banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 524 বার পঠিত

 

Sexual অ্যাবিউজ নিয়ে সচেতন হই

Sexual অ্যাবিউজ নিয়ে সচেতন হই


ফাতেমা শাহরিন


আমার কিছু গন্ধ মনে আসলেই বমি আসে, কিছু স্বাদ জ্বিহ্বায় লেগেছিল ভাবলেই গা গুলিয়ে যায়, আর কিছু স্পর্শ কথা কল্পনা করলে আমি ঘুমাতেই পারি না ম্যাম, কিছু মূহূর্ত আবছা অস্পষ্ট অশরীরি কিছু মানুষের মুখ। উফ, আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। এই স্মৃতি গুলো ঘুমাতে দেয় না৷ দুঃস্বপ্ন হানা দেয়। ঘুরে বেড়ায় ব্যস্ত মনের আনাচে কানাচে। বিশ্বাস করুন আমার এই বিষয় নিয়ে একদম কথা বলতে ইচ্ছে করে না। আমি এস এস সিতে A+ পেয়েছি, এইস এস সি A+। সব খানে গোল্ডেন প্লাস। আর এখন সবচেয়ে ভালো সাবজেক্ট নিয়ে, সবচেয়ে ভালো পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ছি ম্যাম। আমি তো সব কিছু জয় করে এসেছি ম্যাম। এখন কেন ফ্লাসব্যাক আটকাতে পারছি না? কেন ছোট কালের সেই পিশাচ আমার চেহারায় ভেসে বেড়াচ্ছে? জানেন, আমি দুই দিন অজান্তে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি। জ্ঞান ফিরে আমার কিছুই মনে থাকে না। আমি কি আমার সমস্ত স্মৃতি হারিয়ে ফেলছি? আমি কি আর কখনও স্বাভাবিক হবো না।

“ম্যাম আমি আর পারছি না”।

অবসরের মূহূর্তে হঠাৎ কে যেনো মনের দরজায় চিৎকার দিচ্ছে। আর আমি বেকুল হয়ে সমাধানের করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছি। একূল পেলে অকুল পাই না, নীল দরিয়ার হাবডুবু খাই প্রায়স। কিন্তু মন তাকে কিছুতেই হারাতে চায় না, পিছু ধাওয়া করে। কাউন্সেলিং শুরু করেছি ছয় মাস হলো। কেস গুলো আমার মনে এতো খেলা করে। আমি আমার মতো জ্ঞান খুঁজি। জীবনের ব্যাস্ততা তাকে ফিরিয়ে আনে বাস্তবতায়। কখনো স্মৃতির সাথে চলে লুকোচুরি খেলা।

সত্যি হলো উপরের ঘটনাটি।

কিন্তু সৈকতে বসে মিষ্টি রোদ আমি গায়ে লাগাই ইচ্ছে করে। হয় তা বাস্তবে, নয়ত ইমাজারি রিল্যাক্সজেশন করে। একটু হাওয়ার পরশ, এক পশলা বৃষ্টি পটে আঁকা ছবির মত কারো প্রশান্তিকর হাসি, এটাই প্রাপ্তি আমার। একটা ঘন্টা পর যখন কেউ বলে আপু / ম্যাম / ম্যাডাম “খুব ভালো লাগছে”। “এখন অতো অস্বস্ত্বির লাগছে না”। “আমি এখন দৈনন্দিন কাজ একটু করতে পারছি, আগে তো একদমই পারতাম না”। ” আমার মনে হচ্ছে আমি এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো”।

গল্প গুলো টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। ডাক্তারের কাছে মানুষ টাকা ঢালতে যায় যদিওবা মুখে বলে। বাস্তবে যায় নিজের জন্য। একান্ত নিজের কল্যাণের জন্য যায়৷ আর বাংলাদেশে সাইকোলজির আবির্ভাব তো খুবই রহস্যজনক কল্প কাহিনী দিয়ে সাজানো মোড়ক। অনেকে হুমায়ন আহমেদের গল্প পড়ে পড়ে কাউন্সেলিং সম্পর্কে জ্ঞান খুঁজে পাই ঠিক কল্প কাহিনী থেকে সঠিক জ্ঞান জানতে হলে পড়তে হবে আমাদের।

