এই মুহূর্তে কেউ নেই
ইশরাত জাহান রুবাইয়া
সাড়ে ৪ বছরের দীপ্তর শখ হয়েছে সুপারম্যান হবে। সুপারম্যান তার হিরো। কী সুন্দর করে সে উড়ে চলতে পারে, কার্টুনে দেখেছে দীপ্ত। সেও ওরকম করে উড়বে। ড্রয়ার থেকে মায়ের একটা বড় ওড়না বের করলো। ওড়নাটা দুইভাঁজ করে একপ্রান্ত পিঠের উপর দিয়ে গলার কাছে এনে বাঁধলো। পা টিপে টিপে মায়ের রুমে এসে দেখলো মা ঘুমাচ্ছে। এইতো সুযোগ একা একা ছাদে যাওয়ার। ছাদে গিয়েই সুপারম্যানের মত উড়াল দেবে সে।
শম্পার চোখদুটো তখন লেগে এসেছে কেবল। এমন সময় দরজা খোলার অাওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে। বাসায়তো মা ছেলে ছাড়া এই মুহূর্তে কেউ নেই। দরজাটা খুললো কে তবে! দীপ্ত বাইরে যাচ্ছেনাতো একা একা! দৌড়ে এসে দেখে দীপ্ত সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। সেও ছেলের পিছু নিল। শম্পা পৌঁছতে পৌঁছতে দীপ্ত ছাদের রেলিং এ উঠে দাঁড়িয়েছে। দুইহাত দুইপাশে ছড়িয়ে যেইনা একপা বাঁড়িয়েছে ওমনি দৌড়ে এসে ছেলেকে শক্ত করে ধরে ফেললো শম্পা। দীপ্তর সে কী কান্না! অনেক অনুরোধ করলো অন্তত একটা বার ওকে উড়তে দিতে। শম্পা কোনোভাবেই রাজী না। পাঁজাকোলা করে তাকে তুলে নিয়ে ঘরে ছুটলো সে। হাত পা ছুঁড়ে কান্না করতে করতে দীপ্ত বললো তুমি অামার পছন্দের কিচ্ছু করতে দাওনা! সুপারম্যান হতে দাওনা! তুমি অনেক অনেক পঁচা মা, তুমি ভালোনা!
.
.
দীপ্তকে ছাদ থেকে লাফ দিতে দেয়নি বলে শম্পা কি অাসলেই পঁচা মা হয়ে গেছে? একবাক্যে সবাই বলবে, কখনোই না! দীপ্ত জানেনা ১১তলা থেকে লাফ দিলে কী ঘটবে! কিন্তু শম্পা জানে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে তার কলিজার টুকরা বাচ্চাটা। দীপ্ত মনে করে সে লাফ দিলে সুপারম্যানের মত উড়ে যাবে। কিন্তু শম্পা জানে বাস্তবে কী ঘটবে। বাচ্চা যতই অনুনয় বিনয় করুক, যতই জেদ করুক, যতই তাকে পঁচা মা বলুক; সে দীপ্তকে এই শখ পূর্ণ করতে দেবেনা। কেন ই বা জেনে শুনে সন্তানকে অাগুনে ঝাঁপ দিতে দেবে সে?
.
অাসুন, এবার অন্য কিছু ভাবি।
অনেকসময় অামরা অাল্লাহর কাছে অনেক কিছু চাই। কোনটা তিনি দেন, কোনটা দেননা। হ্যাঁ কখনো এমন কিছু তিনি দেননা যেটা অামরা অনেক বেশি পছন্দ করি। তখন হতাশ হয়ে অামাদের অনেকই অাল্লাহর উপর অভিমান করে বসেন। এত চাইলাম, দিলেননা অাল্লাহ! কেন, কী হত দিলে? তাঁর ভান্ডারে তো কিছুর অভাব নেই! তাঁর পক্ষেতো অসম্ভব বলে কিছু নেই! তবুও কেন দিলেননা! কেন???
শত অভিযোগ অার অাক্ষেপে অভিমানে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেই।
.
দৃষ্টি সীমাবদ্ধ অামাদের। ভবিষ্যত অামাদের অজানা। অামরা জানিনা জীবনপথে অামাদের সামনে কী অাছে। তিনি জানেন। সঅঅব জানেন। জেনেশুনে তিনি অামাদের সেসব অাব্দারগুলো পূর্ণ করেননা, যেগুলো পূর্ণ হলে অামরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। দীপ্তর মত অামাদের অভিমান হয়। অাক্ষেপ করি, অভিযোগ করি।
মা জন্ম দিয়েছেন বলে এত ভালোবাসেন, এত মমতাময়ী, সন্তানের কল্যাণলামী। অার যিনি সৃষ্টি করেছেন এত যত্নে তিনি কতটা কল্যাণকামী হতে পারেন? তিনি কতটা ভালোবাসেন বান্দাহকে? বান্দাহর ভালো-মন্দ, কল্যান-অকল্যান তাঁর মত ভালো অার কে বোঝে! কী করে তিনি সেই অাব্দারগুলো পূর্ণ করবেন যেগুলো বান্দাহর জন্য অকল্যানকর! যেগুলো পূর্ণ করলে বান্দা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে! তাই তিনি সেই অাবদারগুলো পূর্ণ করেননা, কিন্তু খালি হাতেও ফিরিয়ে দেননা। কখনো সেসব বদলে দেন উত্তম কল্যানকর অন্যকিছুর দ্বারা। কখনো সেইসবের বদলে জমা করে রাখেন কিছু অভাবনীয় পুরষ্কার! এক অবশ্যম্ভাবী দিনে বান্দাহ তা প্রত্যক্ষ করে অাপ্লুত হবে। সিজদায় পড়ে যাবে। নতমস্তকে অান্তরিক স্বীকারোক্তি দেবে, অামার রব! নিঃসন্দেহে অাপনি মহীয়ান!
.
“তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দ সই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে তা অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। [সুরা বাকারা: ২১৬