banner

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 606 বার পঠিত

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ৬

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৬


আফরোজা হাসান


রান্নার সব আয়োজন ঠিক আছে কিনা শেষ বারের মত দেখে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন সাবিহা। মনের মাধুরী মিশিয়ে আজ সবকিছু রান্না করেছেন তিনি। যা রান্না করেছেন তার বেশির ভাগ জিনিসই হয়তো খাবে না কিন্তু পছন্দের প্রতিটা মেন্যু মেয়ে জামাইদের সামনে রাখতে চান তিনি। হোক না ঘরের ছেলে তাতে কি? মেয়ের জামাই মানেই ভীষণ স্পেশাল কিছু! হঠাৎ বুকের ভেতরটা কেমন যেন শূন্যতায় ছেয়ে গেলো! সাথে ছলছল করে উঠলো সাবিহার চোখ! মনেহয় এই তো সেদিন মেয়েরা এলো তাদের জীবনে অথচ দেখতে দেখতে আঠারোটা বছর পেড়িয়ে গেছে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তারও প্রায় তিন মাস হয়ে গিয়েছে। এইচ.এস.সি’র ফাইনাল এগজামের শেষ হবার পর শ্বশুরবাড়ি যাবার সময়ও এসে যাবে।

দুই মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে হজ্ব করতে যেতে নারাজ ছিলেন ফাইয়াজ সাহেব। বিয়ে যেহেতু ঠিক করাই ছিলো তাই বেশ তড়িঘড়ি করেই আকদ অনুষ্ঠানটি সেরে ফেলেছিলেন সবাই মিলে। এরফলে সংসার শুরুর আগে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেয়ার পথটাও সহজ হয়ে গিয়েছে ছেলেমেয়েদের জন্য। মেয়ে দুটা এখনো ছোট্ট বাচ্চাদের মতোই পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রাখে হাসি-মজা আর দুষ্টুমি দিয়ে। কেমন করে থাকবেন মেয়ে দুটিকে ছাড়া তিনি? না চাইতেও ঝরঝর অশ্রু নেমে এলো সাবিহার চোখ বেয়ে। রান্নাঘরের দরজায় নক হলে চোখ মুছে ঘুরে তাকিয়ে ফাইয়াজ সাহেবকে দেখে সাবিহা বললেন, তোমাকে চা দেয়নি শাবাব?

হ্যা দিয়েছে। আমি তোমার খবর নিতে এলাম। সেই সকালে ঢুকেছো রান্নাঘরে। শরীর খারাপ করবে তো শেষে।

মাহাম, শাবাব ওরা কোথায়?

শাবাব আরিফীর সাথে বাগানে বসে গল্প করছে দেখে এসেছি। মাহামের মাথাব্যথা কমেনি এখনো শুয়ে আছে। তোমার মন খারাপ মনেহচ্ছে কেন? চুপ দেখে স্ত্রীর কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন, কি হয়েছে সাবিহা? মেয়েদের কথা ভেবে মন খারাপ?

কাঁধ থেকে স্বামীর হাত সরিয়ে দিতে সাবিহা বললেন, আমরা এখানে আসছি এই খবর দিতে কেন গিয়েছো তুমি তোমার আদরের মেয়ে জামাইদেরকে? শান্তিতে একটু সময় কাটাবো মেয়েদের সাথে তা না দুইজনই এসে হাজির।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, আমাদের তো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত এজন্য। এমন জামাই’ই তো চেয়েছিলাম আমরা আমাদের দুই রাজকন্যার জন্য তাই না? যারা ওদেরকে আমাদের মত করে ভালোবাসবে, ওদের খেয়াল রাখবে। দেখো শত ব্যস্ততার মধ্যেও আয়ান আর আরিফী সপ্তাহ খানেক সময় বের করে নিউজিল্যান্ড থেকে এখানে চলে এসেছে।

হয়েছে তোমাকে আর জামাইদের সাফাই গাইতে হবে না। আয়ান ফোন করেছিল? কখন এসে পৌঁছাবে কিছু জানিয়েছে?

