সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-২
আফরোজা হাসান
ছোটবেলা থেকেই নিজ হাতে মাটির তৈজসপত্র বানানোর শখ সাবিহার। বিয়ের পর তার স্বামী এই শখের কথা জানতে পেরে কোর্স টোর্স করিয়ে একদম মহিলা কুমোর বানিয়ে ফেলেছেন তাকে। সংসার শত কাজের ভিড়ে সামান্য যতটুকু সময় পান নিজ হাতে মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানান সাবিহা। গতকাল একটা ফুলদানী বানিয়েছিলেন। যত্ন করে তাতে রং করতে বসেছেন এখন। ফাইয়াজ সাহেব পাশে এসে বসলে একবার তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে নিজের কাজে মন দিলেন আবার সাবিহা।
কিছুক্ষণ স্ত্রীর কাজ দেখে ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, তোমার দুই কন্যা আজ চাকরীর খোঁজে আমার অফিস গিয়েছিলো।
উফফ, আর বলো নাতো তোমার মেয়েদের উদ্ভট কর্মকান্ড।
কি নিয়ে আবার লেগেছে আজ তোমাদের? হাসতে হাসতে জানতে চাইলেন ফাইয়াজ সাহেব।
মানুষের ঘরে দেখি কত সোনার টুকরা একেকটা মেয়ে। আর আল্লাহ আমাকে এই দুইটা কি দিয়েছেন বলো তো! কোন একটা কথা যদি কানে তুলতো এই দুই মেয়ে। যখন যা মন চায় তাই করে। অভিমানী কণ্ঠে বললেন সাবিহা।
স্ত্রীকে কাছে টেনে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলেন ফাইয়াজ সাহেব কিন্তু মেয়েদের চিৎকার শুনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলেন বড় মেয়ে শাবাব ছুটতে ছুটতে এদিকেই আসছে আর তাকে পেছন থেকে ধাওয়া করছে ছোট মেয়ে মাহাম।
শাবাব আস্তে এখানে রং, ফুলদানী সব ছড়ানো পড়ে ব্যথা পাবি! কিন্তু মায়ের সতর্কবাণী কানে পৌছার আগেই হুড়মুড় করে সবকিছু নিয়ে পড়লো শাবাব। মেয়েকে ধরে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, ব্যথা পাসনি তো মা?
না বাবা আমি ঠিক আছি। কিন্তু মামণির ফুলদানী তো ভেঙে গেছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে নাক মুখ কুঁচকে সরি বললো শাবাব।
সাবিহা বললেন, হয়েছে আর সরি বলতে হবে না। এটা মোটেই নতুন কিছু না। পরশু দিনও দুইটা টব ভেঙেছিস তুই। আর গত সপ্তাহে এত কষ্ট করে একটা ঝাড়বাতি বানালাম আমি সেটাও তুই নষ্ট করেছিস।
শাবাব বলল, ওহো মামণি! ফুলদানী ভাঙা ক্রাইমের কথা হচ্ছে সেটার কথা বলো শুধু। পুরনো ফাইল খুলো নাতো এখন।
দেখেছো? দেখেছো তোমার মেয়ের কথার স্টাইল? ফাজিলের চূড়ান্ত হয়েছে এই মেয়ে।
মেয়েকে কাছে টেনে ফাইয়াজ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, শাবাব খুব বেশি দুষ্টু কথা বলিস তুই মা। কেন ছুটছিলি এভাবে?
মাহাম বলল, দেখো না বাবা শাবাব আমার ডায়েরী নিয়ে এসেছে।
ফাইয়াজ সাহেব তাকালে শাবাব মাহামের হাতে ডায়েরী ফেরত দিয়ে বলল, নে ফেসকুন্নি তোর ডায়েরী। বোনকে ভেংচি কেটে মায়ের দিকে চোখ পড়তেই চিৎকার করে উঠলো মাহাম, মামণি তোমার পায়ে কি হয়েছে?
সাবিহা বললেন, কিচ্ছু হয়নি। রঙ লেগেছে। আর হলেই বা কি? তোদের কি কিছু এসে যায় নাকি তাতে?
মায়ের কাছে বসে হাত দিয়ে রঙ পরিস্কার করতে করতে মাহাম বলল, কি যে বলো না তুমি মামণি! তোমার পা আমাদের কাছে কত স্পেশাল সে কথা যদি জানতে কখনোই এমন কথা বলতে না।
আমার পা স্পেশাল? মামণির প্রশ্ন শুনে পুতুলের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো মাহাম। সাবিহা বললেন, সেটা কেন শুনি?
শাবাব বলল, কারণ তোমার পদতলে মোদের জান্নাত হে মাতা। মেয়ের জবাব শুনে স্বশব্দে হেসে ফেললেন ফাইয়াজ সাহেব।
মাহাম বলল, বাবা হাসি বন্ধ। এসে তোমার ডিউটি পালন করো।
ফাইয়াজ সাহেব বললেন, আমার আবার কিসের ডিউটি?
কামঅন বাবা এটাও আমাদেরকে বলে দিতে হবে? যে পায়ের নিচে তোমার কন্যাদের জান্নাত সেই পায়ের সেবাযত্ন করা তো তোমার ডিউটি নাকি? তুমি তোমার ডিউটি পালন করো আমরা দুজন যাই। চলো শাবাব।
মেয়েরা চলে যাবার পর ফাইয়াজ সাহেব স্ত্রীর কাছে বসতে গেলে সাবিহা বললেন, খবরদার বলছি! দূরে থাকো তুমিও তোমার মেয়েদের মত আমার কাছে থেকে। বলে তো উঠে ভেতরে রওনা করলেন। ফাইয়াজ সাহেবও হাসতে হাসতে স্ত্রীর পিছু নিলেন।
সিঁড়ির গোঁড়ায় এসে পাশে লাগানো আয়নার সামনে থমকে দাঁড়ালো শাবাব, হাত দিয়ে টেনে ধরলো বোনকেও। মাহাম বলল, আবারো? আচ্ছা রোজ রোজ একই কাজ করতে বিরক্ত লাগে না তোমার?
বাতাসে হাত নেড়ে বোনের কথাকে উড়িয়ে দিয়ে শাবাব আয়নার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, হে আয়না বলো তো এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে কে? গলা সামান্য ভারী করে নিজেই জবাব দিলো, শাবাব শাবাব শাবাব।
হেসে ফেললো মাহাম। বোনকে টেনে ধরে উপড়ে উঠতে উঠতে বলল, পাগল তুমি বুঝলে। কি যে হবে তোমার আল্লাহ জানেন। শাবাবও হেসে গলা জড়িয়ে ধরলো বোনের।
চলবে