banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 305 বার পঠিত

 

আপন আলাপ

আপন আলাপ


রাহনুমা সিদ্দিকা


টি এস সি-র পাশে ছাউনিতে বসে আছি, বাসের অপেক্ষায়। পাশে দুটি মেয়ের কথোপকথন কানে এলো। কথাবার্তায় বোঝা গেলো এরা একই কলেজে পড়েছে, ভর্তিসংক্রান্ত কাজে এসেছে, দুজনেই বিজনেস ফ্যাকাল্টির, নিউ ফার্স্ট ইয়ারের।
এক পর্যায়ে একজন বলছে,
-তোমাকে না আমি চিনতেই পারি নি! আগে না হিজাব পরতে?
-হ্যাঁ
-ছাড়লে কেনো?
-আরে! ‘ও’ একদম পছন্দ করে না!
তারপর বাস চলে এসেছিলো। ব্যাপারটা ভাবালো! ‘ও’ পছন্দ করে না- তাই মেয়েটা হিজাব ছাড়লো? এমনও মেয়ে আছে -‘ও’ ধার্মিক হলে আপনাকে আবার ‘রিলেশন’ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কিংবা ভালোবাসার দাবীতেই হোক না কেন হিজাব পরতে হচ্ছে! প্রহসন আর কাহাকে বলে!!!!
প্রসঙ্গক্রমে, পারস্যের মহিলাদের তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে বেগম রোকেয়ার কথাটি স্মরণ করুন ,
“ওই যে পর্দা ছাড়িয়াছেন তাহা দ্বারা তাহাদের স্বকীয় বুদ্ধিবিবেচনার ত কোন পরিচয় পাওয়া যায় না! পার্সি পুরুষগণ কেবল অন্ধভাবে বিলাতী সভ্যতার অনুকরণ করিতে যাইয়া স্ত্রীদিগকে পর্দার বাহিরে আনিয়াছেন। ইহাতে অবলাদের জীবনীশক্তির ত কিছু পরিচয় পাওয়া যায় না। তাহারা যে জড়পদার্থ ,সেই জড়পদার্থই আছেন। পুরুষ যখন তাহাদিগকে অন্তঃপুরে রাখিতেন, তাহারা সেখানেই থাকিতেন। আবার পুরুষ যখন তাহাদিগকে ‘নাকের দড়ী’ ধরিয়া টানিয়া মাঠে বাহির করিয়াছেন, তখনই তাহারা পর্দার বাহির হইয়াছেন।”
হিজাব এখানে একটা উদাহরণমাত্র। অমন উদাহরণ হাজারটা দেয়া যায়। আপুরা ভাবুন, আপনার বিশ্বাস, আপনার দর্শন, আপনার জীবনাচরণ নিয়ন্ত্রিত হবে আরেকজনের দ্বারা? আপনার বিশ্বাসের এত তারল্য? তবে যে আপনি কলার উঁচিয়ে ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’ নামে একটি সফিস্টিকেটেড শব্দ উচ্চারণ করছেন আবার?
আপনি যদি একটি মেয়ে হন, আপনি খুব ভালো করেই জানেন মেয়েরা (সাধারণত ) কেন সাজে! খুব ভালো করেই জানেন পত্রিকার ফ্যাশন পাতায় মডেল কন্যাটির পোশাকে বিশেষ ধরণের ডিজাইনটি কেন করা হয়েছে।
কিছু প্রশ্ন সামনে আসে-
অতীতে যেসব মহীয়সীরা নারীমুক্তির জন্য নিজেদের সমস্ত জীবনভর সংগ্রাম করে গেছেন, যেসবঅন্তঃপুরবাসিনীরা একটুকরো জ্ঞানের আলোর জন্য নরক প্রতিকুলতার সাথে লড়াই করে গেছেন- কালক্রমে যাঁদের ত্যাগের সুফল আমরা ভোগ করছি- তাঁরা আজকে থাকলে কী বলতেন? এই স্বাধীনতাই কি তাঁরা চেয়েছিলেন? স্বাধীনতা কি বিপরীত লিঙ্গের মনোরঞ্জনের স্বাধীনতা? স্বাধীনতা কি চ্যানেল আইয়ের পর্দা কাঁপানো সুন্দরীদের মেলা? সেলফিম্যানিয়ার কথা নাহয় না-ই বললাম!
আজ ত নারীরা নিজ যোগ্যতায় সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে, আজ শিক্ষাঙ্গনে নারী-পুরুষ অনুপাত সমান। কর্মক্ষেত্রে লৈঙ্গিক বৈষম্য প্রায় নেই বললেই চলে। আলোকপ্রাপ্ত এই সমাজের পরিপূর্ণ চিত্র কেবল এটুকই নয়, সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তিই তা জানেন।
ভাবুন তো,
আদৌ কি নারীরা স্বাধীন হয়েছেন নাকি এক ছদ্ম (Pseudo) স্বাধীনতার নামে আরেক মানসিক দাসত্বে জড়াচ্ছেন? স্বাধীনতা তো চাকুরিতে, কাপড়ে সীমাবদ্ধ না- চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, যুক্তির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশ ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের স্বাধীনতাই স্বাধীনতা!
খানিক উড়ার সুযোগ পেয়ে নাটাইবাঁধা ঘুড়িরও নিজেকে মুক্ত পাখি ভেবে ভ্রম হতে পারে!

Facebook Comments