হ্যা, ফোন করেছিল কিছুক্ষণ আগে আয়ান। বলেছে রাতের আগে আসতে পারবে না।

সাথে সাথে মুখটা আঁধারে ঢেকে গেলো সাবিহার। খাসীর গোশতের কোর্মা, আনারস ইলিশ, তেলাপিয়া মাছ ভাজা, চিংড়ির মালাইকারি, ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে আলু ভাঁজি, পোনা মাছের চচ্চড়ি এত কিছু তাহলে কার জন্য রান্না করলেন তিনি? আরিফী সবকিছুই অনেক মজা করে খায়, তাই যত চিন্তা আয়ানকে নিয়েই ছিল। দৈ পছন্দ করে সেজন্য সেটাও বসিয়েছেন তিনি আয়ানের জন্য।

স্ত্রীর চেহারার দিকে তাকিয়ে ঝড়ের আভাস পেয়ে আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি সরে পড়লেন ফাইয়াজ সাহেব। এত মজার মজার খাবার তৈরি হয়েছে সেসব ফেলে ঝাড়ি খাওয়ার কোন মানেই হয় না। তারচেয়ে নাতিকে নিয়ে বাগানে কিছুক্ষণ পায়চারী করে ক্ষুধাটা আরেকটু বাড়িয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে সেই উদ্দেশ্য রওনা করলেন তিনি।

শাবাবকে রান্নাঘরের দিকে যেতে দেখে ফাইয়াজ সাহেব একবার ভাবলেন ডেকে সাবধান করে দেবেন। পর মুহুর্তেই মনে পড়লো যে কোন একজনের সাথে কিছুক্ষণ হৈচৈ করলেই সাবিহার রাগ পড়ে যাবে। দুষ্টুমি করে মেয়ে মার হাতে বকা খাবে এরমধ্যে বাবার ইন্টারফেয়ার না করাই সমীচিন। ভেতর থেকে কে যেন বলল, জেনে শুনে মেয়েকে বিপদের মুখে পাঠাচ্ছো শুধুমাত্র নিজে নিরাপদ থাকার জন্য? ধিক্কার তোমাকে! সবসময় ভেতরের আওয়াজকে পাত্তা দেয়া ঠিক না! জাহিদ সাহেবও দিলেন না! নাতিকে নিয়ে বাগানে রওনা করলেন।

রান্নাঘরে ঢুকেই উমমম…ইয়াম্মি…সারা বাড়ি তো মৌ মৌ করছে ঘ্রাণে! বলতে বলতে খাবারের প্লেট টেনে নিলো শাবাব। সাবিহা বললেন, কি করছিস তুই?

সবকিছু ঠিকআছে কিনা একটু একটু করে চেখে দেখি মামণি।

সামনে থেকে যা তো শাবাব। তোকে দেখলে আমার ভালো মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় আর এখন মেজাজ এমনিতেই খুব খারাপ।

মামণি চল আজ একটা এক্সপেরিমেন্ট হয়ে যাক!

কিসের এক্সপেরিমেন্ট?

আমার কারণে তোমার ভালো মেজাজ খারাপ হয় এটা তো প্রাচীন কথা। দেখা যাক খারাপ মেজাজ ভালো হয় কিনা!
সবসময় এত ফান করিস নাতো শাবাব। যথেষ্ট বড় হয়েছিস তুই, বিয়ে হয়েছে এখন আর এসব মানায় না, বুঝেছিস!
কেন মানায় না মামণি? প্রশ্ন শুনে সাবিহা তাকিয়ে দেখলো মাহাম এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। মা আর বোনের কাছে এসে দাঁড়িয়ে মাহাম বলল, বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে কি জীবনের সব আনন্দ-উচ্ছ্বাস- হাসি-দুষ্টুমির অবসান মামণি?

ধীর গলায় সাবিহা বললেন, এই কথা আমি কখন বললাম?

চলবে…

Facebook Comments