স্বাস্থ্যসেবার নৈতিকতা
ফারাহ দিবা
স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত যে কোন কর্মীদের জন্য নৈতিকতার বিষয়গুলো অনেক ছোটখাট কাজের ভেতর দিয়ে অনেকে আমরা না জেনে বা না বুঝে ভংগ করে ফেলি। এটা অনেকটা স্বামী-স্ত্রী-র সর্ম্পকের মত নিয়ে থাকি। যেমন, আমরা বিয়ে করি, জানি যে বেশ কিছু র্শত মেনে চলার প্রতিজ্ঞা করে ঐ সর্ম্পকটি আমরা স্থাপন করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা ভাল করে সেগুলো জানার চেষ্টা করি না। সই করি র্শতগুলোতে কি আছে না জেনে। তবে অবশ্য্ই কেউ কেউ আছেন যারা পড়েন এবং সেগুলো মেনে চলেন। আমি শ্রদ্ধার সাথে তাদের কথা মনে করি। কিন্তু আমরা বেশীরভাগ্ই পড়ি না বা বিয়ের মুহূর্তের আনন্দানুভূতিতে, সময়ের অভাবে, “পরে সময় করে পড়বো”, “আরে এগুলোতো গতবাঁধা কথা, এ আবার পড়ার কি আছে?” ইত্যাদি ভাবনায় পড়া হয় না। কিন্তু তারপর আর ফিরে দেখা হয় না বা পড়াও হয় না, কি শর্ত আমি মেনে নিয়েছিলাম বা কি পালন করবো বলে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। মনেও থাকে না যে এই ভুলে যাওয়া আর না মেনে চলা “প্রতিজ্ঞাভঙ্গের” সামিল। ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত যে কোন কর্মীর সাথে সেবাগ্রহীতার “সর্ম্পকের” মধ্যকার র্শতগুলো না মেনে চলা হচ্ছে “স্বাস্থ্যপেশাজীবির নৈতিকতার প্রতিজ্ঞাভঙ্গের” সামিল। যেমন, অনেক সময় আমরা খুব সহজভাবে ধরে নিই যে কোন রোগীর সাথে কাজে যে সফলতা হয়েছে তা রোগীর নাম, ধাম অপ্রকাশিত রেখে প্রকাশ করলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু অসুবিধা আছে, যদি না আমরা কিছু নৈতিকতার কিছু বিষয় পালন বা মেনে না নিয়ে এহেন কাজগুলো করি। নৈতিকতার র্শত হিসেবে রোগীর কাছ থেকে বেশ কিছু বিষয়ে অনুমতি নেবার কথা, যেমন, প্রথমত: যে তার নাম-পরিচয় গোপন করে তার সমস্যা ও সমাধানের বিষয়গুলো কি তা তুলে ধরতে পারি কিনা? দ্বিতীয়ত: আমি কোথায় তার কথা তুলে ধরতে চা্ই , আমার পেশার সহকর্মীদের কাছে, অন্যান্য সহসম্পর্কিত পেশার সহকর্মীদের সাথে, বৈজ্ঞানিক বা দৈনিক পত্র-পত্রিকায় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে্ । তৃতীয়ত: আমার এ তথ্য সহভাগের উদ্দেশ্য কি? যেমন, এক্ই পেশার সহকর্মীদের সাথে সমস্যাটি বিশেষ ধরনের তাই তাদের সাথে নিজের অভিজ্ঞতা সহভাগ করলে অন্যান্য সম্ভাব্য সমধরনের সেবাগ্রহীতার উপকারে আসতে পারে; বা অন্যান্য সহসম্পর্কিত পেশার সহকর্মীদের সাথে সহভাগ করা কারণ, কিভাবে একটি বিশেষ সমস্যা বিবিধ ধরনের স্বাস্থ্যসেবার সমন্বয়ে সমাধান সম্ভব অথবা সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বা নিজের প্রচার বা প্রসারের মাধ্যমে আরও সেবাগ্রহীতার দৃষ্টি আর্কষণ। এগুলোর যে কোনটির প্রতি সেবাগ্রহীতার অনুমতি ব্যতিরেকে আমরা কোন সেবাগ্রহীতার নাম-ধাম প্রকাশ না করলেও আসলে কোন কথা প্রকাশ করতে পারি না। আর ছবি (স্থির চিত্র/চলচিত্র) ব্যবহার করে তো কোন ভাবেই নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, স্বাস্থ্যপেশাজীবির জীবনে নৈতিকতার বিষয়টি খুব নাজুক। তাই আমাদের উচিৎ নিজের পেশার নৈতিকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়া এবং তা মেনে চলা। কার্যক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ভেবে দেখা কোন “অসংগতিপূর্ণ অবস্থান” (conflict of interest) তৈরী হচ্ছে কিনা। হলে তা কি করলে প্রতিহত করা যাবে। অর্থাৎ পেশাদার হিসেবে করা প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতিগুলো মাঝে মাঝে পর্যালোচনা করে দেখা যাতে বুঝতে পারি পেশার সীমার ভিতর আছি কিনা এবং যা করার নয় তা করে ফেলছি কিনা। কারন স্বাস্থ্যসেবার প্রথম ও প্রধান শর্ত্ হলো সেবাগ্রহীতার প্রতি করা অঙ্গীকার মেনে চলা।