতার দাম যতটানা বাড়ছে তার চেয়ে দ্বিগুন বাড়ছে দেশীয় বাজারে ।

 

তুলার দামের চেয়ে সুতার দাম সংগতি না থাকায় সিন্ডিকেটকে দায়ি করেন তিনি। স্পিনিং মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে বাড়াচ্ছে তাঁত শিল্পের প্রধান কাচামাল সুতার দাম। তুলার দামের সাথে অযোক্তিক ভাবে  সুতার দাম বেড়েই চলছে।  সুতার মুল্যের নিয়ন্ত্রনহীন উর্ধ্বগতির কারনে বহুমুখী রপ্তানী দ্রব্য হিসেবে টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প চরম ভাবে মার খাচ্ছে।

 

তবে শাড়ির বর্তমান বাজার সম্পর্কে স্পস্ট ধারনা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, একদিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীলতায় ফিরে এসছে অন্যদিকে আসছে পহেলা বৈশাখ। সব মিলিয়ে তাঁত শিল্পের মন্দা অবস্থা অনেকটাই কেটে উঠেছে। উৎপাদন ও বাজার উভয়ই ভাল যাচ্ছে। নববর্ষকে কেন্দ্র করে বাজারে নামছে নতুন শাড়ি।  ভিন্ন বুটি আর নতুন নকশায় তৈরি এই শাড়ি শুধু বৈশাখ উৎসবের জন্য।
দেশের সবচেয়ে বড় তাঁতের শাড়ির হাট টাঙ্গাইলের করটিয়া ঘুরে দেখা যায়, তাঁতিরা তাদের উৎপাদিত কাপড় নিয়ে প্রতিযোগীতায় নেমেছে। স্থানীয় ও দূর থেকে আসা অধিকাংশ ক্রেতাদের চাহিদাই এখন বৈশাশের শাড়ি। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে অনেকটাই উপযোগি টাঙ্গাইল শাড়ি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তাঁতী জানালেন ভিন্ন সুর। ভারতে টাঙ্গাইল শাড়ির কদর থাকায় অবৈধ পথে মহাজনরা পাচার করছে দেশীয় এ শাড়ি। আর এ পথেই আসছে ভারতীর সুতা। এতে মহাজনেরা গড়ছে প্রাসাদ আর সাধারণ ব্যবসায়ীরা এ শিল্প থেকে পড়ছে ছিটকে । সরকার বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্য ভ্যাট থেকে। অনেক অসাধূ ব্যবসায়ীরা আবার ভারত থেকে আনা কম মূল্যের শাড়ি টাঙ্গাইল শাড়ি হিসেবে চালানো চেষ্টা করছে। এতে করে ক্রেতারা টাঙ্গাইল শাড়ির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। ভ্যাট শব্দটা এড়িয়ে গেলেও ভারতের সাথে শাড়ি ব্যবসার সম্পৃক্ততা নির্ধিদায় স্বীকার করলেন তাঁত শিল্প সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক ও সাধারণ সম্পাদক নীলকমল বসাক। এমনতবস্থায় সুতার দামসহ তাঁত শিল্পের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য কমিয়ে আনা এমনকি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সুনজরই তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখার একমাত্র উপায় বলে স্থানীয় তাঁতশিল্পীদের ধারনা।

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরআই/এ/০৭এপ্রিল, ২০১৪.

Facebook Comments