রবিউল ইসলাম আওলাদ: সাংবাদিক রাশেদা আমিন। বাবা মরহুম মো: হাবিবুল্লাহ। মাতা মরহুমা রাজিয়া বেগম। ছোট বেলা কেটেছে দুড়ন্তপনা আর দুষ্টমির মধ্য দিয়ে। এক পলকে ঘুরে এসেছে গ্রামের এই মাথা থেকে ওই মাথায়। মার্বেল থেকে শুরু করে ক্রিকেট সব ধরনের খেলায় পারদর্শি ছিলেন রাশেদা আমিন। বাবা-মার স্বপ্ন ছিল একজন আদর্শ এবং স্বাধীনচেতা হবেন তাদের আদরের সন্তান রাশেদা । পাঁচ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।এতো গেল ছোট বেলার কথা। রাশেদা আমিন ছাত্রজীবনের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
১৯৬৬ সালে কলেজ জীবনের শুরতেই জড়িয়ে পরেন ছাত্র রাজনীতিতে। তৎকালীন সময় চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। চট্টগ্রাম কলেজের ক্যাবিনেটের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন রাশেদা আমিন।
তিনি মহান স্বাধীনতার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা । রাজনৈতিক আদর্শ থেকেই মুক্তিযুদ্ধে যোগদান। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা মাধ্যমেই মুলত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন রাশেদা আমিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালে রাজনীতির মাঠের আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে ভাবে জড়িয়ে পড়েন। তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ১০-১৫ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে অস্ত্র ট্রেনিং করেন। এরপর যুদ্ধের সময় শরিয়তপুরের নিজ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। তাদের বাড়িতেই মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। তার পরিবারের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত ছিলেন। রাশেদা আমিন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর কার্যকরি পরিষদের সদস্য।
দেশের জন্য যুদ্ধ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। একজন নারী হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন রাশেদা আমিন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী বার্তা সম্পাদক।
শুধু ডেস্কে নয়। রিপোর্টার হিসেবেও কাজ করেছেন। এমনকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সংবাদকর্মী হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি জার্মানী ও ভারতে সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এছাড়ও তিনি কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়ন প্রশিক্ষণ করেছেন। পেশাগত কারনে ভারত,পাকিস্তান,ভুটান,জার্মানী,যুক্তরাজ্য,কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন। বর্তমানে রাশেদা আমিন সাউথ এশিয়ান ওমেন ইন মিডিয়ার বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এর প্রেসিডেন্ট। এছাড়া তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের কার্যকরী পরিষদের প্রথম নির্বাচিত মহিলা সদস্য ছিলেন। রাশেদা আমিন বাংলাদেশ মহিলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি।
রাশেদা আমিন মনে করেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে নারীর উন্নয়ন জড়িত। দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক মরহুম আমিনুল আহমেদ চৌধুরীর সহধর্মিনী রাশেদা আমিন। এক ছেলে এক মেয়ের জননী। তিনি বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। রাশেদা আমিনের ছেলেমেয়ে সবাই থাকেন দেশের বাইরে।
রাশেদা আমিন মনে করেন, ভৌগলিক স্বাধীনতার সাথে সাথে মানুষের মুক্তির প্রয়োজন। স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও পুরোপুরি মুক্তি পায়নি বাংলাদেশের মানুষ। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা মূলত পুরুষদের পেশা ছিল। তারপরও আমি এই পেশাকে বেছে নিয়েছিলাম দেশ গড়ার ব্রত নিয়ে।
অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরআই/এ/২৬ মার্চ, ২০১৪