আসলে মানসিক সুস্থতার সংজ্ঞা জানতে পারলেই আমরা কাউন্সেলিং কি তা জানতে পারবো সহজে। আসো একটি তাত্ত্বিক জ্ঞান শুনি যদিও ভালো লাগে না।

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক তেমন গুরুত্ব যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা। কখনো কখনো শারীরিক সুস্থতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য। কেন? কারণ মন খারাপ এতো ভয়ানক এক একটি অনুভূতি যা আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনে৷ আগে পড়াশুনা করতে ভালো লাগতো এখন আর কোন কাজই করতে ভালো লাগে না। কখন কান্না পায়। কখন কখন দুনিয়া থেকে সারা জীবনের জন্য চলে যেতে ইচ্ছে করে। সামাজিক পরিপক্কতা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবী কিছুই ভালো লাগে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতে মানসিক স্বাস্থ্য হ’ল:..সুস্থতার এমন একটি রাষ্ট্র। যেখানে ব্যক্তি নিজেই তার জীবনের রাষ্ট্র প্রধান। তার নিজস্ব দক্ষতা, উপলব্ধি করতে পারে। জীবনের স্বাভাবিক চাপ বা পরীক্ষার সাথে লড়াই করে সমাধান করতে পারে। দৈনন্দিন পড়াশুনা, ঘরের, অফিসের এবং ফলপ্রসূভাবে কাজ শেষ করতে পারে এবং তার সম্প্রদায়ের জন্য অবদানও রাখতে সক্ষম হয়।” মানসিক স্বাস্থ্য কেবলমাত্র মানসিক ব্যাধি না থাকা তা কিন্তু নয় আমাদের হাসিখুশি স্বাভাবিক জীবন দীর্ঘ দিন ধরে চলতে না পারলেই আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হতেই পারি। জ্বর হলে যেমন লজ্জার কিছু নেই৷ মন খারাপ হয়ে তা একা একা সামলাতে না পারলে তা প্রকাশ করতে লজ্জার কিছু নাই বরং জহির স্যার বলেন, ‘যারা প্রচুর কথা বলে, মনে কষ্ট ধরে রাখে না তাদের মানসিক কষ্ট কমে যায় দ্রুত।’

আর সকল ধরনের অ্যাবিউজ বন্ধ করার একমাত্র মহা ঔষধ হলো, ” বলে দেওয়া ” লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ করা। এমনই এক স্মৃতির পিছু ধাওয়া করছিলো গত বিশ বছর আগের একটা সন্ধ্যার কথা। আমার স্মৃতির শেলফগুলোতে থরে থরে সাজানো অজস্র ভালো স্মৃতি আছে। তবে অ্যাবিউজ হবার ঘটনা আছে। এটা ভেবে কষ্ট পেয়ে আটকে যাবার কোন কারণ নেই আমি দাড়াতে পারবো না৷ ইনশা আল্লাহ কাউন্সেলিং আপনাকে সাহায্য করবে বের হয়ে আসতে।

নিজের নেইঃ

অনেক সময় নিজের কাছে কোন উপায় থাকে না কিভাবে এই কষ্ট থেকে বের হয়ে আসবো তখন অন্যের জ্ঞানের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়। অন্যের আলো নিয়ে নিজেকে উদ্ভাসিত করতে লজ্জার কিছু নেই। কাউন্সেলিং এর সেশনগুলো একেকটার একেক স্বাদ, একেক গন্ধ, একেক মর্ম – ভালো লাগায় ভরপুর অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে আপনি হয়ত আপনাকে চেনেন বলে জানেন? আসলে নিজেকে নতুন করে চিনতে এবং নিজের ভিতর থাকা, অদম্য ক্ষমতা দেখে আপনি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন। তখন নিজের নেই মনে করে মন খারাপ হবে না।

Facebook Comments